Advertisement
E-Paper

এবার পানীয় জলেও মাদক, উদ্বিগ্ন রেল

সহযাত্রীর কাছ থেকে নেওয়া এক ভাঁড় চা বা কোনও খাবারেই শুধু নয়, মাদক বিপদ এবার জলের বোতলেও। মাদক মেশানো খাবার খাইয়ে বেহুঁশ করে যাত্রীর সর্বস্ব লুঠের অভিযোগ ট্রেনের কামরায় আকছার শোনা যায়। কিন্তু নিজের সঙ্গে আনা বোতল থেকে জল খেয়েও অচেতন হয়ে সর্বস্ব খোয়ানোর অভিযোগ ওঠায় উদ্বিগ্ন রেল প্রশাসন এবং রেল পুলিশ কর্তৃপক্ষ।

অনির্বাণ রায়

শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৪৬

সহযাত্রীর কাছ থেকে নেওয়া এক ভাঁড় চা বা কোনও খাবারেই শুধু নয়, মাদক বিপদ এবার জলের বোতলেও। মাদক মেশানো খাবার খাইয়ে বেহুঁশ করে যাত্রীর সর্বস্ব লুঠের অভিযোগ ট্রেনের কামরায় আকছার শোনা যায়। কিন্তু নিজের সঙ্গে আনা বোতল থেকে জল খেয়েও অচেতন হয়ে সর্বস্ব খোয়ানোর অভিযোগ ওঠায় উদ্বিগ্ন রেল প্রশাসন এবং রেল পুলিশ কর্তৃপক্ষ। আসন থেকে উঠে শৌচাগারে গেলে বা ঘুমিয়ে পড়লে সেই অসতর্ক মুহূর্তে সংশ্লিষ্ট যাত্রীর জলের বোতলে মাদক মিশিয়ে দেওয়ার বেশ কয়েকটি অভিযোগ পেয়েছে পুলিশ। সম্প্রতি এমন কয়েকটি ঘটনা নজরে এসেছে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনের রেল পুলিশের। তার পরেই স্টেশন চত্বরে ছড়িয়ে থাকা সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিতে চা, বিস্কুট সহ অনান্য খাবারের সঙ্গে জলের বোতলের ছবি ছাপানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

রেল পুলিশের নজরে আসা ঘটনাগুলি ঠিক কী রকম?

মাস দুয়েক আগে কলকাতা থেকে তিস্তা তোর্সা এক্সপ্রেসে একাই ফিরছিলেন হলদিবাড়ির বাসিন্দা এক স্কুলশিক্ষক। স্কুল সংক্রান্ত একটি কাজে কলকাতার বিকাশ ভবনে গিয়েছিলেন তিনি। জানা গিয়েছে, আত্মীয়ের বাড়ি থেকে খাবার নিয়েই ট্রেনে উঠেছিলেন তিনি। মালদহ পার হওয়ার পরে সেই খাবার খেয়ে, ঘুমিয়ে পড়েন ওই শিক্ষক।

নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে অচৈতন্য অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করেন কয়েকজন সহযাত্রী। রেল পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই শিক্ষক মৌখিক ভাবে ঘটনাটি জানালেও, লিখিত কোনও অভিযোগ দায়ের করেননি। তবে তার সঙ্গে থাকা বোতলের জলের নমুনা পরীক্ষায় মাদক পাওয়া গিয়েছে বলে রেল পুলিশ জানতে পেরেছে। পরে ওই শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে রেল পুলিশ জানতে পারে, রাতে খাওয়ার পরে শৌচাগার থেকে ফিরে জল খেয়ে তিনি শুয়ে পড়েন। তিনি শৌচাগারে যাওয়ার সময়ে তার বোতলের জলে মাদক মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে সন্দেহ রেল পুলিশের।

চলতি মাসেই মরিয়াম কিরো নামে নেপালের এক বাসিন্দাকে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে অচৈতন্য অবস্থায় উদ্ধার করে রেল পুলিশ। পাটনা থেকে নেপালে ফিরছিলেন তিনি। নথর্র্ইস্ট এক্সপ্রেস থেকে তাঁকে উদ্ধার করে তাঁকে হাসপাতালে পাঠিয়েছিল রেল পুলিশ। নেপালের ওই ব্যবসায়ীও একাই ফিরছিলেন। ট্রেনে তিনি নিজের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন বলে দাবি করেছিলেন। তাঁর জলের বোতলেও মাদক পাওয়া গিয়েছিল বলে দাবি করেছে পুলিশ।

নিউ জলপাইগুড়ির রেল পুলিশের আইসি কোকিল রায় বলেন, “শুধু এই দু’টিই নয়, পরপর বেশ কয়েকটি ঘটনা খতিয়ে দেখে জলের বোতলে মাদক মেশানোর বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন তাঁরা। সে কারণেই যাত্রীদের নিজেদের জলের বোতলও সাবধানে রাখার জন্য পরামর্শ দিয়ে বিজ্ঞপ্তি ছাপানো হচ্ছে।”

জলের মধ্যে মাদক মেশানোয়, তুলনায় ঝুঁকি কম বলে দুষ্কৃতীরা এই উপায় বেছে নিচ্ছে বলে তদন্তকারীরা মনে করছেন। খাবারে মাদক মিশিয়ে দিলে, যে খাবার দিচ্ছে তাকে যেমন চিনে রাখা সম্ভব হয়, তেমনিই সংশ্লিষ্ট যাত্রী পুরো খাবার না খেলে হাতেনাতে ধরা পড়ার সম্ভাবনাও থেকে যায়।

সে কারণেই এখন জলের বোতলকেই দুষ্কৃতীরা নিশানা করছে বলে মনে করা হচ্ছে। এতে সংশ্লিষ্ট যাত্রীর সঙ্গে পরিচয় করার প্রয়োজন হচ্ছে না। শুধুমাত্র তাঁর অসতর্কতার সুযোগ নিয়ে বোতলের জলে মাদক মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যাত্রীরা জলের বোতল কামরায় হুকে ঝুলিয়ে, হোল্ডারে রেখে দেন। তাতে কাজ আরও সহজ হয় বলে দাবি।

রেল পুলিশ সূত্রের খবর, সাধারণত মানসিক রোগীকে ঘুম পাড়াতে ব্যবহৃত হওয়া ওষুধ জলে মিশিয়ে দিচ্ছে দুষ্কৃতীরা। ওই ওষুধ জলে গুললেও, রং বা স্বাদের কোনও পরিবর্তন হয় না। খাওয়ার পরে চটজলদি ঘুম চলে আসে এবং অন্তত দেড় থেকে ২ ঘণ্টা এই মাদকের প্রভাব থাকে। এরমধ্যেই কাজ হাসিল করছে দুষ্কৃতীরা। এই ঘটনা ভাবিয়ে তুলেছে রেল কর্তৃপক্ষকেও। উত্তর পূর্ব রেলের নিউ জলপাইগুড়ির সিনিয়র এরিয়া ম্যানেজার পার্থসারথী শীল বলেন, “এই প্রবণতা বাড়ছে। দুষ্কৃতী চক্র ঠেকাতে নাগাড়ে প্রচার এবং নজরদারি চালানো হয়। দুষ্কৃতি চক্রও নতুন ফন্দি আটে। বিষয়টি নজরে আছে। সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিতে জলের বোতলের ছবি ছাপানোর কথা ভাবা হচ্ছে”।

anirban roy siliguri
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy