Advertisement
১৩ ডিসেম্বর ২০২৪

নোটের ধাক্কায় হারিয়ে গিয়েছে তাঁতের শব্দও

দিনরাত হস্তচালিত তাঁতের খটাখট শব্দ গত দেড় মাসে প্রায় উধাও হয়ে গিয়েছে তাঁতিপাড়ায়। নোট বাতিলের চোটে ধুঁকতে থাকা গুটি কয়েক তাঁতে মাকু হাতে শাড়ি বোনার সেই শব্দ আর শোনা যায় না। রাতে ঠিক মতো ঘুমতে পারেন না তন্তুবায়ীরা। গত দেড়মাসে প্রায় আড়াই কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে তাদের দাবি।

অনুপরতন মোহান্ত
গঙ্গারামপুর শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:২২
Share: Save:

দিনরাত হস্তচালিত তাঁতের খটাখট শব্দ গত দেড় মাসে প্রায় উধাও হয়ে গিয়েছে তাঁতিপাড়ায়। নোট বাতিলের চোটে ধুঁকতে থাকা গুটি কয়েক তাঁতে মাকু হাতে শাড়ি বোনার সেই শব্দ আর শোনা যায় না। রাতে ঠিক মতো ঘুমতে পারেন না তন্তুবায়ীরা। গত দেড়মাসে প্রায় আড়াই কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে তাদের দাবি।

দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরের ঐতিহ্যবাহী হস্তচালিত তাঁতশিল্প নোট বাতিলের ধাক্কায় প্রায় মরতে বসেছে বলে অভিযোগ। উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিই নয়। নদিয়ার শান্তিপুর, ফুলিয়ার মহাজনেরা এখান থেকে শাড়ি কেনেন। তাঁতশিল্পী রামগোপাল বসাক বলেন, নতুন টাকার অভাবে প্রথম দিকে বাতিল ৫০০ টাকার নোটে মহাজনের সঙ্গে লেনদেন চালাতে হয়েছিল। এখন শাড়ি তৈরির কাজে যুক্ত হস্তচালিত তাঁতশিল্পীরা মজুরির টাকা। সুতো ও রঙ সরবরাহকারীরা বাতিল নোট নিতে চাইছেন না। নতুন নগদ টাকার অভাবে মহাজনেরা শাড়ি কিনছেন না। এক ধাক্কায় তাঁত কারখানার মালিকদের মাসিক আয় তলানিতে ঠেকেছে।

গঙ্গারামপুর শহরের ভোদংপাড়া তন্তুবায় সমবায় সমিতি, বোরডাঙ্গি সমবায়, তন্তুবায় সমবায় এবং মহারাজপুর সমবায় সমিতি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এই সমস্ত সমবায়ের উপর নির্ভর করে প্রায় ৫০০ তাঁতশিল্পী এবং শ্রমিকের রুজিরুটি চলত। শাড়ি তৈরি পিছু তাদের মজুরি মিলত ৬০ থেকে ৮০ টাকা। এক জন তাঁতশিল্পী সপ্তাহে অন্তত ২০টি শাড়ি বুনে ফেলতেন। হস্তচালিত তাঁতশিল্পীরা এখন কর্মচ্যুত।

বন্ধ হয়ে পড়া এক সমবায় কেন্দ্রের তাঁত কর্মী দীনেশ দাস, সুবোধ বসাকেরা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে এই তাঁত সমবায়ের সঙ্গে তাঁরা যুক্ত ছিলেন। খরচ বাদ দিয়ে মাসে ৯-১০ হাজার টাকা রোজগার হতো। এখন সংসারের হাল ধরতে পেটের টানে অনেকেই পেশা বদলে কেউ দিন মজুর, কেউবা রিকশাচালক। ভিন রাজ্যে শ্রমিকের কাজে গিয়েও ফের নোট বাতিলের জেরে তাদের ফিরে আসতে হচ্ছে।

সমবায় এবং ব্যাক্তি মালিকানা মিলিয়ে গঙ্গারামপুর শহর ও তার আশপাশ এলাকায় ৮ হাজার হস্তচালিত তাঁতকলের মধ্যে বর্তমানে অধিকাংশ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। প্রবীণ তাঁতশিল্পী বৈদ্য বসাকের অভিযোগ, ‘‘সরকারি অবহেলার পাশাপাশি ক্রমান্বয়ে সুতো ও রঙের দাম বৃদ্ধি এবং সার্বিক তাঁতের শাড়ির মন্দা বাজারের সঙ্গে যুঝে কোনও মতে আমরা টিকে ছিলাম। কিন্তু নোট বাতিলের চোট আমাদের কোমর ভেঙে দিল।’’ বোরডাঙ্গি, ভোদংপাড়া, বসাকপাড়া, সাহাপাড়াগুলিতে ঘুরে শোনা গেল না সেই চিরপরিচিত তাঁত চালানোর খটাখট শব্দ। তাঁত শ্রমিকদের কর্মব্যস্ততার সেই ছবিও উধাও। পাড়ায় পাড়ায় হস্তচালিত তাঁত কারখানার ঝাঁপ বন্ধ।

অন্য বিষয়গুলি:

demonetisation weavers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy