Advertisement
E-Paper

উত্তরের কড়চা

‘আখসোর হা/পোকামাকড় দূরে যা।/সগারে ধান টুনিয়া মুনিয়া/হামার ধান কাইঞ্চতা সোনা।’ ছড়ার সুরে এভাবেই লক্ষ্মীকে আহ্বান জানায় রাজবংশী সমাজ। তাঁদের ডাক লক্ষ্মীপুজোয়। জমিদারি ব্যবস্থা যখন চালু ছিল তখন গ্রামের জোতদার বা জমিদাররা এই ডাকলক্ষ্মী বা খেতি লক্ষ্মীর পুজো করতেন। পরবর্তী কালে প্রজারাও এতে অংশগ্রহণ করেন। মূর্তিবিহীন ডাকলক্ষ্মীর পুজো আদতে কৃষি উত্‌সব। বাড়ির বাইরে তৈরি করা হয় পাটকাঠির মণ্ডপ।

শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০০

ছড়ায় আরাধনা লক্ষ্মীর

‘আখসোর হা/পোকামাকড় দূরে যা।/সগারে ধান টুনিয়া মুনিয়া/হামার ধান কাইঞ্চতা সোনা।’ ছড়ার সুরে এভাবেই লক্ষ্মীকে আহ্বান জানায় রাজবংশী সমাজ। তাঁদের ডাক লক্ষ্মীপুজোয়। জমিদারি ব্যবস্থা যখন চালু ছিল তখন গ্রামের জোতদার বা জমিদাররা এই ডাকলক্ষ্মী বা খেতি লক্ষ্মীর পুজো করতেন। পরবর্তী কালে প্রজারাও এতে অংশগ্রহণ করেন। মূর্তিবিহীন ডাকলক্ষ্মীর পুজো আদতে কৃষি উত্‌সব। বাড়ির বাইরে তৈরি করা হয় পাটকাঠির মণ্ডপ। লক্ষ্মীর প্রতীক হিসেবে রাখা হয় ধানের গোছা। মহিলারা নয়, বাড়ির প্রবীণ বা বিবাহিত পুরুষরাই পুরোহিতের ভূমিকা পালন করে থাকেন। পুজোর অঙ্গ হিসেবে ফসলের খেতে হাঁস বলি দেওয়ার রীতি রয়েছে। এই হাঁসের মাংস রেঁধে সবাইকে খাওয়ানো হয়। একে বলা হয় ‘ভেণ্ডেরা’। বিশ্বাস বশে আরও ফসলের আকাঙ্ক্ষায় হাঁসের মাথাটি তাঁরা পুঁতে দেন খেতের মধ্যে। বলি দেবার আগে হাঁসটির পায়ে দড়ি বেঁধে ধানের খেতে ঘুরিয়ে নিয়ে আসা হয়। মূলত আশ্বিন মাসের সংক্রান্তিতে ডাকলক্ষ্মী বা খেতি লক্ষ্মীর পুজো হয়ে থাকে। তবে এখন কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর দিন বা তার দিন কয়েক পরেও এই পুজো সম্পন্ন হচ্ছে। পুজোর সন্ধ্যায় জমির আলের ধারে প্রদীপ জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। এর নাম ‘গোছা দেওয়া’। নারী পুরুষ ধানের খেতে একত্রিত হয়ে ছড়ার সুরে দেবী লক্ষ্মীকে আহ্বান জানান। এই ভাবে সম্পদের দেবী কে আরাধনা করা হয় বলেই এই পুজো ডাকলক্ষ্মী পুজো নামে পরিচিত বলে জানান লোকসংস্কৃতির বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক দীপক রায়। তাঁর মতে, আসলে এটি ক্ষেত্রপূজা। কৃষির দেবীকে পুজো করা হয়। এই পুজো অর্চনার মধ্যে কৃষি উর্বরতার ব্যঞ্জনা রয়েছে। ছড়ার মধ্যে নিহিত রয়েছে কৃষি ফসলের কামনা।

লেখা ও ছবি : অনিতা দত্ত

শান্তি সিংহের সংগ্রহ

সে এক অন্য শিলিগুড়ির গল্প। যদি পাঁচের দশকের কথা কথা ভাবা যায়। ছোট্ট শিলিগুড়ি। শান্ত, নিরিবিলি জনপদ। সেই অতীতের কত টুকু ধরা আছে ছবিতে! খুব বেশি অতীতের ছবির দেখা মেলে না। দার্জিলিঙের পুরানো ছবি হয়তো ব্রিটিশদের সৌজন্যে অনেকটাই রয়েছে। কিন্তু, শিলিগুড়ির তেমন ছবি মেলা ভার। তখন ছবি তোলার লোক তেমন কোথায়? হাতে গোনা কয়েকজন। তাঁদের একজল ছিলেন শান্তি সিংহ। সেই আমলের অন্যতম সেরা এক প্রেস ফটোগ্রাফার। হিলকার্ট রোডে ছিল বিখ্যাত সিন্‌হা স্টুডিও। শিলিগুড়ির হারিয়ে যাওয়া অনেক মুহূর্ত ধরে রেখেছেন তাঁর ক্যামেরায়। তারই একটি ছবি এটি। প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু, তাঁর কন্যা ইন্দিরা গাঁধী ও নাতি রাজীব গাঁধীএকই ফ্রেমে। বাগডোগরা বিমানবন্দরে নামার পরে তত্‌কালীন প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান প্রয়াত জগদীশ ভট্টাচার্য। যিনি ছিলেন শহরের অন্যতম রূপকার। ছবির বিখ্যাতজনেরা সকলেই দুনিয়া ছেড়ে চলে গিয়েছেন। নেই সেই ফটোগ্রাফারও। শান্তিবাবু নিজের বাড়িটি ভারত সেবাশ্রমকে দান করে গিয়েছেন। স্টুডিওটি নেই। আছে শুধু ছবি। পুরানো আমলের শিলিগুড়ির সেই ছবি সংগ্রহ করে একটি প্রদর্শনীর চেষ্টা চালাচ্ছেন শহরের ঐতিহ্য অনুসন্ধানে প্রয়াসী একদল তরুণ-তরুণী। তাঁদের সমবেত উদ্যোগ সফল হোক। ছবিটি প্রয়াত জগদীশবাবুর পুত্র গৌরীশঙ্করবাবুর সংগ্রহে রয়েছে।

লেখা: পারমিতা দাশগুপ্ত।

কিরাতভূমি

ওপার বাংলার সাহিত্যিক সৈয়দ আব্দুল মাকসুদ বলেছিলেন, “ইতিহাসের একটি বড় বদ অভ্যাস, সে বিখ্যাতদের মহিমান্বিত করে আরও বিখ্যাত করে, অখ্যাতদের বড় কাজকেও করে অবহেলা।” আনন্দগোপাল ঘোষ ‘অখ্যাতদের’ অবহেলা করেননি। তাঁর ‘দেশভাগ: যাঁদের কথা ইতিহাসে স্থান পায়নি’ প্রবন্ধে অখ্যাতরাই মুখ্য চরিত্র হয়ে উঠেছেন। ‘অখ্যাত’ অর্থাত্‌ দেশভাগ পর্বে পূর্ববঙ্গ, পূর্ব পাকিস্তানের হিন্দু বাঙালি মহিলারা, তাঁদের লাঞ্ছনা অপমানের কথা অক্ষরবন্দি করেছেন লেখক। ‘কিরাতভূমি’ পত্রিকার তৃতীয় ও চতুর্থ (একত্রিত) সংখ্যায় সঙ্কলিত প্রবন্ধটি তথ্য এবং বিষয়বৈচিত্রের কারণে স্বাতন্ত্র দাবি করে। পৌলোমী ভাওয়ালের ‘দার্জিলিঙের প্রাচীনতম আদিবাসীলেপচা’ গবেষণাধর্মী রচনা। দার্জিলিং, কার্শিয়াং, কালিম্পং, সিকিম প্রভৃতি অঞ্চলের বিভিন্ন স্থান, নদ-নদী, পার্বত্য উপত্যকা প্রভৃতির প্রচলিত নামগুলি যে লেপচা ভাষায় সৃষ্টি, সে কথাও জানিয়েছেন তিনি। ‘কোচবিহার ও রংপুর রাজাদের মধ্যে পাশা খেলার প্রচলন ছিল। এই খেলায় রাজারা মহল বা তালুক বাজি ধরতেন। হারজিতের সঙ্গে এই তালুক বা মহল হস্তান্তরিত হত। এ ভাবে রংপুরের রাজা জিতেছিলেন তিরানব্বইটি তালুক এবং কোচবিহারের রাজা জিতেছিলেন একশো ছাব্বিশটি তালুক। এগুলিই পরবর্তীকালে ছিটমহল বলে পরিচিত হয়।’কোচবিহার রাজ্যের বিয়োজনের কাহিনি ও তার পরিহাস-এ লিখেছেন কার্তিকচন্দ্র সূত্রধর। অথবা, ‘শিলিগুড়ি শহরে ছিল হাতেগোনা কয়েকটি মাত্র দোকান এবং শিলিগুড়ির বাসিন্দাদের বিভিন্ন দ্রব্য ক্রয় করতে জলপাইগুড়ি শহরে আসতে হত।’তাঁর প্রবন্ধে লিখেছেন সৌম্যদীপ্ত সিংহ। আলোচ্য সংখ্যায় স্থান পেয়েছে ছোটগল্প ও একগুচ্ছ কবিতাও।

লেখা: সুদীপ দত্ত।

দীঘন মেলা

প্রতিমা নিরঞ্জনের পালা সাঙ্গ হলেও শারদোত্‌সবের রেশ রয়ে যায় গ্রামীন মেলাগুলির মধ্যে। জলপাইগুড়ি জেলার বিভিন্ন এলাকায় দশমীর পরই শুরু হয়ে যায় এই সমস্ত মেলা। কোথাও মেলা বসেছে ষষ্ঠীর দিন থেকে। চলবে কালীপুজোর আগে পর্যন্ত। প্রাচীন এই মেলাগুলি আজও ঐতিহ্যে উজ্জ্বল। পাহাড়পুরের তাঁতিপাড়ায় বসেছিল দীঘন মেলা।এই মেলার বয়স নিরানব্বই বছর বলে জানালেন মেলা কমিটির সম্পাদক নিবাস বসাক। দীঘন অর্থ লম্বা। র্দীঘ এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে রাস্তার দুদিকে এই মেলা বসে। ফি বছর দ্বাদশীর দিন থেকে এই মেলা বসে। মেলা বসে দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে।

হারিয়ে যাচ্ছে মেখলি শিল্প

পাট থেকে তৈরি সুতো দিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে বোনা হয় শতরঞ্চি, বিছানার চাদর, জ্যাকেট, মেখলা। প্রাচীন এই বয়ন শিল্প ‘মেখলি’ হারিয়ে যাওয়ার মুখে। কোচবিহারের মেখলিগঞ্জ মহকুমার নামকরণ হয়েছে এই মেখলি থেকেই। একসময় এলাকার প্রতিটি বাড়িতেই এই শিল্পকর্ম চালু ছিল। মূলত বাড়ির মহিলারাই এই শিল্পে আগ্রহী ছিলেন। যদিও কনের বাড়ি থেকে বরপক্ষকে বা নবজাতককে মেখলি শিল্পজাত বিছানার চাদর বা মেখলা দেবার রীতি বজায় আছে আজও। দেশি তিতা পাট এই শিল্পের প্রধান উপকরণ। প্রথমে পাট ঝুলিয়ে তার থেকে পাকিয়ে সুতো তৈরি করা হয়। এর নাম ‘পাঞ্জিপাড়া’। স্লেট পাথরের মধ্যে একটি বৃত্ত তৈরি করে তার মধ্যে প্রবেশ করানো হয় বাঁশের কাঠি। একে বলা হয় ‘টাকুরি’। পাঞ্জিপাড়ার সুতো টাকুরিতে বেঁধে হাত দিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে তৈরি হয় বুননের সুতো। সেই সুতো নিয়ে দেশি তাঁতযন্ত্রে চলে বুননের কাজ। শিল্পীদের মত, দেশজ যন্ত্রপাতি নয়, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারই এই শিল্পকে বাঁচাতে পারে।

নাটকের ঋত্বিক

এক গাল দাড়ি। ভাঙা সাইকেল নিয়ে সারা শহর ঘুরতেন নাটক-পাগল মানুষটি। কখনও ফুলের দোকান চালিয়েছেন। কখনও আবার গ্রিল কারখানা। মাগুর মাছের চাষও করেছেন। মালিক হয়েছেন ছাপাখানার। কিন্ডার গার্টেন স্কুল করেছেন। এভাবেই গোটা জীবন ধরে হরেক কিসিমের ব্যবসা করেছেন তিনি। কেবল টিভির গেম শো সঞ্চালনাও করেছেন। কোনটাই অবশ্য শুধু টাকা রোজগারের লক্ষ্যে নয়। শুধুই যে সংসার চালাতে তাও নয়। বরং বলা যেতে পারে, ব্যবসা করে, গেম শো চালিয়ে কিছু টাকা রোজগার করে ‘ঋত্বিক’-কে অক্সিজেন জোগানোই যেন ছিল তাঁর অন্যতম ‘টার্গেট’। শিলিগুড়ি তথা উত্তরবঙ্গের নাট্যপ্রেমীরা তো বটেই, কলকাতা, ছাড়িয়ে বাংলাদেশের সংস্কৃতি জগতের অনেকেই এক ডাকে চেনেন মলয় ঘোষ কে। ২৭ সেপ্টেম্বর দেবীপক্ষে মলয় হারা হল ‘ঋত্বিক’। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে এদিন ভোরে শিলিগুড়ির একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়েছিল। সকাল আট’টা নাগাদ সেখানেই মৃত্যু হয় মলয় ঘোষের। মলয়ের মৃত্যুর খবর চাউর হতেই শোকের ছায়া নামে রাজ্যের সংস্কৃতির সঙ্গে সঙ্গে ক্রীড়া মহলেও। কারণ, সরাসরি খেলাধূলা না করলেও অভিযানের নেশা ছিল তাঁর রক্তে। তাই ছোটবেলায় নদী সাঁতরানোর অভিজ্ঞতা নিয়েই ডিঙি নৌকায় শিলিগুড়ি থেকে কলকাতা অভিযানের ঘোষণা করে চমকে দিয়েছিলেন সবাইকে। সেটা ছিল ১৯৮৫-এর জুলাই মাস। শিলিগুড়ির মহানন্দার পাড়ে উপচে পড়া ভিড়। মলয়বাবুর নেতৃত্বে শিলিগুড়ির চার যুবক আন্তর্জাতিক যুব বর্ষ উদ্যাপনে ডিঙি নৌকা করে জলপথে কলকাতায় রওনা হন সে দিন। তাঁর ডাবগ্রামের বাড়িতেই তৈরি হয় নৌকা। ভাল সাঁতার রপ্ত করতে ফুলবাড়িতে গিয়ে নিয়মিত প্রশিক্ষণও নিয়েছেন। এডমন্ড হিলারির গঙ্গা অভিযান তাঁকে স্বপ্ন দেখিয়েছিল। পরে পিনাকী চট্টোপাধ্যায়ের ডিঙি নৌকায় আন্দামান অভিযানও তাকে অনুপ্রাণিত করে। মহানন্দায় সেদিন তাকে লগি ঠেলে কলকাতার পথে রওনা হতে দেখেছিলেন শিলিগুড়ির বহু বাসিন্দা। ১৫ দিন পর কলকাতার আউটট্রাম ঘাটেও ছিল জনারণ্য। তত্‌কালীন ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ মন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তী মলয় ঘোষদের স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিলেন। মেঘালয়ের গারো পাহাড়ের দিক থেকে বাংলাদেশের ময়মনসিংহের ভেতরে বয়ে এসেছে কংস নদী। এ নদীর উল্লেখ পাওয়া যায় নীরদ চন্দ্র চৌধুরীর লেখাতে। সেই নদীর পাড়ের গ্রাম বেতাটিতে ১৯৫৬ সালের ১৬ মার্চ জন্মেছিলেন মলয় ঘোষ। ছয় ভাইয়ের সবার ছোট মলয় বাবা মায়ের সঙ্গে দেশের বাড়িতে রয়ে গেলেও একে একে পাঁচ দাদা ‘ইন্ডিয়া’য় পাড়ি দিয়ে শিলিগুড়ির ডাবগ্রামে স্থায়ী আস্তানা তৈরি করে ফেলেন। ১৯৭১-এর ভোরে কংস নদীতে নৌকা ভাসিয়ে দেশের ভিটে ছাড়লেন তিনজন। পেছনে থাকল কুয়াশায় ঢাকা জন্মভিটা। পরবর্তীতে স্মৃতি আবছা হয়ে গেলেও, দেশের মাটি ছাড়ার শোক আজন্ম ছিল মলয়ের ভেতরে। ১৯৮৪তে তিনি তৈরি করেন নিজস্ব নাটকের দল ঋত্বিক। উদ্বাস্তু, বাস্তুহারা এসব চেনা শব্দের সারণী তে মলয় নিয়ে এলেন নতুন শব্দ, দেশ-ভিখারি। নাটকের সঙ্গে শিলিগুড়ি এবং বাংলাদেশের যোগাযোগ তৈরির মূল কান্ডারিও ছিলেন তিনি। চেক প্রজাতন্ত্রের একটি নাটকের দলকে দিল্লির আন্তর্জাতিক নাটক উত্‌সবের পর শিলিগুড়িতে অনুষ্ঠান করার জন্যে নিয়ে এসেছিলেন তিনি। ১৯৯৩ সালের ডিসেম্বরে নাট্য উত্‌সবে ঋত্বিকের হাত ধরেই উত্তরবঙ্গে প্রথম ইউরোপের কোনও নাটকের দল নাটক মঞ্চস্থ করে।

karcha uttar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy