শিলিগুড়ি তথা দার্জিলিঙের মন রাখার জন্য কখনও দার্জিলিং মেল ফের এনজেপি থেকে চলার কথা বলা হচ্ছে। কখনও বা বন্দেভারত শ্রেণির ট্রেন চালানোর আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে। বিজেপি সূত্রে এনজেপি থেকে কলকাতার দিকে নতুন ট্রেনের প্রস্তাবের কথাও শোনা যাচ্ছে। কিন্তু রেলের অভিজ্ঞ বাস্তুকারদের দাবি, রেললাইনের গুণমান না বাড়িয়ে বন্দেভারতের মতো ট্রেন এই রুটে ‘রেস কোর্সে গরুরগাড়ির’ মতো হয়ে না দাঁড়ায়! কারণ, এনজেপি থেকে কলকাতার দিকে পাড়ি দেওয়া একাধিক ট্রেনের সর্বোচ্চ গতি কমিয়েই চালাতে হয়। লাইনের মান না বাড়ালে, বন্দেভারতেরও সে অবস্থা হতে পারে।
নয়াদিল্লি থেকে বারাণসী এবং বৈষ্ণোদেবী, সারা ভারতে মাত্র দু’টি জায়গা থেকেই এখন এই ট্রেন চালানো হয়। সে ট্রেন এনজেপি থেকে আদৌ চলতে পারবে কি না, তা নিয়ে প্রযুক্তিগত প্রশ্ন উঠেছে রেলকর্মীদের একটি বড় অংশ থেকেই। রেলের অবসরপ্রাপ্ত বাস্তুকার (সিভিল) প্রলয় দত্ত বলেন, ‘‘এই রুটে রেললাইনে সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার ছিল। তা বাড়িয়ে ১২০ কিলোমিটার করা হয়েছে। কিন্তু তার থেকেও বেশি গতির ট্রেন চালাতে গেলে, লাইনের গুণমান আরও বাড়াতে হবে।’’
প্রায় ১০ বছর পরে রেললাইন বদলানোর কাজ হয়েছে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের এলাকায়। এখনই যে আবার তা বদলানো হবে, এ রকম কোনও প্রস্তাব নেই বলে রেল সূত্রের দাবি। শিয়ালদহ থেকে খানা জংশন পর্যন্ত কেবল সর্বোচ্চ ১৩০ কিলোমিটার গতি ট্রেনগুলি তুলতে পারে বলে দাবি রেল সূত্রের। বাকি এলাকায় দার্জিলিং মেল, পদাতিক এক্সপ্রেস, এমনকি, শতাব্দী এক্সপ্রেসের মতো ট্রেনের গতিও অনেক কমিয়ে চালাতে হয়। তা হলে বন্দেভারত চালালে কী ভাবে কলকাতায় পৌঁছনোর সময় কমবে, তা স্পষ্ট হচ্ছে না অনেকের কাছেই।
বাস্তুকারদের দাবি, শুধু লাইনের গুণমানই নয়, কোচের গড়ন, লাইনে কতগুলি বাঁক রয়েছে, কী রকম সিগনাল রয়েছে— সে সবের উপরেও ট্রেনের গতি নির্ভর করে। দেখা গিয়েছে, এ রকম হাই-স্পিড ট্রেন চালাতে আলাদা ‘করিডর’ তৈরি করতে হয়। সে রকম কোনও প্রস্তাব এনজেপি-কলকাতা রুটে এখন নেই বলেই সূত্রের দাবি। যদিও শিলিগুড়ি বিজেপির জেলা সভাপতি আনন্দময় বর্মণ বলেন, ‘‘বন্দেভারত শ্রেণির ট্রেন চালানোরই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।’’
যদিও রেল সূত্রে দাবি, বন্দেভারত বা তেজস, কোনওটিই এনজেপি থেকে কলকাতার দিকে চালানো যায়নি লাইনের গতি বাড়েনি বলে। তৃণমূল জেলা সভানেত্রী পাপিয়া ঘোষ বলেন, ‘‘সোনার পাথরবাটির মতো কথা বিজেপির। রেসের ট্র্যাকে গরুগাড়ি কখনও চলে না। তা হলে, তেজস বা দুরন্ত আগে চালায়নি কেন ওরা?’’