Advertisement
১৭ মে ২০২৪

অনাদরের অন্ধকার সরিয়ে উৎসব আলোয় পথশিশুরা

ভিড় ঠেলে গত বছর একটি পুজো মণ্ডপে ঢুকতেই পারেনি অঞ্জলি পণ্ডিত। এ বছর অবশ্য শিলিগুড়ির সব পুজো উদ্যোক্তারাই ভিড় সরিয়ে অঞ্জলিকে জায়গা করে দেবেন। একটি মণ্ডপের নিয়ন আলোয় নানা নকশার গল্প বললেও বর্ষার বন্ধুরা খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি গতবছর। এ বার বর্ষা মল্লিকের মতামত শুনতে মুখিয়ে থাকবেন পুজো কমিটির কর্তাব্যক্তিরা। অঞ্জলি-বর্ষা দু’জনেই এবার ‘শারদ সম্মানের’ বিচারকের ভূমিকায়।

সেরা পুজো বাছবে এই পথশিশুরাই। নিজস্ব চিত্র।

সেরা পুজো বাছবে এই পথশিশুরাই। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:৪৩
Share: Save:

ভিড় ঠেলে গত বছর একটি পুজো মণ্ডপে ঢুকতেই পারেনি অঞ্জলি পণ্ডিত। এ বছর অবশ্য শিলিগুড়ির সব পুজো উদ্যোক্তারাই ভিড় সরিয়ে অঞ্জলিকে জায়গা করে দেবেন। একটি মণ্ডপের নিয়ন আলোয় নানা নকশার গল্প বললেও বর্ষার বন্ধুরা খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি গতবছর। এ বার বর্ষা মল্লিকের মতামত শুনতে মুখিয়ে থাকবেন পুজো কমিটির কর্তাব্যক্তিরা। অঞ্জলি-বর্ষা দু’জনেই এবার ‘শারদ সম্মানের’ বিচারকের ভূমিকায়।

শুক্রবার ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে ওদের নাম বিচারক হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠী-সপ্তমীর দিন নতুন পোশাকে সেজে গাড়িতে করে শহরের বিভিন্ন পুজো মণ্ডপে ঘুরে বেড়াবে ওরা। ছেঁড়া, ময়লা জামা কাপড় ছেড়ে নতুন পোশাকে ওরা মণ্ডপের সামনে গাড়ি থেকে নামবে, আর পুজো উদ্যোক্তারা ওদের ভিড় ঠেলে মণ্ডপে নিয়ে যাবে, এটা যেন বিশ্বাস-ই হচ্ছে না ৮ থেকে ১৪ বছরের কচিকাঁচাদের। শিলিগুড়ির আশ্রমপাড়ায় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পরিচালিত পথ শিশুদের একটি ‘সেন্টারে’ ২২০ জন কচিকাঁচা নিয়মিত আসে। এদের অনেকেই বিভিন্ন স্কুলে পড়ে। স্কুলে মিড-ডে মিল খাওয়ার পরে স্বেচ্ছাসেবী ওই সংস্থার তরফে তাদের পোশাক, বিকেলে জলখাবার, রাতের খাবার দেওয়া হয়। শেখানো হয় আঁকা, মনোসংযোগ করার কৌশলও। এবার ওই সংস্থার সৌজন্যেই এই কচিকাঁচাদের দেখা যাবে সম্পূর্ণ নতুন ভূমিকায়।

মূলত শিলিগুড়ির রাজেন্দ্রনগর, কুলিপাড়া এলাকার বাসিন্দা কিরণ কুমারী, চন্দন রায়, বর্ষা, অঞ্জলিরা। ওদের কারও বাবা রিকশা চালায়, কারও মা বাসা বাড়িতে কাজ করেন। অনেকের আবার দেখভাল করারও কেউ নেই। পুরোনো, তেল চিটচিটে জামা কাপড় পড়ে ঘিঞ্জি বস্তির অন্ধকারেই পুজোর দিনগুলি কেটে যেত ওদের। আড়াই বছর ধরে আশ্রম পাড়ার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটির ‘সেন্টার’ চললেও, আগে ওদের পুজো দেখানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এ বার কেন?

স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, এর আগে ওদের কেউ-ই বড় বাজেটের পুজো দেখার সুযোগ পায়নি। হয়ত কখনও কোনও মণ্ডপের লাইনে দাঁড়ালে ‘অবহেলা’ই জুটেছে বলে সংস্থার সদস্যদের দাবি। সে কারণেই এ বছর ওদের-ই বিচারক করে একদিকে পুজো দেখানো অন্যদিকে সমাজের মর্যাদাও পাইয়ে দেওয়া যাবে বলে দাবি করেছেন সংস্থার কো অর্ডিনেটর সমিত বিশ্বাস। তাঁর প্রশ্ন, “অবহেলিত ওই শিশুদের কথা উৎসবের সময় শুধু কেন অনান্য দিনেও কতটা মনে রাখি? ওদের প্রাপ্য অধিকার কতটা দিতে পারি?’’ তিনি বলেন, “ওদের প্রাপ্তিতে হয়ত অনেক ঘাটতি জমেছে, তাই পুজোয় সম্মানিত বিচারকের আসনে বসিয়ে ওদের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে।” ছ’টি পুরস্কার দেওয়া হবে সংস্থার তরফে। প্রতিমা, মণ্ডপ, আলো, সামাজিক কাজ, পরিবেশ এবং আয়োজন সব বিষয়েই শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দেওয়া হবে। মোট ছ’টি বিভাগে ১২টি পুজোকে বাছাই করবে কিরণ চন্দন-রা। পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হবে একটি ট্রফি এবং শংসাপত্র। শংসাপত্রেও সই থাকবে বর্ষা-অঞ্জলিদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

durga pujo street children siliguri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE