Advertisement
১১ মে ২০২৪

উত্তর কড়চা

একটাই কাপ। ৩২টি দেশ। প্রায় ৮৫০ ফুটবলার। ব্রাজিলের ১২টি মাঠে ৩১ দিনের লড়াই। সাওপাওলোর সেই উন্মাদনার আঁচ শহর জলপাইগুড়িতেও। ১২ জুন থেকে রাত জাগছে জলপাইগুড়িও। পথেঘাটে, চায়ের দোকানে, ইন্টারনেট কাফে, ব্যাঙ্কে, ডাকঘরে আলোচনায় শোনা যাচ্ছে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানি, স্পেন, ইতালি, পর্তুগালের মত দেশ অথবা নেইমার, অস্কার, মেসি, মুলার, রোনাল্ডো, রবেন, ল্যাম্পার্ড, লামদের নামও।

শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৪ ০১:০০
Share: Save:

বিশ্বকাপের আবেগে একাকার ব্রাজিল-জলপাইগুড়ি

একটাই কাপ। ৩২টি দেশ। প্রায় ৮৫০ ফুটবলার। ব্রাজিলের ১২টি মাঠে ৩১ দিনের লড়াই। সাওপাওলোর সেই উন্মাদনার আঁচ শহর জলপাইগুড়িতেও। ১২ জুন থেকে রাত জাগছে জলপাইগুড়িও। পথেঘাটে, চায়ের দোকানে, ইন্টারনেট কাফে, ব্যাঙ্কে, ডাকঘরে আলোচনায় শোনা যাচ্ছে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানি, স্পেন, ইতালি, পর্তুগালের মত দেশ অথবা নেইমার, অস্কার, মেসি, মুলার, রোনাল্ডো, রবেন, ল্যাম্পার্ড, লামদের নামও। খেলার সঙ্গে যুক্তরাও মগ্ন ফিফা বিশ্বকাপে।

যেমন ফ্রেন্ডস ইউনিয়ন ক্লাবের বিকাশ চন্দ। স্পোর্টস কমপ্লেক্সে ফুটবলের কোচিং দেন তিনি। তাঁর পছন্দের দেশ জার্মানি, ইতালি ও নেদারল্যান্ডস। তিনি স্বপ্ন দেখেন, জার্মানি-নেদারল্যান্ডস ফাইনালের। ইস্টবেঙ্গল ফ্যানস ক্লাবের ভাস্কর গুহ মজুমদার অবশ্য অপেক্ষায় আছেন ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার ফাইনাল দেখার। তাঁর প্রিয় দল ব্রাজিল। তবে নেইমারের মতো মেসিও তাঁর প্রিয়। জে.ওয়াই.এম.এ.-র সুভাষ সরকারও ব্রাজিল-আর্জেন্টিনাকেই দেখতে চান। জেওয়াইসিসি-র অলোক সরকার মনে করেন, বাঙালির রক্তে ফুটবল।

বিশ্বকাপে তারকা সংখ্যা কম নয়। ভেটারেন স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশন-এর সন্তু চট্টোপাধ্যায় দেশ ভ্রমণের সুবাদে দেখেছেন ম্যাঞ্চেস্টার বা এসি মিলানের মত মাঠগুলি। আশা করেন, ২০১৭ সালে অনূর্ধ্ব ১৭ যে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হতে চলেছে তা এদেশের ফুটবলকে উদ্দীপিত করবে। রায়কত পাড়া স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশন-এর রজত ঘোষ ব্রাজিলিয়ানদের মধ্যে নিজেকে খুঁজে পান। কিন্তু ভালবাসেন জার্মানির খেলা দেখতে।

রেফারিং-এর সুবিধার্থে বিশ্বকাপে চমক গোল লাইন প্রযুক্তি ও স্প্রে। জলপাইগুড়ি রেফারি অ্যাসোসিয়েশন -এর সম্পাদক বাবলু বসু মনে করেন, এ বারের বিশ্বকাপের চমক তরুণ ও প্রবীণ খেলোয়ারদের মধ্যে ভারসাম্য। নেইমার, অস্কার, মেসি, রোনাল্ডোর সঙ্গে এ বার মাঠ কাঁপাচ্ছেন রবেন, ল্যাম্পার্ড, লাম-এর মত প্রবীণরাও। নেতাজি মডার্ন ক্লাবের শুভাশিস দত্তের প্রিয় রোনাল্ডো। ফাইনালে দেখতে চান পর্তুগাল আর ব্রাজিলকে।

জলপাইগুড়ি ডিষ্ট্রিক্ট স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের অঞ্জন সেনগুপ্তরও পছন্দ ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার ফাইনাল। তবে বাংলাদেশে এ সময় ভারতের নতুন ক্রিকেট টিমের খেলা চলছে। ফুটবল জ্বরে কি সে খেলা জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে? অঞ্জনবাবুর মতে, ক্রিকেটে ভারত নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছে। ফুটবল সর্বভারতীয় খেলা হয়ে উঠতে পারেনি। জেডিএসএ-র ভোলা মণ্ডল, শহরে ‘সান্তাক্লজ’ হিসেবেই বেশি পরিচিত। ফুটবল তাঁর প্রিয় খেলা। যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়ে লোডশেডিংয়ের জন্য উদ্বোধন অনুষ্ঠান দেখতে পারেননি। জায়ান্ট স্ক্রিন লাগিয়ে কাউকেও তা দেখাতেও পারেননি বলে হতাশ তিনি। টাউন ফুটবল ক্লাবের গোলকিপার বাপ্পা সাহা মনে করেন, ব্রাজিল-জার্মানি যদি ফাইনালে খেলে তবে সেটাই হবে তাঁর কাছে সবচেয়ে উত্তেজক ম্যাচ। নেইমার নতুন কিছু দেবেন এই বিশ্বকাপে, যা মানুষ মনে রাখবে অনেকদিন।

কফি চাষ হচ্ছে জলপাইগুড়িতে

জলপাইগুড়ি মানেই চা বাগান। সেখানে কফি চাষ? হ্যাঁ, এমনটাই চেষ্টা করছেন আবু খালেক। পাঙ্গারপার সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির বাগানে পাশাপাশি গোটা তিনেক কফি গাছ লাগিয়েছেন, তাতে গুটিগুটি ফলও এসেছে। কফি ফলাতে পারলে দার্জিলিং থেকে প্রসেস করিয়ে আনবেন, ভেবে রেখেছেন ৩৮ বছরের তরুণ। কেবল কফি নয়, সমিতির বাগানে ফলিয়েছেন অর্কিড, স্ট্রবেরি, আপেল কুল। আর ফলিয়েছেন সুবর্ণরেখা আম। টবে হাত খানেক উঁচু গাছে ঝুলছে প্রমাণ সাইজের আম। সমিতির পুকুরে চাষ হচ্ছে কই, চিতল। খালেক পাঙ্গারপার সমিতির ম্যানেজার। তাঁর মতো গ্রামের কয়েকজন উদ্যোগী পুরুষ হাল ধরলে ফের হাল ফিরেছে মৃতপ্রায় সমিতির। কৃষিঋণ, সার, বীজ বিক্রি থেকে লাভের টাকায় সম্প্রতি একটি এলাকার জন্য অ্যাম্বুলেন্স কিনল সমিতি। তার উদ্বোধনে এসে নিজেই স্টিয়ারিং ধরে বসে পড়লেন জলপাইগুড়ি কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান সৌরভ চক্রবর্তী।

উপেক্ষিত চিলারায়

আজও উপেক্ষিত বিশ্বখ্যাত বীর সেনানায়ক চিলা রায়। কোচবিহারের মহারাজা বিশ্বসিংহের তৃতীয় পুত্র শুক্লধ্বজ সাম্রাজ্য বিস্তারে অগ্রণী ভূমিকা নেন। চিলের মত ক্ষিপ্রতায় শত্রুর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে পারদর্শিতার জন্য যিনি চিলা রায় নামে বেশি পরিচিত। হলদিবাড়ির কাছে চিলাহাটি, তুফানগঞ্জের কাছে অন্দরান ফুলবাড়িতে চিলা রায়ের কোর্ট, চিলাপাতার জঙ্গল সহ উত্তরের অজস্র জনপদে তার বীর গাঁথার নিদর্শন ছড়িয়ে। সে সব নিদর্শন রক্ষনাবেক্ষণ হচ্ছে না সে ভাবে। কোচবিহার শহরের প্রাণকেন্দ্র সাগরদিঘি চত্বরের এককোণে তিনি আজও সশস্ত্র পাহারায়। পুরসভার উদ্যোগে ২০১০ সালে বসানো ঘোড়ার ওপর তরবারি হাতে উপবিষ্ট চিলা রায়ের ওই মূর্তিতে ফি বছর মাঘি পূর্ণিমায় তাঁকে জন্মদিনের শ্রদ্ধা জানাতে আমজনতার ভিড় উপচে পড়ে। কোচবিহার প্রজা হিতসাধনী মঞ্চের কর্তা আনোয়ার হোসেনদের উপলব্ধি, উপেক্ষিত বীর চিলা রায়ের আগামী ৫০৪ তম জন্মদিন উদযাপনের আগে ওই খামতি মেটানো দরকার। কোচবিহার চাইছে, মহারাজা নরনারায়ণের আমলে সেনাপতির দায়িত্বে থাকা চিলা রায়ের স্মৃতি বিজড়িত সামগ্রী সংরক্ষণে উদ্যোগী হোক প্রশাসন।

পরিচারিকার বইপ্রকাশ

পরিচারিকা বেবী হালদারের লেখা দুটি বই ‘আলো আধারি’ এবং ‘ঈষৎ রূপান্তরিত’ নিয়ে সম্প্রতি একটি আলোচনার আসর বসেছিল মালদহের বিশিষ্ট চক্ষু চিকিৎসক সুব্রত সোমের বাড়ি ‘জিয়া ভরলি’তে। বাবার দ্বিতীয় বিবাহ, মা-র নিরুদ্দেশ হওয়া, নিজের বিবাহ এবং তিনটি সন্তানের জন্ম, অকথিত জীবন সংগ্রামের সেই সব অভিজ্ঞতাই ধরা পড়েছে ‘আলো আধারি’ বইয়ে। পরবর্তীতে পরিচারিকার কাজ নিয়ে দিল্লি যাত্রা, গৃহকর্তার সহায়তায় আশাপূর্ণা দেবী, আনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরি প্রভৃতি সাহিত্যকর্মের সঙ্গে পরিচয় এবং সাহিত্য জগতে প্রবেশ এ সব নিয়েই ‘ঈষৎ রূপান্তরিত’ বইটি। ঘরোয়া আসরে বই দুটির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন অধ্যাপক শক্তিব্রত পাত্র, সুস্মিতা সোম, শিক্ষক সুব্রত মৈত্র, চিরশ্রী দাশগুপ্ত। অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন শুভজিৎ সরকার ও ইন্দ্রনীল মজুমদার। জেলার বিশিষ্ট অধ্যাপক ও চিকিৎসকদের উপস্থিতি অনুষ্ঠানটিকে অন্য মাত্রা দেয়।

বুকের দরজার কাছে

মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস “উত্তরবঙ্গের প্রকৃতি, উপজাতি রীতি, বিশ্বাস, ধর্ম-প্রবাদ সব মিলিয়ে তাঁর গবেষণাধর্মী কিছু প্রবন্ধ নানা পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত উত্তরবঙ্গ বিষয়ক ফিচার ধর্মী লেখা বন্দি করেছেন ‘বুকের দরজার কাছে’তে। গবেষণাধর্মী রচনাগুলি স্থান পেয়েছে ‘মাটিতে পেতেছি কান’ শীর্ষক অধ্যায়ে। ‘ঘুরে ঘুরে আসে বৃষ্টি’, ‘হাওয়ার নেশায় আছি’, ‘শুয়ে রব তারই নীচে অর্ধনারীশ্বর’, ‘বিবিধ কথা’-সহ মূলত ফিচারধর্মী রচনা সংযোজিত অধ্যায়। এই অধ্যায়গুলিতে বিষয় হিসেবে উঠে এসেছে ‘বাঙালি মায়েদের পুজো এবং কয়েকটি ভাবনা’, ‘শাইনিং শপিং মল’, ‘শৈশবের সেই মানুষ’, ‘নাটকের নতুন ভাবনা গ্রুপ থিয়েটার’, ‘বিদ্যালয়ের পোশাকের রদবদল ও একটি ভাবনা’-সহ আরও অনেক কিছু। উত্তরবঙ্গের লোকসংস্কৃতি, লোকসাহিত্য স্থান পেয়েছে লেখকের অনেক রচনায়। ফিচার ও গল্পের মধ্যে যে দেওয়াল, মণিদীপা সেই দেওয়ালকে টুকরো টুকরো করেছেন তাঁর ভাষা দিয়ে। তাঁর ভাষা, বিষয় নির্বাচন পাঠককে দাঁড় করিয়ে দেয় আয়নার সামনে। সেই আয়নায় লেখকের আত্মকথা, প্রতিবিম্ব সৃষ্টি করে পাঠকের আত্মকথার। সেই আত্মকথার সিংহভাগ জুড়ে থাকে নস্টালজিয়া। সেই নস্টালজিয়া এই গ্রন্থকে সত্যি সত্যিই পাঠকের ‘বুকের দরজার কাছে’ পৌঁছে দেয়। দরজার ও পাশেও পৌঁছে যান মণিদীপা অনায়াসে। এখানেই তিনি স্বাতন্ত্র্য।

মাধব মোড়ের মাধব

জায়গার নাম মাধব মোড়। ডুয়ার্সের আলিপুরদুয়ার শহরে গিয়ে প্রশ্ন করলেই সকলে এক কথায় কী ভাবে যেতে হবে জানিয়ে দেবে। যদি বেশি কৌতুহলী হন। তা হলে জানতে পারবেন, যাঁর নামে মাধব মোড় তিনি কোথায় রয়েছেন। দেখাও হয়ে যেতে পারে। দেখবেন মোড়ের মাথায় একটি আস্ত দোকান। সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে ‘মাধব মিষ্টান্ন ভান্ডার’। কিন্তু, মাধববাবুকে মিষ্টির দোকানে পাবেন না। তাঁর একটি মুদি দোকান রয়েছে। বৃদ্ধ মাধববাবু কখনও-সখনও সেখানেই বসেন। তা হলে মাধব মিষ্টান্ন ভান্ডার, মাধব মোড়ের নামটা হল কী ভাবে? মাধববাবুরা তিন ভাই ষাটের দশকে নৈহাটি থেকে আলিপুরদুয়ারে যান। ভাইপো শিশির জানান, সেই সময় ঠাকুর্দা মারা যাওয়ায় পরিবারের দায়িত্ব বর্তায় তাঁর বাবা সুশীল ঘোষের উপরে। তিনি নিউ টাউন এলাকায় রাস্তার ধারে একটি চায়ের দোকান দিয়েছিলেন। সেখানে শিশিরবাবুর কাকা মাধববাবু বসতেন। সুশীলবাবু বিভিন্ন চা বাগান ও গ্রামে মিষ্টি ফেরি করতেন। আলিপুরদুয়ার শহরের দূর-দুরান্ত থেকে অনেকেই ভিড় করতেন চায়ের দোকানে। মাধববাবুর নামের সুবাদে ক্রমে জায়গাটা মাধব মোড় হয়ে ওঠে। চায়ের দোকানে মিষ্টি বিক্রি শুরু হয়। ১৯৬৫ সালে মাধববাবুর নামে জনপ্রিয়তা দেখে সুশীলবাবু দোকানের নাম ভাইয়ের নামেই রাখেন। এর পরে পুরসভা থেকেও মাধব মোড়ের বোর্ড টাঙানো হয়। মিষ্টির দোকানের পাশে বৃদ্ধ মাধব বাবু পারিবারিক ভাগে পাওয়া মুদির দোকান চালান। তিনি বলেন, “আমার নামে দাদা দোকানের নাম দিয়েছিলেন। লোকে আমার নামেই এলাকার মোড়কে চেনে দেখে ভালই লাগে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

uttar karcha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE