কীটনাশক ছড়ানো হয়েছে, ওষুধ মিশিয়ে খাবার রাখা হয়েছে, এমনকী রাসায়নিক চক দিয়ে গণ্ডিও কাটা হয়েছে বলে দাবি। তবু ট্রেনের কামরায় আরশোলার দৌরাত্ম্য রুখতে পারেননি রেল কর্তৃপক্ষ। এ বার তাই গবেষকদের দ্বারস্থ হবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা।
সাফাইয়ের কাজ হওয়ার পরেও, সিটের গদির ফাঁকে, বেসিনের পাইপে, শৌচাগারের ভিতরে আরশোলার বংশ দিব্যি বেঁচেবর্তে রয়েছে বলে অভিযোগ। দৌরাত্ম্য থেকে কোন পদ্ধতিতে মুক্তি মিলবে তা জানতে রেলের সদর দফতরের গবেষণা শাখা তথা রিসার্চ, ডিজাইন এন্ড স্ট্যান্ডার্ড অর্গানাইজেশন (আরএসডিএ) কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হয়েছে উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের নিউ জলপাইগুড়ি শাখা।
রেল সূত্রের দাবি, প্রধানমন্ত্রীর স্বচ্ছ ভারত অভিযান প্রকল্প চালুর পর থেকে স্টেশন এবং ট্রেনের কামরার পরিচ্ছন্নতার উপরেও জোর দেওয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আরশোলা উদ্বেগে রেখেছে নিউ জলপাইগুড়ির রেল কর্তাদের। উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত সপ্তাহে এনজেপিগামী পদাতিক এক্সপ্রেসের দ্বিতীয় শ্রেণির বাতানুকুল কামরার একাংশ যাত্রীর অভিযোগ ছিল, আলো বন্ধ করে শুয়ে পড়ার পরে, হঠাত্ই কামরায় আরশোলা উড়তে শুরু করে। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে পৌঁছনোর পরে ওই কামরাটিতে কীটনাশক সহ নানা ওষুধ ছড়ানো হয়। যদিও, ফিরতি পথে ওই কামরাতেই ফের আরশোলা দেখা গিয়েছে বলে যাত্রীদের কয়েকজন লিখিত ভাবে অভিযোগ জানিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। একই ভাবে সিকিম-মহানন্দা এক্সপ্রেস, তিস্তা তোর্সা এবং ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেসেও গত সপ্তাহে আরশোলার দৌরাত্ম্যের অভিযোগ উঠেছে। রেলের কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, গরম পড়া শুরু হতেই আরশোলার উপদ্রব বাড়তে শুরু করেছে।
এনজেপির সিনিয়র এরিয়া ম্যানেজার পার্থসারথী শীল বলেন, “কীটনাশক মারার যে নির্দেশিকা রয়েছে, সে সবই মানা হয়েছে। দিনে বার দুয়েক কামরা সাফাই করা হয়েছে তবু, কোথা থেকে আরশোলা এসে ফের কামরায় ঢুকে পড়ছে নাকি কামরাতেই কোথাও লুকিয়ে থাকছে তা বোঝা যাচ্ছে না। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।”
নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে শুরু বা এই স্টেশন পর্যন্ত ১৪ জোড়া ট্রেন নিয়মিত যাতায়াত করে। এই ট্রেনের কামরাগুলি ধোয়ামোছা হয় নিউ জলপাইগুড়ির ‘কারশেডে।’ কীটনাশক ছড়িয়ে কামরার সব দরজা জানলা বন্ধ করে ৩ ঘণ্টা রেখে দেওয়ার পরে, দরজা খুলে ফের আরশোলা বেরিয়ে আসা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা বলে জানা গিয়েছে। কীটনাশকের ছড়ানোর সময়ে ঝাঁঝ টের পেয়ে আরশোলারা লুকিয়ে পড়ছে বলে মনে কর্মীরা, সম্প্রতি কীটনাশক মাখানো খাবার কামরার ভিতর রেখে দিয়েছিলেন কর্মীরা। এতে বেশ কয়েকটি আরশোলা মরলেও, কামরাকে আরশোলা মুক্ত করা সম্ভব হয়নি বলে জানা গিয়েছে। সব পরীক্ষানিরিক্ষা ব্যর্থ হওয়ায় বাজার থেকে রাসায়ণিক চক কিনেও কামরার মেঝেতে দাগ কেটে রেখেছিলেন কর্মীরা। তাতেও কয়েকটি মরলেও, ফের আরশোলা দল ফিরে এসেছে।
কর্মীদের দাবি, আরশোলার প্রাণশক্তি খুবই বেশি বলে এই ঘটনা ঘটছে। সাধারণ কামরার থেকে বাতানুকুল কামরাতেই আরশোলার উপদ্রবের অভিযোগ বেশি বলে জানা গিয়েছে। বাতানুকুল কামরার সিটে পুরু গদি থাকে, কামরার একাংশ চামড়ার আস্তরণ দিয়ে ঢাকা থাকে, সে কারণে আরশোলার লুকিয়ে থাকার ফাঁক ফোকরও বেশি থাকে বলে মনে করছেন রেলের আধিকারিকরা। ওষুধ প্রয়োগে আরশোলা মেরে ফেললেও, প্ল্যাটফর্ম থেকে বা লাইনের পাশের ঝোপ থেকে আরশোলা কামরায় ঢুকে পড়ে বলে সন্দেহ। সিনিয়র এরিয়া ম্যানেজার পার্থবাবু বললেন, “আশা করছি খুব শীঘ্রই গবেষণা বিভাগ থেকে আরশোলা রোখার কোনও নয়া পদ্ধতি জানানো হবে।”
কামরার ভিতরের নানা ধরনের পোকা মারার জন্য বছরে একবার তাপ-নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। কামরার সব সিট সহ চামড়া, প্লাস্টিক এবং কাপরের সামগ্রি খুলে ফেলা হয়। বাকি কামরার পুরোটা কারখানার বিশেষ চেম্বারে ঢুকিয়ে তাপমাত্রা অস্বাভাবিক বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে কামরার ভিতরে থাকা সব ধরণের পোকা মরে যায় বলে কর্তৃপক্ষের দাবি। এ ছাড়াও প্রতিদিনই ট্রেনে কীটনাশক ছড়ানো হয়, ১৫ দিন অন্তর বিশেষ কীটনাশক অভিযানও হয়। এনজেপির যাত্রী কল্যাণ সমিতির সভাপতি দীপক মোহান্তি অভিযোগ করে বলেন, “প্রায় দিনই এনজেপির বিভিন্ন ট্রেনে আরশোলা ঘুরে বেড়ানো সহ অপরিচ্ছন্নতার নানা অভিযোগ আসছে। আমরা সে সব নথিবদ্ধ করে রেল কর্তৃপক্ষকেও জানাই। তাতেও খুব একটা কাজ হচ্ছে না।”
আরশোলা-আতঙ্ক
• এনজেপি স্টেশনে একাধিক ট্রেনেই আরশোলার দাপটের অভিযোগ।
• কীটনাশক ছড়ালেও কাজ হচ্ছে না।
• রাসায়নিক চক দিয়ে মেঝেতে দাগ কেটে রাখলেও কাজ হয়নি।
• সম্ভবত প্ল্যাটফর্ম বা রেললাইনের আশপাশের ঝোপ থেকে ফের কামরায় হানা দিচ্ছে আরশোলা।
• রেলের সদর দফতরের গবেষণা শাখার দ্বারস্থ হবে উত্তর পূর্ব রেলের নিউ জলপাইগুড়ি শাখা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy