তুফানগঞ্জ ও মাথাভাঙা পুরসভা নির্বাচনে বামেদের ভরাডুবির দায় নিয়ে ফরওয়ার্ড ব্লক ও সিপিএমের মতানৈক্য প্রকাশ্যে এসে পড়ল। রবিবার কোচবিহারে ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদকমন্ডলীর বৈঠক হয়। দলীয় সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে জেলার চার পুরসভা কোচবিহার, দিনহাটা, তুফানগঞ্জ ও মাথাভাঙার নির্বাচনী ফলাফল নিয়ে পর্যালোচনা হয়েছে। পাশাপাশি দিনহাটায় পুরবোর্ড গঠনের প্রসঙ্গও ওঠে। সেখানে বিদায়ী চেয়ারম্যান চন্দন ঘোষ না উদয়ন গুহকে কে চেয়ারম্যান হবেন, তা নিয়ে বোর্ড গঠনের বিজ্ঞপ্তি জারির পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে ঠিক হয়। ওই দুই পুরসভায় বামেদের বিপর্যয়ের জন্য বামেদের কিছু নেতা ‘সিপিএমের সাংগঠনিক দুর্বলতা’কেই দায়ী করেছেন।
ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ বলেন, “তুফানগঞ্জ ও মাথাভাঙায় সাংগঠনিক দুর্বলতার জন্য ফল খারাপ হয়েছে। ওই দুই এলাকায় প্রচারে বাধা, ভয় ভীতি দেখানর ঘটনাও অবশ্য ছিল। কিন্তু ওই সন্ত্রাস মোকাবিলার জন্যও কিছুটা সাংগঠনিক শক্তির দরকার হয়। সেটা থাকলে ফলাফল যাই হোক না কেন, অন্তত প্রচারে বাধার ঘটনা হত না। তবে নির্বাচনের দিন জেলার কোথাও ভোটদানের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি হয়নি।” সিপিএম নেতারা ওই বক্তব্য মানতে চাননি।
ফ্রন্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, কোচবিহারের ওই দুই পুরসভায় সিপিএমের নেতৃত্বাধীন পুরবোর্ড ক্ষমতায় ছিল। এবারেও বেশিরভাগ আসনে সিপিএম প্রার্থীরা লড়াই করেছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই ব্যর্থতার দায় সিপিএমের কি না সে প্রশ্ন ওঠে। জবাবে ফরওয়ার্ড ব্লকের উদয়নবাবু অবশ্য প্রকাশ্যে সরাসরি সিপিএমকে দায়ী করার রাস্তায় হাঁটেননি। উদয়নবাবু বলেন, “যা ঘাটতি তা বামফ্রন্টগত।” ফরওয়ার্ড ব্লকের তুফানগঞ্জ মহকুমা নেতা তথা জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য দুলাল গোপ সাফ বলেছেন, “তুফানগঞ্জ পুরভোটে ওই ব্যর্থতা আক্ষরিকভাবে ফ্রন্টগত। কিন্তু এটাও ঠিক, ওই পুরসভায় সিপিএমেরই মূল সংগঠন ছিল।” তুফানগঞ্জে ১২টি আসনের মধ্যে সিপিএম ১০টিতে লড়াই করে তিনটিতে জিতেছে। আরএসপি ও ফব একটি করে আসনে প্রার্থী দিলেও জয়ের মুখ দেখতে পারেনি। ফরওয়ার্ড ব্লকের মাথাভাঙা জোনাল সম্পাদক হরিপদ অধিকারী বলেন, “১২ আসনের ওই পুরসভায় সিপিএম ১০টিতে, ফব ও সিপিআই ১টি করে আসনে প্রার্থী দেয়। কিন্তু ১০টিতে লড়ে মাত্র ২টিতে জিতেছে বড় শরিক। দুর্বল সংগঠনের জন্য সিপিএম তৃণমূলের চাপা সন্ত্রাস মোকাবিলা করতে পারেনি বলে ওই ফল হয়েছে। ব্যর্থতার বেশি দায় বড় শরিকের।” সিপিএম নেতৃত্ব প্রকাশ্যেই তুফানগঞ্জ ও মাথাভাঙার নির্বাচনী চিত্রের সঙ্গে জেলার অন্য এলাকা গুলিয়ে দেওয়া ঠিক হচ্ছে না বলে মনে করছেন।
সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য তথা পুরভোটে তুফানগঞ্জে বাম শিবিরের নেতা তমসের আলি বলেন, “২০০৮ সাল থেকে তুফানগঞ্জে তৃণমূলের সন্ত্রাস চলছে। মাথাভাঙাতেও তাই। তাই দিনহাটা, কোচবিহার ও মেখলিগঞ্জের সঙ্গে ওই দুটি এলাকাকে গুলিয়ে ফেললে চলবে না।’’ তিনি জানান, সাংগঠনিক দুর্বলতা থাকলে ওই দুই পুরসভায় এত সংখ্যক আসনে আমরা প্রার্থী, পোলিং এজেন্ট দিতে পারতাম না। ওই দুই এলাকায় শাসক দলের সন্ত্রাস ফল খারাপের মূল কারণ। দিনহাটা ও কোচবিহারে বামেদের অন্য শরিকদের যৌথ শক্তি রয়েছে। ওই দুই পুরসভায় তা নেই। ভোটের দিনও সেখানে বাম ভোটারদের যথেষ্ট বাধা দেওয়া হয়েছে। কর্মীদের পেটান হয়।
ফব’র দুর্গ বলে পরিচিত দিনহাটায় একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে বোর্ড দখল করেছে বামেরা। উদয়নবাবু নিজেও জয়ী হয়েছেন। কোচবিহারেও ২০টি আসনের মধ্যে ৮টি জিতে রীতি মতো লড়াই দিয়েছে বামফ্রন্ট। এদিন বৈঠকে কৃষকদের থেকে ন্যূনতম ১৫০০ টাকা কুইন্টাল দরে সহায়ক মূল্যে ধান কেনা, নেতাজি সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশের দাবিতে কোচবিহারে ২২ মে আন্দোলনের রূপরেখাও চূড়ান্ত করা হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy