জনসমাগম। বৃহস্পতিবার আলিপুরদুয়ারের সভায়। নিজস্ব চিত্র
পঞ্চায়েতে প্রার্থী বাছাইয়ে মানুষের মতামত নিতে ভোটের ব্যবস্থা করেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁর উপস্থিতিতে দু’দিন কোচবিহারে প্রায় ২৪ হাজার ভোট পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তার বাইরে অনেকেই মোবাইল নম্বরে ফোন করেও প্রার্থী বাছাইয়ে নিজের মতামত দিয়েছেন। এ সবের পরেও প্রার্থী বাছাই নিয়ে ‘ক্ষোভ’ রয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। কেউ কেউ প্রকাশ্যেই দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভপ্রকাশ করছেন। কেউ কেউ বলেছেন, ‘‘ভোটের নামে প্রহসন হয়েছে।’’ তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক বলেন, ‘‘দলের প্রার্থী বাছাইয়ে যে কেউ মতামত দিতে পারেন। আমাদের নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তা স্পষ্ট করেছেন। সেখানে এমন ভাবনার কোনও কারণ নেই, যে কেউ একাধিক ভোট দিয়ে নিজের খুঁটি শক্ত করবেন। কারণ, দল প্রত্যেকটি নামের সমীক্ষা করেই সিলমোহর দেবে।’’
নিচুস্তরের দলীয় নেতা-কর্মীরা অবশ্য নেতাদের বার্তার পরেও আশ্বস্ত হতে পারছেন না। দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের ব্যালট হাতে পেলেও অনেকে তা জমা দিতে পারেননি বলে অভিযোগ। তাঁদেরই এক জন তৃণমূলের নিশিগঞ্জ ১ অঞ্চল নির্বাচন কোর-কমিটির চেয়ারম্যান মোসলেম আলি মিয়াঁ। তিনি বলেন, ‘‘আমি ভোট দিতে পারিনি। ব্যালট কাড়াকাড়ি করে নিয়ে নেওয়া হয়। আমার মতো অনেকেই দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ে ভোট দিতে পারেননি।’’ কালচিনিতে ভোট দিতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দলীয় কর্মীদের একাংশ।
মাসকয়েক আগে তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত হন গীতালদহের আবুয়াল আজাদ। তাঁর নাম তৃণমূলের প্রার্থী বাছাইয়ের ভোটের ব্যালটে থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দলীয় সূত্রে খবর, প্রার্থী নির্বাচনের ওই ব্যালটে জেলা পরিষদের ২৫ নম্বর আসনের জন্য পাঁচ জনের নাম রয়েছে। ওই তালিকায় রয়েছে আবুয়ালের নাম। বহিষ্কৃত নেতার নাম প্রার্থী বাছাইয়ের ব্যালটে থাকার বিষয়টি জেলা নেতৃত্বকে জানানো হয়েছে। আবুয়ালের দাবি, ‘‘স্বার্থসিদ্ধির জন্য দলের একটি অংশ আমাকে বহিষ্কার করেছে। দলেরই একাংশ মনে করেছেন আমি যোগ্য। তাই আমার নাম এসেছে ব্যালটে।’’ সিতাইয়ের তৃণমূল বিধায়ক জগদীশচন্দ্র বর্মা বসুনিয়া বলেন, ‘‘দলের পরামর্শদাতা সংস্থা কী ভাবে, কার নাম দিয়েছে, তা জানা নেই।’’ জেলা তৃণমূল সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক এ নিয়ে কিছু বলতে চাননি। দলের কোচবিহার জেলা চেয়ারম্যান গিরীন্দ্রনাথ বর্মণ বলেন, ‘‘বহিষ্কৃত নেতার নাম ব্যালটে থাকার কথা নয়। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।’’
প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেন তৃণমূলের মেখলিগঞ্জ ব্লক সভানেত্রী তথা জেলা পরিষদ সদস্যা ফুলতি রায়ও। তিনি বলেন, ‘‘দলের পুরনো কর্মীদের বঞ্চিত করে বামফ্রন্ট থেকে আসা নতুনদের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এ ভাবে চললে, পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলের ভরাডুবি হবে।’’ একই দাবি কুচলিবাড়ির তৃণমূলের একটি বুথের সভাপতি তরুণীকান্ত রায়েরও।
নিশিগঞ্জ ২ অঞ্চলের তৃণমূলের নির্বাচন কমিটির আহ্বায়ক মহেশ অধিকারী দলের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘নিশিগঞ্জ ২ অঞ্চল কমিটির সভাপতি নিজের পকেটের লোক নিয়ে অনৈতিক ভাবে ভোট দিয়েছেন। তাই আমরা অনেকে ভোট বয়কট করেছি। ফের সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছি।’’ তৃণমূলের নিশিগঞ্জ ২ অঞ্চল কমিটির সভাপতি নীরেন রায় সরকার বলেন, ‘‘দলের কয়েক জন মিথ্যা অভিযোগ করে প্রচারে আসতে চেয়েছিলেন। সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। রাতে অঞ্চলের সবাই ভোট দিয়েছেন।’’ তৃণমূলের মাথাভাঙা ১ (এ) ব্লক সভাপতি মহেন্দ্র বর্মণের নাম ব্যালটে জেলা পরিষদের ৯ নম্বর আসনের পাশাপাশি পঞ্চায়েত সমিতির ৯ ও ১০ নম্বর আসনেও ছিল। দলের একাংশের অভিযোগ, তিনটি আসনে প্রার্থী হিসেবে ব্লক সভাপতির নাম প্রভাব খাটিয়ে রাখা হয়েছে। এ নিয়ে মহেন্দ্রনাথ মন্তব্য করতে চাননি।
বৈরাগীরহাট গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান শম্পা রায়চৌধুরীর স্বামী অমর রায় অবশ্য দাবি করেন, ‘‘যে প্রক্রিয়ায় প্রার্থী বাছাইয়ে ভোট নেওয়া হয়েছে, তা যথাযথ ভাবে হয়নি। বিভিন্ন অঞ্চলের কর্মীরা ভোট লুট করেছেন। পচাগড় গ্রাম পঞ্চায়েত অঞ্চলে আদতে কোনও ভোট হয়নি।’’a
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy