Advertisement
১৬ মে ২০২৪

আর্থিক অস্বচ্ছতার অভিযোগে সাসপেন্ড চার

আর্থিক ‘অস্বচ্ছতা’র অভিযোগ খতিয়ে দেখার পর সংস্থার চার আধিকারিক ও কর্মীকে সাসপেন্ড করলেন হিমুলের মুখ্য কার্য নির্বাহী আধিকারিক (সিইও) রচনা ভকত। শুক্রবার দুপুরে দার্জিলিঙের জেলাশাসক তথা হিমুলের চেয়ারম্যান পুনীত যাদবের অনুমোদনের পর সিইও অভিযুক্ত ওই চার কর্মীকে সাসপেন্ডের নোটিশ পাঠান। সংস্থা সূত্রের খবর, গত মঙ্গলবার ওই কর্মীদের ‘শোকজ’ করেছিলেন সিইও।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৪০
Share: Save:

আর্থিক ‘অস্বচ্ছতা’র অভিযোগ খতিয়ে দেখার পর সংস্থার চার আধিকারিক ও কর্মীকে সাসপেন্ড করলেন হিমুলের মুখ্য কার্য নির্বাহী আধিকারিক (সিইও) রচনা ভকত। শুক্রবার দুপুরে দার্জিলিঙের জেলাশাসক তথা হিমুলের চেয়ারম্যান পুনীত যাদবের অনুমোদনের পর সিইও অভিযুক্ত ওই চার কর্মীকে সাসপেন্ডের নোটিশ পাঠান। সংস্থা সূত্রের খবর, গত মঙ্গলবার ওই কর্মীদের ‘শোকজ’ করেছিলেন সিইও। বৃহস্পতিবারের মধ্যে কর্মীদের শোকজের উত্তর কর্তৃপক্ষের কাছে জমা পড়ে। ওই দিনই বিকেলেই সিইও-র প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট জেলাশাসকের কাছে জমা পড়ে। তার পরে এদিন ওই চারজনকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নেন হিমুল কর্তৃপক্ষ।

হিমূলের চেয়ারম্যান তথা জেলাশাসক বলেন, “প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতেই ওই চারজনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।” সংস্থার সিইও তথা দার্জিলিঙের অতিরিক্ত জেলাশাসক বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে কোনও নির্দেশ ছাড়াই নগদে লেনদেন হচ্ছিল বলে অভিযোগ পেয়েছিলাম। সম্প্রতি কাগজপত্র পরীক্ষার পর কয়েকটি অসঙ্গতি সামনে এসেছে। মূলত লিখিত নির্দেশ এবং ক্ষমতা ছাড়াই টাকা লেনদেন হচ্ছিল।”

এদিন সন্ধ্যায় শিলিগুড়ির সার্কিট হাউসে সিইও হিমুলের অফিসার ও কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করে সংস্থার উত্‌পাদন স্বাভাবিক রাখার জন্য বিভিন্ন দায়িত্ব নতুন করে বন্টন করে দেন। সিইও রচনা ভকত বলেন, “ঘটনার বিস্তারিত তদন্ত হবে। তবে দুধ সরবরাহ যাতে কোনওভাবেই ব্যহত না হয়, তা অবশ্যই দেখা হবে। অফিসার, কর্মীদের মধ্যে নতুন করে দায়িত্ব বন্টন করা হয়েছে।” প্রশাসনিক সূত্রের খবর, সংস্থার ডেপুটি ম্যানেজার সুভাষ রায়, মার্কেটিং অফিসার সুকুমার দাস, অ্যাকাউন্ট অফিসার উত্‌পল মজুমদার এবং ক্লার্ক দীপ্তি ঘোষকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তবে সংস্থার অফিসার ও কর্মীরা বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, গত অগস্ট মাসে রাজ্য সরকার প্রাণী সম্পদ বিকাশ দফতরের মাধ্যমে হিমুলের আর্থিক অবস্থা ফেরাতে ৩ কোটি ৬৭ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে। পিএফের বকেয়া, দুধ সরবরাহকারীদের পাওনা, বিদ্যুত্‌ বিল ছাড়া দু’মাসের দৈনন্দিন খরচের জন্য ২০ লক্ষ টাকা করে মোট ৪০ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়। এরমধ্যে অগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে সিইও-র অনুমোদন ছাড়াই দুধ আনার জন্য ব্যাঙ্কের মাধ্যমে লেনদেন না করে দুই দফায় প্রায় আট লক্ষ টাকা নগদে খরচ হয়। এ ছাড়াও গুড়ো দুধ সরবরাহকারীদের পাওনা ও গাড়ির তেলের খরচ ছাড়া বিভিন্ন রোজকার খরচ নগদে করা হয়েছে বলে অভিযোগ। আর্থিক লেনদেনের ক্ষমতা না থাকলেও ওই কর্মীদের মধ্যে দু’জন তা করেছেন বলে তদন্তে উঠে এসেছে।

হিমূলের কর্মীদের একাংশ জানান, চলতি বছরের গোড়া থেকেই হিমূলে অচলাবস্থা দেখা দেয়। টাকার অভাবে দু’দফায় দুধ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। কর্মীদের বকেয়া পিএফ না মেটানোয় পিএফ কর্তৃপক্ষ সংস্থার পাঁচটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সিজ করে দেয়। সরকারের তরফে হস্তক্ষেপ করে বকেয়া মেটানোর আশ্বাস দেওয়া হয়। এরমধ্যে তত্‌কালীন সিইও দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করে আবেদন করেন। সেই সময় সংস্থার কয়েকজন অফিসার কর্মীই হিমুলের যাবতীয় কাজকর্ম দেখভাল শুরু করেন। দুধ বিক্রির নগদ টাকা দিয়েই সেই সময় সরবরাহকারীদের টাকা মেটানো হচ্ছিল। এমনকি, সংস্থার গোখাদ্য তৈরির কারখানা থেকেও টাকা তোলা হয়। ওই টাকা দিয়েই কর্মীদের নগদে বেতনও হয়। কিন্তু পরবর্তীতে সরকার অনুমোদন পাঠানোর পর কয়েকটি ক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেনের হলেও সিইও এবং চেয়ারম্যানের লিখিত অনুমতি ছিল না বলে জানা গিয়েছে।

গত মঙ্গলবার সিইও সংস্থার দফতরে এসে নথিপত্র পরীক্ষার কাজ শুরু করেন। তাতেই অসঙ্গতি ধরা পড়ে। এই ঘটনায় আর্থিক নয়ছয়ের আশঙ্কাও করেন প্রশাসনিক আধিকারিকেরা। যদিও ওই কর্মীরা শোকজের উত্তরে জানিয়েছেন, গোটা প্রক্রিয়াটাই হয়েছে হিমুলকে সচল রাখার জন্য। কোনও টাকাই কেউ নগদে তছরুপ করেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

money laundering suspend siliguri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE