Advertisement
E-Paper

অনুপস্থিত ৬ সদস্য, কাজ শিকেয় জেলা পরিষদে

বামেদের হয়ে নির্বাচিত ৬ সদস্য দলত্যাগ করে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার কথা ঘোষণার পর থেকে উত্তর দিনাজপুর জেলা পরিষদের দৈনন্দিন কাজকর্ম প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বর্ষার সময়ে ও পুজোর প্রাক্কালে নানা জরুরি কাজ থমকে গিয়েছে। কারণ, প্রায় এক মাস হল চার কর্মাধ্যক্ষ সহ বামফ্রন্টের ছয় সদস্য অনুপস্থিত থাকায় জেলা পরিষদে কোনও বৈঠক হতে পারছে না।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:০৩

বামেদের হয়ে নির্বাচিত ৬ সদস্য দলত্যাগ করে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার কথা ঘোষণার পর থেকে উত্তর দিনাজপুর জেলা পরিষদের দৈনন্দিন কাজকর্ম প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বর্ষার সময়ে ও পুজোর প্রাক্কালে নানা জরুরি কাজ থমকে গিয়েছে। কারণ, প্রায় এক মাস হল চার কর্মাধ্যক্ষ সহ বামফ্রন্টের ছয় সদস্য অনুপস্থিত থাকায় জেলা পরিষদে কোনও বৈঠক হতে পারছে না। জেলা পরিষদের সিপিএমের সভাধিপতি লাডলি চৌধুরী ও আরএসপি-র সহকারি সভাধিপতি প্রফুল্লকুমার দেব সিংহও নিয়মিত জেলা পরিষদে যাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। সভাধিপতি বলেন, “এক মাস ধরে আমাদের ছয় সদস্য সদস্যা জেলা পরিষদে আসছেন না। দু’সপ্তাহ ধরে তাঁদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগও করতে পারছি না। তাঁরা না আসায় প্রশাসনিক কারণেই উন্নয়নমূলক সমস্ত কাজ আটকে রয়েছে।”

সহকারি সভাধিপতি প্রফুল্লকুমারবাবু জানিয়েছেন, জেলা পরিষদের ১০টি স্থায়ী সমিতিতে চারজন করে বামফ্রন্টের সদস্য ও একজন করে বিরোধীদের সদস্য রয়েছেন। ওই ছয় সদস্য সদস্যার মধ্যে দু’জন করে বিভিন্ন স্থায়ী সমিতিতে রয়েছেন। তাই তাঁরা সহ বিরোধী সদস্যরা জেলা পরিষদে অনুপস্থিত থাকায় বিভিন্ন স্থায়ী সমিতির বৈঠক করা সম্ভব হচ্ছে না। বৈঠকে সর্বসম্মতভাবে প্রস্তাব পাশ না করে উন্নয়নমূলক কাজ করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, “কোনও কাজ না থাকায় আমি ও সভাধিপতি মাঝেমধ্যে জেলা পরিষদে আসি না।”

গত ২২ অগস্ট চোপড়ার সিপিএম সদস্যা শিবানী সিংহ, ইসলামপুরের সিপিএম সদস্য মহম্মদ হাফিজুদ্দিন, গোয়ালপোখরের সিপিএম সদস্যা আলেমা নুরি, করণদিঘির সিপিএম সদস্যা বিপাশা দাস সিংহ, হেমতাবাদের সিপিএম সদস্য প্রফুল্লচন্দ্র বর্মন ও হেমতাবাদের আরএসপি সদস্যা মহসিনা খাতুন তৃণমূলে যোগ দিতে কলকাতায় গিয়েছেন। হাফিজুদ্দিনবাবু বন ও বনভূমি সংস্কার, আলেমাদেবী শিশু, নারী, জনকল্যাণ ও ত্রাণ, বিপাশাদেবী শিক্ষা, সংস্কৃতি, তথ্য ও ক্রীড়া এবং মহসিনাদেবী মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ বিকাশ কর্মাধ্যক্ষের পদে রয়েছেন।

জেলা পরিষদ সূত্রের খবর, দেড় মাস আগে কেন্দ্রীয় সরকার ১ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে। ওই টাকায় পুজোর আগে জেলার নয়টি ব্লকের ৯৮টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় পাকা রাস্তা তৈরি ও নির্মাণ সহ প্রায় ২৫০টি জায়গায় কাজ হওয়ার কথা ছিল। জেলার ৯টি ব্লকে ১৩৯টি মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র ও শিশুশিক্ষা কেন্দ্র নির্মাণের জন্য জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষকে ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে কেন্দ্র। কিন্তু, কোথায় কী কাজ হবে, তা ঠিক করতে বৈঠকই করতে পারছেন না সভাধিপতি।

গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলা পরিষদের ২৬টি আসনের মধ্যে ১৩টি আসনে জয়ী হয়ে টসে জিতে জেলা পরিষদের ক্ষমতা দখল করে বামফ্রন্ট। ১৩টির মধ্যে সিপিএম ১০টি, আরএসপি ২টি ও ফরওয়ার্ড ব্লক ১টি করে আসন পায়। কংগ্রেস ৮টি ও তৃণমূল ৫টি আসন দখল করে।

জেলা তৃণমূল সভাপতি অমল আচার্যের অভিযোগ, “গত এক বছর ধরে বামফ্রন্ট জেলা পরিষদের ক্ষমতায় থাকলেও কোনও উন্নয়নমূলক কাজ করতে পারেনি। তারই প্রতিবাদে বামেদের ছয় সদস্য সদস্যা তৃণমূলে যোগ দিতে কলকাতায় গিয়েছেন। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী জেলা পরিষদ গঠনের এক বছরের মধ্যে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা যায় না। আগামী ১০ সেপ্টেম্বর জেলা পরিষদ গঠনের এক বছর হবে। ১২ থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর মধ্যে বাম সদস্য সদস্যারা তৃণমূলে যোগ দেবেন। এরপরেই তৃণমূলের ১১ জন সদস্য অনাস্থা প্রস্তাব আনবেন। প্রয়োজনে কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে বামবিরোধী জেলা পরিষদ গঠন করা হবে।”

তৃণমূলের জেলা পরিষদ দখল করতে কংগ্রেসের অন্তত তিন সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন। এই বিষয়ে রায়গঞ্জের প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ দীপা দাশমুন্সি বলেন, “বিষয়টি জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোহিত সেনগুপ্ত ও জেলা পরিষদের কংগ্রেসের সদস্যরা দেখছেন।” মোহিতবাবু বলেন, জেলার উন্নয়নের স্বার্থে অনাস্থা এনে সিপিএমকে জেলা পরিষদ থেকে হঠানোই এখন কংগ্রেসের মূল উদ্দেশ্য। কে কার সমর্থন নিয়ে জেলা পরিষদ দখল করবে, তা নিয়ে এখনই মাথা ঘামাতে চাই না।”

জেলা বামফ্রন্টের সচিব তথা সিপিএমের জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য অপূর্ব পালের অভিযোগ, “ক্ষমতা দখলের স্বার্থে কংগ্রেসের সঙ্গে এক হয়ে তৃণমূল টাকা দিয়ে বামফ্রন্টের সদস্যদের কিনে নিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছে। প্রয়োজনে বিরোধী দলের আসনে বসতেও আমাদের কোনও ক্ষতি নেই।” জেলাশাসক স্মিতা পান্ডে জানান, যতদিন না জেলা পরিষদের ওই ছয় সদস্য সরকারিভাবে প্রশাসনকে দলবদলের কথা জানাচ্ছেন, ততদিন প্রশাসনের পক্ষে কোনও পদক্ষেপ করা সম্ভব নয়।

zila parishad uttar dinajpur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy