ছিটমহলের বাসিন্দাদের যে আত্মীয়দের বাড়ি সংলগ্ন এলাকায়, তার কাছাকাছি এলাকাতেই তাঁদের পুনর্বাসন দেওয়ার দাবি তুলল ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় কমিটি।
ইতিমধ্যেই রাজ্যসভায় স্থলসীমান্ত চুক্তি বিল পেশ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে কমিটির তরফে জানানো হয়েছে। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে বুধবারই বাংলাদেশ গিয়েছেন কমিটির সহকারি সম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত।
কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, বিদেশ মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে স্থল সীমান্ত চুক্তি বিল অনুমোদন হওয়ায় এ বার ছিটমহল বিনিময়ের সম্ভাবনা জোরালো হয়েছে। রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল ওই বিল সংসদীয় কমিটিতে অনুমোদনের ব্যাপারে ইতিবাচক ভূমিকা নেওয়ায় এই সম্ভাবনা বেড়েছে। আজ, বৃহস্পতিবার থেকে দুই দেশের ১৬২টি ছিটমহলের বাসিন্দাদের মধ্যে কত পরিবার ছিটমহল বিনিময় হলে ঠিকানা বদলাতে আগ্রহী, তা জানতে সমীক্ষায় নামছেন কমিটির সদস্যেরা।
ঠিকানা বদলে আগ্রহীদের নিকট আত্মীয়রা কোনও লাগোয়া এলাকায় রয়েছেন কি না, তাও ওই সমীক্ষায় দেখা হবে বলে জানানো হয়েছে। ‘সামাজিক ও পারিবারিক নিশ্চয়তা’র বাতাবরণ নিশ্চিত করতেই ঠিকানা বদলে আগ্রহীদের নিকট আত্মীয়ের বাড়ির কাছাকাছি পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার ব্যাপারে দাবি জানাতে ওই তালিকা তৈরি করছেন বলে জানিয়েছে কমিটি।
দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, “আগে দু’দেশের সরকারের মধ্যে তিন দফায় চুক্তি হলেও ভারতের সংসদে কখনওই ওই ব্যাপারে বিল আনা হয়নি। এ বার সেই সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সংসদীয় কমিটিতে অনুমোদন হওয়ায় আমরা বিলের ভবিষ্যত নিয়েও রীতিমতো আশাবাদী। তাই ঠিকানা বদলে আগ্রহীদের তালিকার পাশাপাশি তাদের নিকট আত্মীয়েরা কোথায় রয়েছেন, আমরা সেই তথ্যও তৈরি রাখতে চাইছি। ইতিমধ্যে ঠিকানা বদলে আগ্রহীদের অনেকেই ওই ব্যাপারে আর্জি জানিয়েছেন। আগামী সপ্তাহের মধ্যে পুরো তালিকা তৈরি করে দু’দেশের প্রশাসনের হাতে তুলে দেওয়া হবে।” একই সঙ্গে ছিটমহল বিনিময়ের ওই সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে ওঠায় রাজ্য সরকার তথা খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন তিনি।
কমিটি সূত্রেই জানা গিয়েছে, ২০১৩ সালে প্রথম বার দুই দেশের ঠিকানা বদলে আগ্রহীদের তালিকা করা হয়। সেখানে বাংলাদেশ ভূখণ্ড ঘেরা ভারতের ১১১ টি ছিটমহলের ১৪৯ পরিবারের ৭৪৩ জন ঠিকানা বদলে ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে থাকার আগ্রহের কথা জানান। তাঁদের অনেকেরই দিনহাটা, মেখলিগঞ্জ ও মাথাভাঙা মহকুমা লাগোয়া এলাকায় অনেক আত্মীয়স্বজন রয়েছেন। ভারত ভূখণ্ড ঘেরা বাংলাদেশের ৫১ টি ছিটমহলের কোনও বাসিন্দাই অবশ্য বাংলাদেশ ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হতে চাননি। ওই ব্যাপারে চূড়ান্ত তালিকা তৈরিতে আজ সমীক্ষায় করা হবে। সেখানেই আগ্রহীদের নিকট আত্মীয়দের ঠিকানার তালিকা করা হবে।
দীপ্তিমানবাবুর কথায়, ঠিকানা বদলিয়ে পুনর্বাসনের পর সামাজিক ও পারিবারিক আনন্দ ক্ষুণ্ণ হোক, তা আমরা চাই না। তাই ওই ব্যাপারে আর্জি জানানো হবে। এ দিকে সংসদে ছিটমহল বিনিময় বিল পাশের সম্ভবনায় খুশির হাওয়া ছড়িয়েছে। সেখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে সংবাদপত্র, রেডিও-র খবরে নজর রাখা তো বটেই, শুরু হয়ে গিয়েছে মিষ্টিমুখের পালা।
দীপ্তিমানবাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর আন্তরিক উদ্যোগও সত্যিই প্রশংসনীয়। ইতিমধ্যে মুক্তির স্বাদ পাওয়ার স্বপ্নে উচ্ছস্বিত ছিটমহলের বাসিন্দাদের অনেকেই মুখ্যমন্ত্রীর ছবিতে মিষ্টিমুখ করিয়েছেন।”
২০১৩ সালে কমিটির মাধ্যমে প্রথম বার দু’দেশের ছিটমহলে ওই ব্যাপারে সমীক্ষা করা হয়। তাতে দেখা যায়, বাংলাদেশ ভূখণ্ড ঘেরা ভারতের ছিটমহলগুলি থেকে ১৪৯টি পরিবারের ৭৪৩ জন বাসিন্দা ঠিকানা বদল করে ভারতের মূল ভূখণ্ডে বসবাস করতে আগ্রহী। তবে বাংলাদেশের ছিটমহলগুলির বাসিন্দাদের কেউ নিজেদের ঠিকানা বদলে সে দেশের ভূখন্ডের সঙ্গে যুক্ত হতে চাননি। দুই বছরে পরিস্থিতি অনেকটা বদলেছে। তাই নতুন পরিস্থিতিতে নতুন করে আবার সমীক্ষা করে বাসিন্দাদের মনোভাব জানতে চাওয়া হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy