Advertisement
৩১ মার্চ ২০২৩

কমছে তিস্তা, ফুঁসছে ফুলহার

তোর্সা, মানসাই, কালজানি, তিস্তা, রায়ডাক ১ সহ জেলার সমস্ত নদীর জল কমছে। বিভিন্ন নদী থেকে বিপদ সঙ্কেতও তুলে নেওয়া হয়েছে। ত্রাণ শিবিরে ছেড়ে বাড়ি ফিরছেন মানুষ। বুধবার সকাল থেকে দিনভর আকাশ ছিল রোদ ঝলমলে।

জল নামছে। অস্থায়ী শিবিরে তাই খুশির হাওয়া। জলপাইগুড়িতে। ছবি: সন্দীপ পাল।

জল নামছে। অস্থায়ী শিবিরে তাই খুশির হাওয়া। জলপাইগুড়িতে। ছবি: সন্দীপ পাল।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৬ ০১:১১
Share: Save:

তোর্সা, মানসাই, কালজানি, তিস্তা, রায়ডাক ১ সহ জেলার সমস্ত নদীর জল কমছে। বিভিন্ন নদী থেকে বিপদ সঙ্কেতও তুলে নেওয়া হয়েছে। ত্রাণ শিবিরে ছেড়ে বাড়ি ফিরছেন মানুষ। বুধবার সকাল থেকে দিনভর আকাশ ছিল রোদ ঝলমলে। স্বস্তি ফিরেছে কোচবিহারের বাসিন্দাদের মধ্যে।

Advertisement

কিন্তু বিপদ একেবারে কাটেনি। ব্রহ্মপুত্র বিপদসীমার উপর দিয়ে বইতে থাকায় অসমের দক্ষিণ শালমারা ও মানকাচর জেলার প্রায় ২০০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। জলবন্দি ২ লক্ষ মানুষ। ধুবুরি শহরেও জল ঢুকেছে। পাশাপাশি, মহানন্দার জল বেড়ে বিপর্যস্ত উত্তর দিনাজপুরের কানকি, ডালখোলা সহ বিস্তীর্ণ এলাকা। ডালখোলা পুরসভা সূত্রে খবর, ডালখোলা পুরএলাকার প্রায় ১২টি ওয়ার্ডই জলমগ্ন। বন্যার জল দেখতে গিয়ে জলে ডুবে মৃত্যু হল এক শিশুর। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ডালখোলার গোয়ালগাঁও এলাকাতে ঘটনাটি ঘটেছে। মৃতের নাম মেহেরুন নেসা (৪)। তার বাড়ি ওই এলাকাতে। এদিন মায়ের সঙ্গে জল দেখতে গিয়েছিল সে, সেখানে মায়ের হাত থেকে জলে পড়ে যায়। ফুলহারও চরম বিপদসীমা পেরিয়েছে। তাতে মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর ও রতুয়ায় শতাধিক বাড়ি নদীগর্ভে তলিয়ে গিয়েছে। ভেঙে গিয়েছে এক হাজারেরও বেশি মাটির বাড়ি। পাশাপাশি দু’টি ব্লকে ৯ হাজার বাসিন্দা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।

এ দিন চাকুলিয়া এলাকা ঘুরে দেখেন ফরওয়ার্ড ব্লকের বিধায়ক আলি ইমরান রামজ। তাঁর অভিযোগ, এলাকার প্রশাসন পুরোপুরি ব্যর্থ। গোয়ালপোখর ২ এর বিডিও শ্রদ্ধা সুব্বা বলেন, ‘‘জল বেড়েছে প্রতিটি এলাকাতেই। এলাকার লোকেদের উদ্ধার করা হয়েছিল। কিন্তু রাতে লোকেরা গ্রামে চলে গিয়েছেন। ত্রাণ পাঠানো হয়েছে। তবে লোকেরা শিবিরে না এলে এত বড় এলাকাতে বাড়ি বাড়ি খাওয়ার পাঠানো সমস্যা।’’ এমনকি জলমগ্ন চাকুলিয়ার কানকি ফাঁড়িটিও।

মালদহে হরিশ্চন্দ্রপুরে প্রায় দু’হাজার বাসিন্দা ঘরবাড়ি ছেড়ে বাঁধের পাশে ও অন্যত্র নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছেন। বন্যা কবলিত এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা দেখা দেওয়ায় সেখানে পানীয় জলের পাউচ পাঠানোর বন্দোবস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া, গোবরাহাটে রিং বাঁধের সংস্কার চললেও ওই বাঁধ বাঁচানো যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে বলে প্রশাসন ও সেচ দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে। নদী চরম বিপদসীমা ছাড়াতেই এদিন সেচ দফতর ও প্রশাসনের কর্তাদের পাশাপাশি ওই এলাকায় যান হরিশ্চন্দ্রপুরের প্রাক্তন বিধায়ক তথা তৃণমূল নেতা তজমুল হোসেন। জেলা সেচ দফতরের মহানন্দা এমবেঙ্কমেন্টের নির্বাহী বাস্তুকার সুমিত বিশ্বাস বলেন, ‘‘বাঁধে কোথাও কোনও সমস্যা হলেই জরুরি ভিত্তিতে সংস্কারের কাজ করা হচ্ছে! আমরা পরিস্থিতির দিকে লক্ষ রাখছি।’’

Advertisement

কোচবিহারে কিন্তু স্বস্তির হাওয়া। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “সামগ্রিকভাবে বন্যা পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। আগামী ৪৮ ঘন্টা ভারী বৃষ্টিপাত না হলে পরিস্থিতি পুরো স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে আশাকরছি।” কোচবিহারের জেলাশাসক পি উল্গানাথন বলেন, “৫০টি ত্রাণ শিবির থেকে ইতিমধ্যে চার হাজারের বেশি বাসিন্দা ঘরে ফিরেছেন। নতুন করে সমস্যা না হলে বাকিরাও বৃহস্পতিবারের মধ্যে সবাই বাড়ি ফিরতে পারবেন বলে মনে করা হচ্ছে।”

কলকাতায় বামফ্রন্টের বৈঠকে বিমান বসু দাবি করেন, ‘‘বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ ত্রাণ দেওয়া হয়নি।’’ প্রশাসন সেই দাবি অস্বীকার করেছে।

তবে লাগাতার বৃষ্টি ও বন্যায় কৃষিজমিতে জল জমে যাওয়ায় ফালাকাটা ও ধূপগুড়ি ব্লকে সব্জি চাষীরা ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়েছেন। বিপুল ক্ষতি হয়েছে আমন ধানের জমিও। শুধু সব্জির চাষেই ক্ষতি হয়েছে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। আমন ধানের ক্ষতির হিসাব এখনও করা হয়নি। কারণ আমন ধানের চারা পাঁচ সাত দিন জলের নীচে থাকলেও ফের বেঁচে যেতে পারে বলে জানান কৃষি অধিকর্তারা। ধান, পাট, ভুট্টা ও সব্জির মধ্যে বেগুন, শসা, ঝিঙ্গে, করলা, পটল সহ সব সব্জি নষ্ট হতে শুরু করে। বিমানবাবুও এ দিন কলকাতায় চাষিদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি তুলেছেন। প্রশাসন জানিয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.