ভোট মিটলেই শিলিগুড়ি কমিশনারেট থেকে ভক্তিনগর থানা এলাকার বিভিন্ন মামলার নথি জলপাইগুড়ি সদর মহকুমা শাসকের দফতরে পাঠানো হবে। জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন সূত্রে এমনই জানা গিয়েছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই এই প্রক্রিয়া সেরে ফেলা হবে। ইতিমধ্যেই ভক্তিনগর থানা এলাকার বেশ কিছু অভিযোগ শুনানির জন্য জলপাইগুড়িতে পাঠানো হচ্ছে বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর। গত ১৭ এপ্রিল রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের বিশেষ সচিব ভক্তিনগর এলাকার ‘এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটে’র বিচারযোগ্য মামলা ও অভিযোগগুলি জলপাইগুড়ি জেলায় পাঠানোর নির্দেশ জারি করে। তার পর থেকেই বিক্ষিপ্ত ভাবে বেশ কয়েকটি মামলা জলপাইগুড়ি মহকুমা শাসকের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তে ভক্তিনগর থানা এলাকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগ ফের বাড়ল বলে অভিযোগ করেছে বৃহত্তর শিলিগুড়ি নাগরিক মঞ্চ। অভিযোগ-দাবি থাকলেও, পুরভোটপর্ব মেটার পরে পূর্ণাঙ্গ ভাবে জলপাইগুড়ি সদর মহকুমা শাসকের দফতরে ভক্তিনগরের মামলা, অভিযোগের শুনানি শুরু করতে প্রশাসনিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
জলপাইগুড়ি জেলার সরকারি অভিশংসক গৌতম দাস বলেন, ‘‘সরকারি নির্দেশ পাওয়ার পরে পদক্ষেপ করা হয়েছে। ভক্তিনগর থানা এলাকার পুরোনো মামলার ফাইলও জলপাইগুড়িতে চলে আসবে।’’
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১২ সালে কমিশনারেট গঠনের পরে ভক্তিনগর থানা শিলিগুড়ি পুলিশের আওতায় আসে। তার পর থেকেই ভক্তিনগর থানা এলাকার বিচারবিভাগীয় ক্ষমতা নিয়ে শিলিগুড়ি এবং জলপাইগুড়ির মধ্যে টানাপড়েন চলছিল। সরকারি সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে জলপাইগুড়ি বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অভিনন্দন চৌধুরি। তাঁর কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী আমাদের আর্জি মেনে নিয়েছেন। এটা প্রথম ধাপ। আমরা আশা করছি, এরপরে ভক্তিনগর থানা ফের জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশের এক্তিয়ারে চলে আসবে।’’
প্রশাসন সূত্রের খবর, ভক্তিনগর থেকে প্রতিদিন গড়ে ২০ থেকে ২৫টি এমন অভিযোগ জমা পড়ে যেগুলি মহকুমা শাসকের দফতরে অথবা পুলিশ কমিশনারেটের বিচারযোগ্য। সিআরপিসির ২৩(২) ধারায় এই সংক্রান্ত মামলাগুলির উল্লেখ্য রয়েছে। যেমন এলাকায় শান্তি বিঘ্নিত করার অভিযোগ, চুক্তিভঙ্গ, সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ, জমিতে ১৪৪ ধারা জারি করা, জমির দখল নিয়ে অভিযোগ বা আর্জি। কোনও এলাকায় শান্তিভঙ্গের আশঙ্কা করে অথবা বিপদের আশঙ্কা, সামাজিক সম্পর্ক বিঘ্নিত হওয়ার মতো অভিযোগগুলিও মহকুমা শাসকের আদালতে বিচার হয়।
২০১২ সালে শিলিগুড়িতে কমিশনারেট গঠনের পরে ভক্তিনগর থানা জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশের এক্তিয়ার থেকে কমিশনারেটে সরে যায়। সে সময়ে এই মামলাগুলি শুনানি বা বিচারের ক্ষমতাও জলপাইগুড়ি থেকে সরে কমিশনারেটে চলে যায়। রাজ্য সরকারের নির্দেশে ভক্তিনগর থানা কমিশনারেটে থাকলেও, ‘এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটে’র ক্ষমতা কমল কমিশনারেটের।
জলপাইগুড়ি বার অ্যাসোসিয়েশন স্বাগত জানালেও, এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে শিলিগুড়িতে। বৃহত্তর শিলিগুড়ি নাগরিক মঞ্চের সম্পাদক রতন বণিক বলেন, ‘‘ছোটখাটো দৈনন্দিন সমস্যা, অভিযোগ নিয়েও ভক্তিনগরের বাসিন্দাদের যদি জলপাইগুড়ি সদরে যেতে হয়, তবে কমিশনারেটে যুক্ত হয়ে বাসিন্দাদের লাভ কি হল ? উল্টে দুর্ভোগ আরও বেড়ে গেল।’’
জলপাইগুড়ি প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারি নির্দেশ পাওয়ার পরে মহকুমা শাসকের আদালতে পেশকারের সংখ্যা বাড়ানো সহ অনান্য পরিকাঠামো তৈরির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। পরিকাঠামো তৈরির কাজ শেষ হলেই জলপাইগুড়ি মহকুমা শাসকের দফতরে পাকাপাকি ভাবে ভক্তিনগর থানা এলাকার মামলা, অভিযোগের শুনানি শুরু হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy