দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনের ইঞ্জিন থেকে গভীর রাতে ডিজেল চুরির অভিযোগ উঠেছে হলদিবাড়িতে। গত শুক্রবার সকালে হলদিবাড়ির কৃষি দফতরের খামারবাড়ি এলাকায় একটি গাড়ি আটক করে এক হাজার লিটার ডিজেল আটক করা হয়েছিল। গ্রেফতার করা হয়েছিল দুই ব্যক্তিকে। শনিবার ধৃতদের চার দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে মেখলিগঞ্জ মহকুমা আদালত। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের নিউ জলপাইগুড়ির এরিয়া ম্যানেজার পার্থ শীল বলেন, “রেলের তরফে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। কেউ দোষী প্রমাণিত হলে পদক্ষেপ করা হবে।”
পুলিশ জানিয়েছে, হলদিবাড়ি স্টেশনে সারা রাত একটি বা দু’টি ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকে। সেই ট্রেনের ইঞ্জিন থেকে পাইপ লাগিয়ে ডিজেল বের করে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় একাংশ রেলকর্মীদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, ইঞ্জিনের ডিজেল ট্যাঙ্কের মুখ তালাবন্ধ না থাকলেও, প্রশিক্ষিত কর্মী ছাড়া সেই মুখ খোলা সম্ভব নয়। সে কারণেই একাংশ রেল কর্মীর ভূমিকাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। শুক্রবার দিনভর ধৃতদের জেরা করেই ইঞ্জিন থেকে ডিজেল চুরির ঘটনা পুলিশ জানতে পারে।
মাথাভাঙার মহকুমা পুলিশ আধিকারিক গণেশ বিশ্বাস বলেন, “রেলের ইঞ্জিন থেকে ডিজেল বার করে চুরির ঘটনায় এক শ্রেনির রেলকর্মীর সঙ্গে চুরি চক্রের যোগসাজশ রয়েছে কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ধৃত দু’জনকে জেরা করার জন্য চার দিনের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।”
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, সপ্তাহে প্রতিদিনই নিউ জলপাইগুড়ি-হলদিবাড়ি প্যাসেঞ্জার ট্রেন রাতে হলদিবাড়ি স্টেশনে থাকে। মঙ্গল, বৃহস্পতি এবং শনিবারে হলদিবাড়ি-কলকাতা সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসও রাতে হলদিবাড়ি স্টেশনে থাকে। গত বৃহস্পতিবারও দু’টি ট্রেনই রাতে হলদিবাড়ি স্টেশনের ২ এবং ৩ নম্বর লাইনে ছিল। গভীর রাতে দুষ্কৃতীরা মারুতি নিয়ে হলদিবাড়ি থেকে এসে, ইঞ্জিনের ট্যাঙ্কে প্লাস্টিকের পাইপ লাগিয়ে বড় আকারের প্লাস্টিকের পাউচে তেল ভরে নেয়। ঘণ্টাখানেক ধরে ১৭টি বড় ব্যাগে তেল ভরার পরে গাড়িতে তুলে জলপাইগুড়ির দিকে রওনা দেওয়া হয়। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে হলদিবাড়ি থানার আইসি সৌম্যজিৎ রায়ের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে গাড়িটিকে পুলিশ আটক করে। গ্রেফতার করা হয় চালক এবং আরোহীকে।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রতি রাতেই রাজ্য পুলিশের ১ জন অফিসার-সহ ৭ জন কনস্টেবল স্টেশনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকেন। পুলিশ সূত্রের খবর ভোটের কারণে ভিন জেলায় বাহিনী পাঠানোয় বর্তমানে স্টেশনে একজন কনস্টেবল পাহাড়ায় থাকেন। আরপিএফেরও একজন কনস্টেবল স্টেশনে থাকেন। ঘটনার সময়ে তাঁরা কোথায় ছিলেন তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে নিউ জলপাইগুড়ির এলাকার একটি চক্র ঘটনায় জড়িত রয়েছে। ধৃত সুজিত রাউত এবং জয়হরি সরকার দু’জনেই নিউ জলপাইগুড়ি এলাকার বলে জানা গিয়েছে। সুজিত রাউত নিউ জলপাইগুড়ির জলেশ্বরী ১ নম্বর বাজার এলাকা এবং জয়হরি সরকার নিউ জলপাইগুড়ির সাউথ কলোনির বাসিন্দা বলে পুলিশের দাবি। ঘটনার দিন রাতে তাদের মোবাইলে ফোন করে খবর পাঠানো হয়েছিল। সে মোবাইলের কল রেকর্ডও পুলিশ পরীক্ষা করছে। শনিবার ধৃতদের মেখলিগঞ্জ আদালতে তোলা হয়। মহকুমা আদালতের সরকারি আইনজীবী প্রমোদ কুমার রায় বলেন, “পুলিশের আবেদনের ভিত্তিতে অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুব্রত মুখোপাধ্যায় ধৃতদের চার দিনের পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy