উদ্ধার হওয়া অস্ত্র। সোমবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
লোকসভা নির্বাচনের আগে মালদহের কালিয়াচকে বেআইনি অস্ত্র কারখানার হদিশ পেল পুলিশ। সোমবার দুপুরে কালিয়াচক থানার লক্ষ্মীপুর এলাকার একটি আমবাগানের পাশে পরিত্যক্ত বাড়িতে ওই কারখানার সন্ধান মেলে। পুলিশি হানার সময় অবশ্য কারখানার অধিকাংশ কারিগরেরা পালিয়ে গেলেও পুলিশ এক যুবককে গ্রেফতার করেছে। পুলিশ জানায়, ধৃতের নাম মহম্মদ ইমতিয়াজ। তার বাড়ি বিহারের মুঙ্গের এলাকায়। কারখানা থেকে পুলিশ উদ্ধার করেছে দুটি অর্ধসমাপ্ত সাত এমএম পিস্তল, আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির যন্ত্রাংশ, দুটি ড্রিল মেশিন, দুটি লেদ মেশিন, লোহার পাইপ, স্যান্ড পেপার, হ্যাক্সো-সহ আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির নানা যন্ত্রপাতি উদ্ধার হয়েছে।
সম্প্রতি কালিয়াচকের বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেছে। ওই ঘটনায় জড়িতদের ধরা ছাড়াও কোথা থেকে অস্ত্র আসছে তা জানতে যখন হিমশিম খাচ্ছিল পুলিশ। এ দিন গোপন সূত্র খবর পেয়ে ডেপুটি পুলিশ সুপার (সদর) সিদ্ধার্থ দর্জির নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনী আম বাগানে হানা দেয়। কারখানার হদিশের পর পুলিশের অনুমান, কালিয়াচক জুড়ে যে অস্ত্রের ছড়াছড়ি চলছে তার বড় অংশ এই ধরনের কারখানাগুলি থেকেই এসেছে বলে মনে হচ্ছে। পুলিশ জানায়, কারখানাটি যে বাড়িতে চলছিল, সেই বাড়ির মালিক মা ও ছেলে ঘটনার পর এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছে।
মালদহের জেলা পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব বলেন, “অস্ত্র কারখানার এক কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই কারবারে আর কারা কারা যুক্ত তা জানতে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, লক্ষ্মীপুরে যে বাড়িতে ওই কারখানাটি গড়ে উঠেছিল, সেই বাড়িটি সাকিলা বেওয়া নামে এক মহিলার। ছেলে মিন্টু শেখকে নিয়ে তিনি থাকেন। বাড়ির চারপাশে আমবাগান। বাড়ির পিছনে একটি ঘরে ওই কারখানাটি ছিল। এলাকাটি নির্জন হওয়ায় প্রথমে বাসিন্দাদের তা চোখে পড়েনি। কিন্তু রাতের দিকে ওই বাড়িতে লোকজনের আনাগোনা শুরু হওয়ার পাশাপাশি লোহা পেটানোর মতো শব্দ শুনে সন্দেহ হয় বাসিন্দাদের। তার পরেই পুলিশের কাছে খবর পৌঁছয়। পুলিশ সূত্রেই জানা যায়, কারখানাটি সপ্তাহখানেক আগে গড়ে উঠেছিল বলে ধৃতকে জেরা করে জানা গিয়েছে। বিহারের মুঙ্গের থেকে লোক এনে অস্ত্রগুলি তৈরি হচ্ছিল। তবে সেগুলি কার হাতে যেত তা খতিয়ে দেখছেন পুলিশ অফিসারেরা।
এর আগেও কালিয়াচক এলাকায় একাধিকবার অস্ত্র কারখানার হদিশ পেয়েছে পুলিশ। কিন্তু এ বার লোকসভা নির্বাচনের আগে এই ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। সম্প্রতি কালিয়াচক কলেজে ছাত্র সংসদের নির্বাচনে বেশ কয়েকজনকে প্রকাশ্যে রিভলবার হাতে ঘুরতে দেখা যায়। চলে গোলাগুলিও। নওদা যদুপুর এলাকায় প্রকাশ্যে গুলি চলে। দিনকয়েক আগে মোথাবাড়িতে তৃণমূল-কংগ্রেস সংঘর্ষে তিন জন গুলিবিদ্ধ হয়। ওই সব অস্ত্র এই ধরনের কারখানার বলে অনুমান পুলিশের। তদন্তকারী অফিসারেরা জানান, গঙ্গার এপারে কালিয়াচক। ওপারে ঝাড়খণ্ড। পাশেই বিহার। ওই নদীপথে বিহারের মুঙ্গের থেকে কালিয়াচকে অস্ত্র আসছে বলে পুলিশের কাছে খবর ছিল।
ভোটের অবশ্য আগে ঘটনাকে ঘিরে রাজনৈতিক মহলে চাপানউতোর শুরু হয়েছে। দক্ষিণ মালদহ লোকসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী আবু হাসেম খান চৌধুরী বলেন, “বাম আমলেও ওই এলাকায় বিহার থেকে লোকজনকে নিয়ে এসে অস্ত্র তৈরি করা হত। এখনও হচ্ছে। আগে বামেদের মদতে সব হত। এখন তৃণমূলের ছত্রছায়ায়।” পাল্টা জেলা তৃণমূল সভানেত্রী তথা সমাজকল্যান মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র বলেন, “যে গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় কারখানাটি চলছিল, সেই আলিপুর-২ পঞ্চায়েত কংগ্রেসের দখলে। ফলে কারা বা কাদের মদতে তা গড়ে উঠেছিল পুলিশ তদন্ত করলেই সামনে আসবে।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র বলেন, “কংগ্রেস ও তৃণমূলের মদতে বরাবর কালিয়াচকে দুষ্কৃতীদের রমরমা চলছে। বামেদের নামে অকারণে অভিযোগ করা হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy