প্রতীকী ছবি।
ঘনঘন ফোন আসে। যেমন করেই হোক, তাঁকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাবাকে কাতর গলায় ছেলের আর্তি। সেই আর্তিতে বৃদ্ধ বাবার চোখে অনেক সময়েই বাঁধ মানে না। তবু শক্ত হয়ে ফোনে ছেলেকে আর কটা দিন সবুর করতে বলেন। সান্ত্বনা দেন, সব ঠিক হয়ে গেলেই ছেলে ফিরে আসতে পারবে।
মন মানে না ছেলের। সংসারের জন্য একটু সচ্ছলতা খুঁজতে কয়েকমাস আগে ভুটানে কাজে গিয়ে আটকে পড়েছেন কোচবিহারের কদমতলার যুবক আলম মিয়াঁ। আপাতত তিনি থিম্পুতে রয়েছেন। বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মার সঙ্গে তাঁর স্ত্রী-সন্তানও রয়েছে। আলমের ফেরার অপেক্ষায় দিন গুনছেন সবাই। আলমের বাবা ফজিরুদ্দিন মিয়াঁ বললেন, “খুব চিন্তার মধ্যে আছি। সেখানেও এখন কাজ নেই। ভুটান গেট দিয়ে কাউকে যাতায়াত করতে দিচ্ছে না। ছেলেটা কবে ফিরবে কে জানে।”
ভ্যানরিকশা চালিয়ে সংসার চালান ফজিরুদ্দিন। বড়ছেলে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে গ্রামেই থাকেন। ছোটছেলে টাইলস মিস্ত্রি। সেই কাজেই ভুটানে পাড়ি দিয়েছেন তিনি। ২০ বছরের যুবক আলমের আড়াই বছরের কন্যাসন্তান রয়েছে। তাঁদের বাড়িতেই রেখেই ভুটানে গিয়েছিলেন তিনি। ফজিরুদ্দিন জানান, কোচবিহারে দিনভর কাজ করলেও সামান্য আয় হয়। তা নিয়ে সংসার চালানো কষ্টকর। সে জন্য একটু বেশি আয়ের জন্য ভুটানে গিয়েছেন আলম।
তাঁর কথায়, সেখান প্রতিদিন ঠিকঠাক কাজ মিললে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা উপার্জন সম্ভব। কয়েকমাস কাজ করে গ্রামে ফেরার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু ভুটানে যাওয়ার কিছুদিন পরেই লকডাউন শুরু হয়। ভুটান গেট দিয়ে যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়।
ফজিরুদ্দিন জানালেন, থিম্পুতে কার্যত এখন ঘরেই বসে রয়েছেন আলম। তাঁর সঙ্গে আরও কয়েকজন শ্রমিকের একই অবস্থা। কোচবিহারের খুব কাছেই ভুটান। এই জেলার বহু বাসিন্দাই কাজের খোঁজে ভুটানে যাতায়াত করেন। সেখানে কেউ কাঠমিস্ত্রি, কেউ রাজমিস্ত্রি আবার কেউ দিনমজুরির কাজও করেন। অনেকেই ঠিকাদারের মাধ্যমেও সেখানে যান। আলমও এক ঠিকাদারের মাধ্যমেই গিয়েছিলেন।
রোজার মধ্যেই সোমবার নাকে গামছা বেঁধে ভ্যানরিকশা নিয়ে বেরিয়েছিলেন ফজিরুদ্দিন। তাঁর কথায়, “খুব কষ্টে আছি। সামান্য কিছু ত্রাণ পেয়েছি। তার চেয়েও বেশি চিন্তায় ছোটছেলেকে নিয়ে।”
তাঁর মা সাহিরন বিবি বললেন, “আমরা সবাই আলমের পথ চেয়ে বসে আছি। ওকে ছাড়া আর ভাল লাগছে না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy