ব্যারিকেড পেরিয়ে জনতার কাছে। মালদহের সামসিতে রাহুল গাঁধী। ছবি: বাপি মজুমদার
উন্নয়নের কাজ কে কী ভাবে করছেন তা নিয়ে তরজা চলছেই। শনিবার কংগ্রেসের সহ সভাপতি রাহুল গাঁধী ফের দাবি করেন, কেন্দ্র টাকা বরাদ্দ করলেও, রাজ্য সরকার সেই টাকা খরচ করতে পারছে না। উন্নয়নের টাকা রাজ্যের গরিব মানুষের কাছে পৌঁছচ্ছে না। পক্ষান্তরে, তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, কেন্দ্রীয় সরকার প্রাপ্য বরাদ্দ কেটে নিলেও, রাজ্য সরকার নিজের সাধ্যমতো উন্নয়নের কাজ করছে।
এ দিন দুপুরে কংগ্রেস প্রার্থীর সমর্থনে মালদহের সামসিতে সভা করেছেন কংগ্রেসের সহ সভাপতি রাহুল গাঁধী। সামসি কলেজ মাঠের সভায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নাম করে দেশের সমাজ-সংস্কৃতিতে রাজ্যের অবদানের প্রসঙ্গ তোলেন। এরপরেই কংগ্রেসের দুই নেতা গনিখান চৌধুরী এবং প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির উদ্যোগে উন্নয়ন হয়েছে বলে জানিয়ে কংগ্রেসের সহ সভাপতি অভিযোগ করেন, “শুধু বলা হয়, ইউপিএ সরকার নাকি টাকা দেয় না। আর এই জেলাতেই (মালদহ) একশো দিনের কাজের টাকা পড়ে রয়েছে। এই রাজ্যেকে টাকা দিলেও গরিব মানুষের কাজ মেলেনি।” একশো দিনের কাজ প্রকল্পে রাজ্য সরকার মাত্র ৩৫ দিন কাজ দিতে পেরেছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। দেশের অন্যত্র খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্প শুরু হলেও পশ্চিমবঙ্গে শুরু হয়নি বলে অভিযোগ করেন রাহুল।
উদ্ধত তর্জনী: রায়গঞ্জের জনসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: তরুণ দেবনাথ
মালদহ জেলাকেও বঞ্চনার অভিযোগ তুলেছেন কংগ্রেসের সহ সভাপতি। এ দিন মালদহে বিদায়ী সাংসদ মৌসম বেনজির নূরের সমর্থনে সভা করেন রাহুল। সাংসদ থাকাকালীন মৌসম কী কাজ করেছিলেন তার পরিসংখ্যানও সভায় জানিয়েছেন তিনি। জেলায় পাট, ফল প্রক্রিয়াকরণ সহ একাধিক শিল্পের সম্ভাবনা থাকলেও রাজ্য সরকার কিছু করেনি বলে কটাক্ষ করেন রাহুল। সামসির মাঠে জড়ো হওয়ায় ভিড়ের উদ্দেশ্যে রাহুল বলেন, “আপনাদের রাজ্য সরকার মালদহ জেলার সঙ্গে সঠিক ব্যবহার করেনি। এই জেলায় পাট শিল্পের সম্ভাবনা ছিল। এখানে আমের প্রচুর ফলন হয়। ফল প্রক্রিয়াকরণ শিল্প হতে পারত, কিন্তু কিছুই হয়নি। এমনকী একশো দিনের কাজটাও রাজ্য সরকার মন দিয়ে করেনি। এই সরকার কোনও কাজ করে না, খালি বড় বড় কথা বলে।”
রাহুলের সভার কাছাকাছি সময়ে মালদহ এবং উত্তর দিনাজপুরে একাধিক সভা করেছেন মুখ্যমন্ত্রীও। রায়গঞ্জের মার্চেন্ট ক্লাব মাঠের জনসভায় রাজ্যের উন্নয়ন প্রকল্পের খতিয়ান দিয়ে কেন্দ্রের সরকারকে আক্রমণ করে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, একশো দিনের কাজ প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকার প্রয়োজন মতো বরাদ্দ দিচ্ছে না। তাঁর অভিযোগ, “রাজ্যের মানুষের টাকা নিয়ে ওরা নামমাত্র উন্নয়ন করে, ভোটের আগে কেন্দ্রীয় সরকারের নাম প্রচার করছে। দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় সড়কের বেহাল দশা ছিল। ওরা কোনও কাজ করেনি। এবার কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকারকে বিদায় দিন। আপনারা প্রতারিত হবেন না।”
মালদহের ইংরেজবাজারের সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সঙ্গে রিয়া, রাইমা।রয়েছেন প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন
ও দুই মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী ওসাবিত্রী মিত্র। শনিবার
ছবিটি তুলেছেন মনোজ মুখোপাধ্যায়।
মালদহে সভা করে জেলাকে বঞ্চনার অভিযোগ তুলেছিলেন রাহুল। মালদহের মতো রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রেও কংগ্রেসের সাংসদ রয়েছে। রায়গঞ্জে সভা করে জেলার উন্নয়নের খতিয়ান দেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “রায়গঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস করে দিয়েছি। রায়গঞ্জ ও ইসলামপুরে দুটি মাল্টি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল তৈরি হচ্ছে। কিডনি ডায়ালেসিস ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার তৈরি করব। রাধিকাপুর-বারসই ব্রডগেজ লাইন আমি করেছি। জেলায় পলিটেকনিক ও আইটিআই কলেজ তৈরি হচ্ছে। রাস্তাঘাট ও বিপণন ব্যবস্থাও তৈরি হবে। স্পিনিং মিলের কর্মীদের অন্যত্র চাকরি দিয়েছি। রায়গঞ্জের তুলাইপাঞ্জি চাল আমেরিকায় বিক্রির ব্যবস্থা করে চাষিদের উন্নয়ন করেছি। আমি চাই রায়গঞ্জে স্কুল কলেজ তৈরি সহ সার্বিক উন্নয়ন হোক। তাই আমাকে সমর্থন করুন।” এ দিনও ফের এইমস প্রসঙ্গ তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। রায়গঞ্জের বিদায়ী সাংসদ তথা কংগ্রেস প্রার্থী দীপা দাশমুন্সির নাম না করে মুখ্যমন্ত্রীর কটাক্ষ, “ভোট এলেই ওদের এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির কথা মনে পড়ে। রায়গঞ্জে জমি নেই অথচ এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির কথা বলা হচ্ছে। উত্তরবঙ্গে কী জমির অভাব ছিল নাকি? ইটাহার, শিলিগুড়ি ও কালিয়াগঞ্জে এইমস হোক। আমি কখনই রায়গঞ্জে জোর করে বন্দুক ঠেকিয়ে গায়ের জোরে চাষিদের ১০০ একর জমি নেব না।”
জেলার চাকুলিয়াতেও একটি সভা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সভাতেও কেন্দ্রের ‘বঞ্চনা’ উল্লেখ্য করে রাজ্যের উন্নয়নের খতিয়ান দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মেয়েদের জন্য রাজ্যের কন্যাশ্রী প্রকল্প, যুবকদের জন্য যুবশ্রী প্রকল্প চালু করার কথা জানিয়ে, তাঁর আশ্বাস, “গোয়ালপোখরে আইটিআই, সব্জি মান্ডি সবই করা হবে।”
মুখ্যমন্ত্রীর এইমস আক্রমণের পাল্টা বিদায়ী কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দীপা দাশমুন্সি বলেন, “যিনি জমি অধিগ্রহণ না করে রায়গঞ্জে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির কাজ আটকে দিয়েছেন, তিনি ও তাঁর সরকার কতটা উন্নয়নের পক্ষে তা সবাই জানেন। জমি অধিগ্রহণ না করায়, ওঁরা জনসমর্থন হারিয়েছে। তারজন্যই কংগ্রেসের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ ও অপপ্রচার করতে হচ্ছে। ভোটে জয়ী হয়ে হাসপাতাল তৈরির জন্য জমি অধিগ্রহণ করাতে যা যা করণীয় তা করব।”
এ দিনের সভাতে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে টাকা দিয়ে ভোট প্রভাবিত করার অভিযোগও তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “ওরা ভোট এলেই টাকা দেয়। কিন্তু চিকিৎসার দরকার হলে ওরা টাকা দেয় না। ওরা টাকা দিলে, সেই টাকা নিয়ে ফুচকা খেয়ে নিন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy