Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

উত্তরের কড়চা

কেউ বাংলাদেশে, কেউ বা নেপালে। স্কুল কলেজে পড়া শেষ করে কেউ আবার নিজের দেশ তাইল্যান্ডে থিতু হয়েছেন। আবার অনেকেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন কলকাতা, মুম্বই শিলিগুড়িতে। দেশ, সীমানার গণ্ডি পেরিয়ে একসময়ে সকলেরই প্রথম পরিচয় হয় স্কুলের বেঞ্চিতে।

শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৪ ০১:৪৭
Share: Save:

স্কুলের পুনর্মিলন উত্‌সব

কেউ বাংলাদেশে, কেউ বা নেপালে। স্কুল কলেজে পড়া শেষ করে কেউ আবার নিজের দেশ তাইল্যান্ডে থিতু হয়েছেন। আবার অনেকেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন কলকাতা, মুম্বই শিলিগুড়িতে। দেশ, সীমানার গণ্ডি পেরিয়ে একসময়ে সকলেরই প্রথম পরিচয় হয় স্কুলের বেঞ্চিতে। একসঙ্গে বড় হয়ে ওঠা সেই সব বন্ধুরা পড়াশোনা শেষ করে যে যার মতো নিজের জগতে চলে গিয়েছেন। ফের একবার পুরোনো সহপাঠীরা এক ক্লাসঘরে জমায়েত হতে চলেছেন। সৌজন্যে পুরানো সেই স্কুল। আগামী ৩০ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর পর্যন্ত দার্জিলিঙে সেন্ট পলস স্কুলের পুনর্মিলন উত্‌সব। স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং প্রাক্তনীদের সংগঠন যৌথ ভাবে এই উত্‌সবের আয়োজন করেছে। তৈরি হয়েছে একটি ওয়েবসাইটও। সেখানে সব প্রাক্তনীদের উত্‌সবে যোগ দেওয়ার আহ্বান রয়েছে। তিন দিনের উত্‌সবে খেলা থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সব কিছুরই আয়োজন থাকছে। ছবি প্রদর্শনী, ফুলের মেলা, স্মৃতিচারণা, নাটক বাদ নেই কিছুই। আগামী ৩০ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৯টায় জাতীয় পতাকা এবং স্কুলের পতাকা তুলে অনুষ্ঠানের সূচনা হবে। বাংলাদেশ এবং কলকাতার বাসিন্দা প্রাক্তন ছাত্রদের মধ্যে ক্রিকেট ম্যাচ হবে প্রথম দিন। তাইল্যান্ডের পড়ুয়াদের ব্যবস্থাপনায় হবে নৃত্যানুষ্ঠান। পুনর্মিলন উত্‌সব উপলক্ষ্যে একটি স্মারক পত্রিকাও প্রকাশিত হবে। এ ছাড়াও প্রাক্তন পড়ুয়াদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নৈশভোজ, চা চক্র ইত্যাদি নানা ধরনের অনুষ্ঠান থাকছে। ফোরামের সূত্রে জানানো হয়েছে, এখনও যে সব প্রাক্তন পড়ুয়াদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি, তাঁরা সবাই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ‘রেজিস্ট্রেশন’ করাতে পারবেন। উত্‌সবের শেষ দিনে স্কুলের ‘ডাইনিং হলে’ স্কুলের তরফে নৈশভোজের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নৈশভোজের নাম ‘দ্যা স্কুল ফেরাওয়েল ডিনার।’

হারিয়েছে পালঙ্ক

বরেন্দ্রী কিংবা পোন্ড্রবর্ধন কিংবা দেবীকোট দিনাজপুরের আদি পরিচয়ে যে নামেরই উল্লেখ থাক না কেন এর প্রাচীনত্ব নিয়ে কোনও সন্দেহের অবকাশ নেই। নবম-দশম একাদশ-দ্বাদশ শতকের গুপ্ত-পাল-সেন কিংবা পরবর্তী সুলতান যুগ-ইতিহাসের মণিমুক্তো ছড়ানো সর্বত্র। তা সে বানগড়ই হোক বা হরিরামপুর। রাজা-সুলতানদের শখ-শৌখিনতার তালিকায় তখন শৌখিন-দবেজ-আরাম প্রদানকারী শয়ন বন্দোবস্তের বিশেষ চাহিদা ছিল। ইতিহাসে রয়েছে মণিমুক্তোখচিত সে সব ‘পালঙ্ক’-র ইতিহাস। কালের গ্রাসে সে সব বিদায় নিলেও পরবর্তীতে জমিদারি প্রথা জারি রেখেছিল ‘পালঙ্ক’-র গৌরব যাত্রা। অবিভক্ত দিনাজপুরের জমিদার পরবর্তীতে খাপুর, অটোর পতিরাম, খাসপুর-এর জমিদাররা ‘পালঙ্ক’-এর পরম্পরায় ঘূণ ধরতে দেননি। খাসপুরের জমিদার ব্রজবিহারী রায়চৌধুরী, মাখন রায় চৌধুরী, বিনোদবিহারী রায়চৌধুরী নিজেদের গৌরব প্রকাশের তালিকায় পালঙ্ককে অতি অবশ্যই গুরুত্ব দিয়েছিল।

তেমনই এক জমিদার বংশের বংশধর পতিরামের বছর পঁচিশের অভিষেক ঘোষ বলল, ‘আমার ঠাকুরদার কাকুর (জমিদার হরলাল ঘোষ) সময়কার পালঙ্ক এখনও আমাদের বাড়িতে আছে। কোনওটার মাথায় দিকে উঁচু হয়ে দু’দিক থেকে দুটো ময়ূর, কখনও পদ্ম ফুল, পায়ার দিকে কখনও পরী, বাঘের পা, সারা গায়ে লতাপাতা, মশারীর স্ট্যান্ডগুলি দড়ির মতো পাকানো। সেগুন কিংবা মেহগনি কাঠের উপর খোদাই করা নকশা, রং আর তার সৌন্দর্য এখনও বিন্দুমাত্র জৌলুস হারায়নি। পালঙ্কে শুয়ে নিজেকে বেশ রাজা কিংবা জমিদার মনে হয়। সে এক অদ্ভুত অনুভূতি!’ পালঙ্ক এখন শুধু রাজাদের ইতিহাসের চৌহদ্দিতে, জমিদারদের শৌখিন আভিজাত্যে। অতীত দিনের সমাজ-জীবন-সংস্কৃতি-সৌন্দর্য সুষমার যে পরিচয় পাওয়া যেত পালঙ্কের উপস্থিতিতে তা ক্রমশ কালের গর্ভে বিলীন হয়ে গেল। উত্‌সাহী আর আগ্রহীদের জন্য পড়ে থাকল তথ্য আর আফশোস। ইস...

থমকে সময়

জলপাইগুড়ির ডেঙ্গুয়াঝাড় চা-বাগান সংলগ্ন মারিয়া বস্তিতে গেলেই দেখা মিলবে ঘড়িটির। প্রায় ৪০ ফুট উঁচু একটি স্তম্ভের গায়ে আটকে আছে ঘড়িটি। ঘড়িটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে পাদ্রি কুটিরের অজানা কাহিনি। চারপাশে ‘দুটি পাতা একটি কুঁড়ি’র উপচে পড়া সবুজ। বাগানের সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রমিকরা খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী। এলাকার যে ক্যাথলিক চার্চটি তাদের উপাসনা গৃহ, তার নাম পাদ্রি কুটির। বাগানের দান-করা জমিতেই গড়ে উঠেছে চার্চটি।

পাতা তোলার ফাঁকে সঠিক সময়ে চার্চে হাজির হবার উপায় বাতলে দিলেন পাদ্রি সাহেব রেভারেন্ড ফাদার এ ডেল ও আরটো। ফাদার তাঁর জন্মভূমি সুদূর ইতালি থেকে নিয়ে এসেছিলেন ঘড়িটি। ফাদারের আত্মীয়রাই ঘড়িটি চার্চকে উপহার দিয়েছিলেন শোনা যায়। চার্চের চৌহদ্দির মধ্যে কংক্রিটের স্তম্ভের গায়ে বসানো হল ঘড়িটি। রায়পুর, ডেঙ্গুয়াঝাড়, জয়পুর চা-বাগান-সহ তিন কিলোমিটার দূরের শ্রমিক বস্তিতেও পৌঁছে যেত ঘড়ির ঘণ্টাধ্বনি। যা শুনে উপাসনায় হাজির হওয়াটা শ্রমিকদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। ১৯৬০-এর পর পাদ্রিসাহেব দেশে ফিরে গেলে ঘড়ির দেখভালের কাজটি অনিয়মিত হয়ে পড়ে। ইতালিতে তৈরি ঘড়ির যন্ত্রপাতি পাওয়াও কঠিন হওয়ায় ঘড়িটি ক্রমশ অচল হয়ে পড়ে।

চায়ের প্রেমে

একটা সময়ে ইংরেজরা চা বাগানের পত্তন করলেও ওই ব্যবসায় নেমে তাঁদের সঙ্গে পাল্লা দিয়েছিলেন অনেক বাঙালিই। পাহাড়-তরাই-ডুয়ার্সের বেশ কয়েকটি বাগানের মালিকানা এই সেদিনও এমন অনেক বাঙালির হাতে ছিল যাঁরা চা-অন্ত প্রাণ বলে পরিচিত চায়ের দুনিয়ার। বিনয় কুমার দত্ত তাঁদেরই মধ্যে একজন। জলপাইগুড়িতে জন্ম ও পড়াশোনা হলেও পরে কর্মসূত্রে শিলিগুড়িতে বসবাস শুরু করেন তিনি। প্রথম জীবনে বাগানের কারখানার যাবতীয় পাতা কিনে তা সরবরাহ করতেন দূর-দূরান্তে। গ্রিন টি, অর্থোডক্স, সিটিসিচায়ের সব শাখায় সেরা বাছাইয়ের দক্ষতা ছিল তাঁর। ষাটের দশকে বিনয়বাবু শিলিগুড়ির উপকণ্ঠে চাঁদমণি চা বাগান কেনেন। বাম জমানার সূত্রপাতের আগে পর্যন্ত রমরমাই ছিল চাঁদমণির। পেল্লায় বাগানে এক সঙ্গে তিন ধরনের চা পাতা তৈরি হত। ‘গ্রিন টি’, অর্থোডক্স ও সিটিসি। নিজে কারখানায় দাঁড়িয়ে তদারকি করতেন বিনয়বাবু। ১৩ অক্টোবর ৮২ বছর বয়সে শিলিগুড়িতেই প্রয়াত হন বিনয়বাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

uttar karcha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE