Advertisement
০৪ মে ২০২৪

উত্তরের কড়চা

দেখতে দেখতে পার নিরানব্বই বছর। শতবর্ষের দোরগোড়ায় তুফানগঞ্জ মহকুমার নৃপেন্দ্রনারায়ণ মেমোরিয়াল উচ্চবিদ্যালয়। মহকুমার প্রচীনতম স্কুলটির প্রতিষ্ঠাকাল ১৯১৬। মহারাজা জিতেন্দ্রনারায়ণ তাঁর পিতা নৃপেন্দ্রনারায়ণের স্মৃতিতে স্কুলটি গড়ে তুলেছিলেন। তৎকালীন সময়ে কোচবিহারের সবচেয়ে অনুন্নত এলাকায় স্থাপিত হওয়া সত্ত্বেও রাজ্যের কাছ থেকে সর্বোচ্চ আর্থিক সাহায্য পেত। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাইস্কুল স্বীকৃতি পায় ১৯১৭-এ। ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষার অনুমতি পায় ১৯২৩ সালে।

নৃপেন্দ্রনারায়ণ মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়। বাঁ দিকে প্রাচীন ভবন। ডান দিকে ক্লাস চলছে নতুন ভবনে। ছবি: অনিতা দত্ত।

নৃপেন্দ্রনারায়ণ মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়। বাঁ দিকে প্রাচীন ভবন। ডান দিকে ক্লাস চলছে নতুন ভবনে। ছবি: অনিতা দত্ত।

শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৪ ০০:৪০
Share: Save:

শতবর্ষের দোরগোড়ায় নৃপেন্দ্রনারায়ণ মেমোরিয়াল

দেখতে দেখতে পার নিরানব্বই বছর। শতবর্ষের দোরগোড়ায় তুফানগঞ্জ মহকুমার নৃপেন্দ্রনারায়ণ মেমোরিয়াল উচ্চবিদ্যালয়। মহকুমার প্রচীনতম স্কুলটির প্রতিষ্ঠাকাল ১৯১৬। মহারাজা জিতেন্দ্রনারায়ণ তাঁর পিতা নৃপেন্দ্রনারায়ণের স্মৃতিতে স্কুলটি গড়ে তুলেছিলেন। তৎকালীন সময়ে কোচবিহারের সবচেয়ে অনুন্নত এলাকায় স্থাপিত হওয়া সত্ত্বেও রাজ্যের কাছ থেকে সর্বোচ্চ আর্থিক সাহায্য পেত। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাইস্কুল স্বীকৃতি পায় ১৯১৭-এ। ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষার অনুমতি পায় ১৯২৩ সালে। ডিরেক্টর অফ পাবলিক ইনস্ট্রাকশন ওয়েস্ট বেঙ্গলের অধীনে একাদশ শ্রেণির উচ্চমাধ্যমিকে স্কুলটি উন্নীত হয় ১৯৫৭-এ। একাদশ শ্রেণিতে চালু হল কলা ও বিজ্ঞান বিভাগ। হায়ার সেকেন্ডারি কাউন্সিল ১৯৭৬-র ১ জুলাই পরীক্ষামূলকভাবে দু’ বছরের জন্য দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত হাইস্কুলের মর্যাদা দেয়। পাঠক্রমে কৃষি যুক্ত হয় ১৯৬৩ সালে। কৃষির উপরে ১৯৭৮-এ চালু হয় বৃত্তিমূলক শিক্ষার শাখা। দশম শ্রেণি পর্যন্ত শুধুমাত্র ছেলেরাই পঠনপাঠনের সুযোগ পেত। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে ছেলেমেয়ে উভয়েরই পঠনপাঠনের সুযোগ রয়েছে। নিজস্ব ৯ বিঘা জমির উপর গড়ে উঠেছে গ্রিন হাউস। কৃষি নিয়ে পাঠরত ছাত্ররা হাতেকলমে কাজ শেখার সুযোগ পায়। অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ ছাত্রদের টু ও থ্রি হুইলার, হাউস-অয়্যারিং এবং মোবাইল রিপেয়ারিংয়ের কাজ শেখানো হয়। জেলার আলোকপ্রাপ্তির ইতিহাসে অনন্য অবদান রয়েছে এই সারস্বত প্রতিষ্ঠানটির। শতবর্ষ পালন উপলক্ষে শুরু হয়েছে তোড়জোড়। শতবর্ষ উদযাপন কমিটির সভাপতি প্রধান শিক্ষক ডঃ রামকৃষ্ণ প্রামাণিক জানান, শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে স্কুলপ্রাঙ্গণে রাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণের পূর্ণাবয়ব মূর্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কমিটির সম্পাদক গোপাল বিদ্যানন্দ জানান, এই উপলক্ষে নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা রয়েছে আন্তঃ বিদ্যালয় ক্রিকেট টুর্নামেন্টের। সামনের বছর স্কুলের সব ছাত্রছাত্রীই যাতে উত্তীর্ণ হতে পারে সে জন্য শিক্ষক মহল ইতিমধ্যেই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। গত জুন মাস থেকে শুরু হয়েছে জয়েন্ট এন্ট্রান্সের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ। মাধ্যমিকের জন্য অগস্ট মাস থেকে চালু করা হবে মক টেস্ট এবং বিশেষ প্রশিক্ষণ। এ ছাড়া রয়েছে বছরভর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা। রাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণের চিঠিপত্র, ছবি ইত্যাদি নিয়ে বিদ্যালয় কক্ষে গ্যালারি তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে গোপালবাবু জানান। এ ছাড়া হবে স্মরণিকা প্রকাশও।

রায়কত বংশ


ছবিটি তুলেছেন সুদীপ দত্ত।

‘রায়কত বংশ ও তাঁহাদের রাজ্যের সংক্ষিপ্ত বিবরণ’ গ্রন্থটি প্রকাশিত হয় ১৮৮৩ সালে। গ্রন্থকার রায়কত রাজবংশের একজন রাজা জগদীন্দ্রদেব রায়কত। উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে বাংলা ভাষায় আঞ্চলিক ইতিহাস বিষয়ে যে ক’টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল তার মধ্যে আলোচ্য গ্রন্থটি একটি। ওই সময় বঙ্গদেশের একটি প্রান্তীয় জেলা থেকে ইতিহাসের গ্রন্থ, যার বিষয় স্থানীয় একটি রাজবংশ, প্রকাশিত হওয়া নিঃসন্দেহে একটি চমকপ্রদ ঘটনা। রায়কত রাজবংশের ওপর এটিই একমাত্র গ্রন্থ হওয়ায় ১৯৮২ সালে উত্তরবঙ্গ ইতিহাস পরিষদ গ্রন্থটি পুনঃপ্রকাশ করে। পরবর্তী সংস্করণটি প্রকাশিত হয় ১৯৮৩ সালে। এর পর দীর্ঘ দিন এই গ্রন্থটির সন্ধান মেলেনি। বর্তমান সংস্করণে মূল গ্রন্থটির সঙ্গে সংযোজিত হয়েছে নতুন তথ্য এবং সম্পাদকীয়। মূল গ্রন্থের অধ্যায়গুলি‘রায়কত বংশ ও তাঁহাদের রাজ্যের সংক্ষিপ্ত বিবরণ’, ‘কোচ বংশের উৎপত্তি সম্বন্ধে পৌরাণিক কিংবদন্তী’ এবং ‘১৭২৮-১৭৯৩, ১১৬৫-১২০০’ স্থান পেয়েছে বর্তমান সংস্করণে। সংস্করণ সম্পাদনা করেন সৌমেন্দ্রপ্রসাদ সাহা এবং আনন্দগোপাল ঘোষ। তাঁরা জানান, “ত্রয়োদেশ রায়কত ধর্মদেব (১৭০৯-১৭২৪) রাজধানী জলপাইগুড়ি শহরের বর্তমান রাজবাড়ি পাড়ায় স্তানান্তর করেছিলেন। এই পটপরিবর্তনের যুগের প্রতিনিধি ছিলেন রায়কত বংশের ষোড়শ রায়কত দর্পদেব। তিনি ইংরেজ কোম্পানির বিরুদ্ধে লড়াইও শুরু করেছিলেন। ইতিপূর্বে বর্ধমানের রাজা প্রতাপচাঁদও ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়েছিলেন। তাঁর নাম স্বাধীনতার আন্দোলনের ইতিবৃত্তে এসেছে। কিন্তু দর্পদেবের নাম আন্দোলনের বৃত্তে আসা দূরে থাক, বঙ্গদেশের ৯৯ শতাংশ ইতিহাসের শিক্ষক, গবেষক, অধ্যাপক তাঁর নামও শোনেননি।” মূল গ্রন্থের সঙ্গে ‘সম্পাদকদ্বয়ের কথা’ অংশটি নিসন্দেহে পাঠককে তথ্য-সমৃদ্ধ করে। একটি দুর্লভ গ্রন্ধ পাঠকের হাতে পৌঁছে দেবার এই প্রয়াস অবশ্যই প্রশংসার যোগ্য।

মিডিয়া বার্ড

হবু সংবাদকর্মীদের চেষ্টাতেই প্রকাশিত হয়েছে কয়েকটি ট্যাবলয়েড, পত্রিকা। শিলিগুড়ি কলেজে ২০০১ সাল থেকে ‘মাস কমিউনিকেশন এবং জার্নালিজম’ পাঠক্রম শুরু হয়। তার পরের বছরই জন্ম হয় ‘মিডিয়া বার্ডের’। প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের চেষ্টায় প্রকাশিত হয় ট্যাবলয়েড ঘরানার এই পত্রিকাটি। ছাত্র-ছাত্রীদের আশা-প্রত্যাশা, ভবিষ্যতের ইচ্ছে থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক বিনোদন, সিনেমা, সাহিত্য আলোচনাও বিষয় হয়ে ওঠে পত্রিকাটির। পত্রিকা সম্পাদনার দায়িত্বও ছিল পড়ুয়াদের উপর। পরপর দু’টি সংস্কার প্রকাশের পরে অর্থ এবং সম্পাদনা সংক্রান্ত কাজের অভাবে পত্রিকাটি কিছুদিনের জন্য বন্ধ থাকে। ততদিন প্রকাশিত হতে শুরু করেছে ‘ইচ্ছে’ নামে আরেকটি পত্রিকার। যদিও, ২০০৯ সালে কলেজ কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে ফের প্রকাশিত হতে শুরু করে ‘মিডিয়া বার্ড’। প্রতিবছরই এই বিভাগের পড়ুয়ারা নিজেদের উদ্যোগেই বিভিন্ন ছোট পত্রিকা প্রকাশ করেছে। ২০১২ সালে ইংরেজিতে প্রকাশিত হয় ‘হেডলাইন’, তার পরের বছর ‘স্পটলাইট’, ‘নর্থ বেঙ্গল নিউজলাইন’। বাংলায় প্রকাশিত হয় ‘দৈনিক দপর্ণ’। সাম্প্রতিক কালে দেশে-বিদেশে আলোড়ন তৈরি করা বিভিন্ন ঘটনা, সিনেমা পর্যালোচনা, সম্পাদকীয় নিবন্ধ, খ্যাতনামা ব্যক্তির বিভিন্ন ‘কোট’, সব কিছুই জায়গা পায় পত্রিকায়। হবু সংবাদকর্মীরাই এই পত্রিকাগুলির ‘শ্বাসযন্ত্র’ বলে শিক্ষক-শিক্ষিকারা মনে করেন।

ইচ্ছে মতো পড়া


খেলার ছলে পড়াবিশ্বরূপ বসাক।

ছুটি মানেই শুধু ঘুম আর খেলা নয়। খেলার ছলে কিছু পড়াশোনাও চলতে পারে। তবে জোর করে নয়। ইচ্ছে মতো পড়া। এমনই ভেবেছে ব্রিটিশ কাউন্সিল। গরমের ছুটিটা পড়ুয়াদের যাতে গতানুগতিক ভাবে কেটে না যায়, তার জন্য শিলিগুড়ির বিভিন্ন স্কুলের পড়ুয়াদের নিয়ে ‘সামার রিডিং চ্যালেঞ্জ’-এর আয়োজন করে কাউন্সিল। ওই উদ্যোগে সামিল হয় শিলিগুড়ির শেমরক স্কাই স্কুল। পুরো ছুটিটায় ৪-১৩ বছরের পড়ুয়াদের ৬টি করে বই পড়ার জন্য বেছে নিতে বলা হয়েছিল পড়ুয়াদের। বই বাছাতে কোনও কড়াকড়ি ছিল না, ইচ্ছে মতো বাছার সুযোগ মিলেছে। শেষ পর্বে ছিল ক্যুইজের আয়োজনও।

স্বীকৃতিতে আপ্লুত

স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পরিচালিত শিশু শ্রমিকদের স্কুলের শিক্ষক। ছোট থেকেই ছবি সর্বক্ষণের সঙ্গী শঙ্করের। স্কুল-কলেজে ক্লাস চলার সময় ছবি এঁকে বকুনি খেতে হয়েছে। সেই ছবি আঁকার জন্য এ বার পুরস্কার মিলল। জলপাইগুড়ির সুকান্তনগরের বাসিন্দা শঙ্কর শীলের আঁকা ছবি ১-৭ জুলাই কলকাতায় অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে প্রদর্শিত হয়েছে। ‘ক্যালকাটা ট্যালেন্ট সার্চ স্কুল’ আয়োজিত ২১তম অল বেঙ্গল আর্টিস্ট পেন্টিং এক্সিবিশনে শঙ্করের আঁকা রবীন্দ্রনাথ পুরস্কৃত হয়েছে। শঙ্করের হাতে পুরস্কার তুলে দিয়েছেন চিত্রশিল্পী ওয়াসিম কপূর। তিস্তা পাড়ের বাসিন্দা ৩২ বছরের শঙ্কর এই স্বীকৃতিতে আপ্লুত।

‘ফ্রম কবীর টু কবি’-র মঞ্চায়ন


টেগোর অ্যাপ্রেসিয়েশন সোসাইটির প্রযোজনা। ছবি: অনিতা দত্ত।

‘অত্যন্ত ভাল একটি প্রযোজনা, বিষয়ের নতুনত্ব আমাকে ভাবিয়েছে।’ শিলিগুড়ির টেগোর অ্যাপ্রেসিয়েশন সোসাইটির প্রযোজনা ‘ফ্রম কবীর টু কবি’ নিয়ে মন্তব্য জাহ্নু বড়ুয়ার (পরিচালক : ম্যায়নে গাঁধী কো নেহি মারা)। প্রণয় ও সোহিনী গুপ্তর মিউজিক্যাল থিয়েটারটির বিষয়, পরিকল্পনা ও বিন্যাসে বিষ্টিজনদের সমাদর কুড়িয়েছে। সাফল্য দু’টি কারণে। বিষয়ের অভিনবত্ব। রবীন্দ্রনাথ আকৃষ্ট হয়েছিলেন কবীরের প্রতি। রবীন্দ্রনাথ ও কবীরের আধ্যাত্মিক ভাবনা, তাঁর সমন্বয় ও বৈপরীত্ব এবং একটি মেয়ের জীবন জিজ্ঞাসা ঘিরে প্রণয় ও সোহিনীর নির্মাণের পটভূমি। সাফল্যের দ্বিতীয় কারণ, লাইভ মিউজিক প্রযোজনাটির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। সুরে গেঁথেছেন পুলক সরকার। রবীন্দ্রসঙ্গীতে সাসা ঘোষাল দর্শককে মজিয়ে রাখেন। গানে অংশ নিয়েছেন রীতা প্রামাণিক, সুপর্ণা চট্টোপাধ্যায়। দোঁহা গীতি ও ধ্রুপদী সঙ্গীতে রোশনী সরকার। নৃত্যে সহেলি বোস, দ্বিজেন বড়ুয়া ও তাঁর ছাত্রছাত্রীরা। সরোদে প্রসেনজিৎ সেনগুপ্ত। তবলা ও বাঁশিতে প্রসেনজিৎ শীল ও সৌম্যজিৎ ঘোষ। অভিনয়ে গুপ্ত দম্পতি। অভিজিৎ দাসের মঞ্চসজ্জা অন্য মাত্রা যোগ করেছে। প্রথম মঞ্চায়ন কলকাতার কলা মন্দিরে। পরবর্তী প্রযোজনাটি মহাভারত-ভিত্তিক মিউজিক্যাল থিয়েটারের আঙ্গিকেই। মহড়া চলছে।

ছিটমহলে এক টুকরো জার্মানি


সমর্থন। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

নিজেদের নাগরিকত্ব নেই। তবে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের মাঝে কোচবিহারের ছিটমহল কিছু দিন যেন হয়ে উঠেছিল একফালি জার্মানি। সৌজন্যে ফুটবল বিশ্বকাপ। আম বাঙালির অধিকাংশই যখন হলদে-সবুজ ব্রাজিল বা নীল-সাদার আর্জেন্তিনায় বিভক্ত, তখন মধ্য মশালডাঙা, পোয়াতেরকুঠি, বাত্রিগছ-সহ ছিটমহলের বাসিন্দারা জার্মানির সমর্থনে সভা, মিছিল করেছেন। জয়ের আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়েছেন। যোগাযোগটা হয়েছিল বেতারে। রেডিও নেদারল্যান্ডের বিশ্ব সংবাদে ভারত-বাংলাদেশের ছিটমহলের কথা প্রথম জানেন জার্মানির বাসিন্দা গ্যাব্রিয়েলা কোরজেনিক। পরে জার্মান পত্রপত্রিকায় ছিটমহল বিষয়ক প্রবন্ধ পড়ে ওই বিদেশিনির আগ্রহ আরও বাড়ে। ব্যক্তিগত আগ্রহেই ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির ই-মেল আইডিও জোগাড় করেন তিনি। সেই সুবাদেই কমিটির সহকারী সম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্তের সঙ্গে যোগাযোগ হয় চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট গ্যাব্রিয়েলার। ছিটমহলের বাসিন্দাদের দুঃখের কথা ছুঁয়ে যায় তাঁকে। ছিটমহলের এক বালিকাকে ইংরেজি মাধ্যমে পড়ার জন্য বছরে ৮০০ ইউরো (ভারতীয় মুদ্রায় ৫৬ হাজার টাকা) দিতে চেয়ে সমন্বয় কমিটির কর্তাদের কাছে ই-মেলও করেন তিনি। কমিটির তরফে বিষয়টি কোচবিহার জেলা প্রশাসনের নজরে আনা হয়। পরে কমিটির পরামর্শেই গ্যাব্রিয়েলা মিউনিখে গিয়ে ভারতীয় দূতাবাসে যোগাযোগ করেন। কিন্তু ওই অনুদান দেওয়ার ব্যাপারে আইনি জটিলতায় ছাড়পত্র মেলেনি। কমিটির বিভিন্ন বৈঠকে এসব আলোচনার সূত্র ধরেই গ্যাব্রিয়েলা হয়ে উঠেছেন ছিটমহলের ঘরের মানুষ। গ্যাব্রিয়েলা কখনও ছিটমহলে আসেননি। কিন্তু তাঁর কথা ছিটমহলের বাসিন্দাদের মুখে মুখে ঘুরছে। জার্মানিতে থেকেও তিনি হয়ে উঠেছেন ছিটমহলেরই একজন। তাই বিশ্বকাপে ছিটমহল ছিল জার্মানির পাশে। জার্মানির সমর্থনে শুক্রবার মধ্য মশালডাঙা, পোয়াতেরকুঠি, করলা, বাকালিরছড়া, নলগ্রাম, বাত্রিগছ সহ প্রায় সমস্ত ছিটমহলে জার্মান পতাকা নিয়ে মিছিল হয়। দীপ্তিমানবাবু বলেন, “গ্যাব্রিয়েলার আগে ইউরোপের কোনও নাগরিক এ ভাবে ছিটমহলের বাসিন্দাদের পাশে দাঁড়াননি। গ্যাব্রিয়েলার দেশ বিশ্বকাপ ফাইনালে পৌঁছনোয় সকলে বৈঠক করে জার্মানির সমর্থনে নানা কর্মসূচি নিয়েছেন।” পোয়াতেরকুঠির সাদ্দাম মিঁয়া বলেন, “আগের বিশ্বকাপে আমি আর্জেন্তিনার সমর্থক ছিলাম। এ বার ওঁর জন্য ওঁর দেশের বিশ্বকাপ জয়ের প্রার্থনা করেছি।” ছিটমহলে সৌরবাতি, ব্যাটারি দিয়ে বাসিন্দারা টিভি দেখেন। ফাইনালের জন্য ছিল বিশেষ ব্যবস্থা। ইনভার্টার ভাড়া করে মশালডাঙা, পোয়াতেরকুঠি, নলগ্রামে লাগানো হয় জায়ান্ট স্ক্রিন। জয়ের পরে আনন্দে মেতে ওঠেন সবাই।

মুলারে মজে শিলিগুড়িবাসী


—ফাইল চিত্র।

শিলিগুড়ি থেকে রিও ডি জেনেইরো। কাঞ্চনজঙ্ঘা থেকে মারকানা স্টেডিয়াম। ২০০৯ সালের ২১ জুন ১৯ বছর বয়সী এক ফুটবলার মুগ্ধ করে দিয়েছিলেন শিলিগুড়ির দর্শকদের। ৫ বছরের মাথায় ১৩ জুলাই সেই ফুটবলারেই মোহিত হন শিলিগুড়ির অনেক ক্রীড়াপ্রেমীই। তাঁর নাম টমাস মুলার। এ বারের বিশ্বকাপ জয়ী দলের অন্যতম ফুটবলার। যিনি ব্রায়ান মিউনিখের অনূর্ধ্ব উনিশ দলের খেলোয়াড় হিসেবে শিলিগুড়িতে এসেছিলেন। শিলিগুড়ি মেয়র একাদশের সঙ্গে প্রীতি ম্যাচ হয়েছিল সেবার। দলের কোচ হিসেবে ছিলেন গার্ড মুলার। সেই প্রীতি ম্যাচের কথা অনেকে ভুলেই গিয়েছিলেন। কিন্তু, জার্মানি বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠার পরে মুলারের কথা মনে যায় ওই প্রীতি ম্যাচের সঙ্গে যুক্ত সকলেরই। তখন টমাস ছিলেন উঠতি খেলোয়াড়। তাঁকে নিয়ে কেউ মাথা ঘামায়নি। এমনকী, সংবাদ মাধ্যমের আলোকচিত্রীরাও গার্ড মূলারের ছবি তুলতেই বেশি ব্যস্ত ছিলেন। কিন্তু, জহুরি হিরে চিনতে এতটুকুও ভুল করেননি। সে দিন খেলার আগে এক চিত্র সাংবাদিক গার্ড মূলারের নানা ভঙ্গিমার ছবি তুলছিলেন। তখনই তাঁকে গার্ড মূলার মৃদু হেসে থামিয়ে দেন। ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে টমাস মূলারের দিকে হাত দেখিয়ে চিত্র সাংবাদিককে পরামর্শ দেন, ‘ওঁর ছবি তুলুন। ওঁরাই আগামীতে বিশ্ব ফুটবলের মাঠ কাঁপাবে।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

uttar karcha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE