Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
‘কচুসেদ্ধ ভাত খেয়ে দিন কাটছে’

কাদা ভেঙে শ্রমিকদের ঘরে অধীর

বন্ধ রায়পুর চা বাগানে রবিবার গিয়েও অপুষ্টিজনিত রোগে ভূগে জিতবাহান মুন্ডার বাড়িতে যাননি রাজ্যের দুই মন্ত্রী গৌতম দেব ও জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। সোমবার সেই বাগানে গিয়ে জলকাদার মধ্যে দিয়ে হেঁটে শ্রমিকদের ঘরে ঘরে গেলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা সাংসদ অধীর চৌধুরী। শ্রমিকেরা বললেন, দিনের পর দিন কচু সেদ্ধ দিয়ে তাঁরা ভাত-রুটি খাচ্ছেন।

জিতবাহান মুন্ডার বাড়ির দিকে যাচ্ছেন অধীর। সোমবার রায়পুর চা বাগানে সন্দীপ পালের তোলা ছবি।

জিতবাহান মুন্ডার বাড়ির দিকে যাচ্ছেন অধীর। সোমবার রায়পুর চা বাগানে সন্দীপ পালের তোলা ছবি।

বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৪ ০২:০৮
Share: Save:

বন্ধ রায়পুর চা বাগানে রবিবার গিয়েও অপুষ্টিজনিত রোগে ভূগে জিতবাহান মুন্ডার বাড়িতে যাননি রাজ্যের দুই মন্ত্রী গৌতম দেব ও জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। সোমবার সেই বাগানে গিয়ে জলকাদার মধ্যে দিয়ে হেঁটে শ্রমিকদের ঘরে ঘরে গেলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা সাংসদ অধীর চৌধুরী। শ্রমিকেরা বললেন, দিনের পর দিন কচু সেদ্ধ দিয়ে তাঁরা ভাত-রুটি খাচ্ছেন।

মৃত জিতবাহানের বাড়িতে গিয়ে তাঁর বৃদ্ধ বাবার সঙ্গেও কথা বললেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। ঘরে-ঘরে বিস্তর অভাব-অভিযোগ শুনে, অনটনের ছবি দেখার পরে অধীরবাবু তাঁদের বললেন, “আমাদের পক্ষ থেকে যা করার করব। আপনাদের প্রাপ্য সব সুবিধে আদায় করে দেব। আপাতত ছয় বস্তা চাল, চার বস্তা আলু, পাঁচ বস্তা আটা, রান্নার তেল, গুড়ো দুধ, আমচাল-ডাল এনেছি। তা রেখে যাচ্ছি। আপনারা ভাগ করে নেবেন।”

সেই সঙ্গে অধীরবাবু জলপাইগুড়ির জেলাশাসকের দফতরে গিয়ে স্মারকলিপি দিয়ে বন্ধ বাগান খোলানো ও শ্রমিকদের পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার জোগানো নিশ্চিত করার দাবিও জানিয়েছেন। জেলাশাসকের অফিস থেকে বেরিয়ে অদীরবাবু বলেন, “আমলাশোলে অনাহারে মৃত্যুর সময়ে তৃণমূল নেত্রী সরব হয়েছিলেন। বামেরা অনাহারে মৃত্যুর কথা মানেনি। একন রায়পুরে অনাহার-অপুষ্টিতে মৃত্যু হলেও তা তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী উড়িয়ে দিচ্ছেন। তা হলে রায়পুর বাগানের শ্রমিকরা কী পোলাও-বিরিয়ানি খেয়ে মারা যাচ্ছেন?” যে কথা শোনার পরে বাগানের শ্রমিকরা অনেকেই অধীরবাবুকে হাত ধরে ‘কিছু করার’ অনুরোধ করেছেন। যেমন শ্রমিক বুধন মুণ্ডা অধীরবাবুকে বলেন, “আপনি ঠিক বলেছেন। বাগানে যত লোক মারা যাচ্ছে কেউ না কেয়ে মরেনি বলে বলা হচ্ছে। পোলাও-বিরিয়ানি জীবনে খাইনি। ডিম-মাছের স্বাদ ভুলতে বসেছি। সবজিও পাই না। কচু সেদ্ধ দিয়ে দিনের পর দিন ভাত-রুটি খেলে রোগ তো হবেই।”

এদিনে বিকেলে দলীয় বিধায়ক ও নেতাদের নিয়ে বাগানে পৌঁছন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। গাড়ি থেকে নেমে বাগানে ঢুকতেই দেখেন জলকাদায় ডুবে রয়েছে রাস্তা। জুতো ভিজে গেলেও হাঁটতে থাকেন তিনি। বস্তিতে চলে যান ঘরে ঢুকে মৃত শ্রমিক পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। ভাঙাচোরা ঘরে রোগাটে চেহারারা শিশুদের দেখে থমকে যান। তিনি বলেন, “মন্ত্রীরা আসছেন বস্তিতে যাচ্ছেন না কেন? দেখে যান অনাহার অপুষ্টি আছে কি না? আমি চাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বস্তিতে আসুন। তিনি নিজের চোখে দেখে যান।”

রবিবার রাজ্যের দুই মন্ত্রী প্রশাসনের কর্তাদের নিয়ে বাগানে গেলেও বস্তিতে যাননি। অফিস ঘরের বারান্দায় বসে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে ‘অপুষ্টিতে বাগানে কেউ মারা যায়নি’ দাবি করে ফিরে চলে যান তাঁরা। ওই ঘটনার পরে শ্রমিকরা বেশ হতাশ হয়েছিলেন। তাই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতিও বাগানের অফিস ছুঁয়ে ফিরে চলে যাবেন কি না তা নিয়ে শ্রমিকরা জল্পনা করছিলেন। বিকেল তিনটে নাগাদ জলকাদা ভেঙে তাঁকে বস্তিতে হাঁটতে দেখে তাঁরা অবাক। কিছু বলার জন্য ঘর ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন। রাস্তায় অধীরবাবু কখনও লাফিয়ে আবার কখনও কালো চামড়ার জুতো কাদায় ডুবিয়ে শুক্রবার মৃত জিতবাহান মুন্ডার বাড়িতে জিতবাহানের বাবা ফাগুর কাছে জানতে চান, সরকারি সাহায্য কি পাচ্ছেন? ফাগু বলেন, “রেশনের চাল গম মাসে সাত কেজি ওই চাল গমে সংসার চলে?” ভাতের সঙ্গে কি খান? উত্তর, “কচু-মেটে আলু সেদ্ধ।”

জিতবাহানের বাড়ি থেকে বের হয়ে অধীরবাবু দেখা করেন লীলাবতী মুন্ডার পরিবারের সঙ্গে। সদ্যোজাতের মৃত্যুর পরে লীলাবতী রক্তাল্পতায় ভুগছিলেন। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় গত শুক্রবার। বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি জানতে চান, “কেন শিশু ও শ্রমিকেরা মারা যাচ্ছে?”

পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন দুই শ্রমিক বুধুয়া ওঁরাও এবং সুরজ মুণ্ডা। তাঁদের পাল্টা প্রশ্ন, “খাবার নেই তো বাঁচবে কেমন করে?” অধীরবাবু মাথা নীচু করে এগিয়ে যান। জলকাদায় থইথই রাস্তা দেখে কিছুটা এগিয়ে থমকে দাঁড়ান। ওই সময় নাগরাকাটার দলীয় বিধায়ক জোসেফ মুণ্ডা অন্য রাস্তায় ঘুরে যাওয়ার পরামর্শ দিলে অধীরবাবু বিরক্ত হয়ে বলেন, “কেন ঘুরে যাব? শ্রমিকেরা যেতে পারলে আমি পারব না কেন? আপনাদেরও পারতে হবে।” কথা না বাড়িয়ে প্রদেশ সভাপতির পিছনে কাদা ভেঙে হাঁটতে শুরু করেন বিধায়ক শঙ্কর মালাকার, দলীয় নেতা নির্মল ঘোষ দস্তিদার সহ প্রত্যেকে। বাগানে দাঁড়িয়ে অধীরবাবুর প্রশ্ন, “কোটি কোটি টাকা খরচ করে নবান্ন তৈরি করা হল। মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গে বারবার এসেছেন। বনবাংলোয় বসে ছবি আঁকেন। এই দুর্দশার ছবি চোখে পড়ে না?” তিনি জানান, ৫ জুলাই দলের বিধায়কদের একটি দল বাগানে যাবেন। শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে তথ্য নিয়ে বিধানসভায় তুলবেন।

সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন...

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE