পুর আইনে না-থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে ঋণ হিসাবে কার্নিভ্যাল কমিটিকে ২০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে তা নিয়ে শিলিগুড়িতে বিতর্ক জোরালো হচ্ছে।
প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা মুন্সি নুরুল ইসলাম বিষয়টিকে ‘অপরাধ’ বলে অভিযোগ করেছেন। তাঁরা শীঘ্রই বামেদের তরফে পুর কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে বিশদে ব্যাখ্যা চাইবেন বলে জানিয়েছেন। বিজেপি’র তরফেও পুর কর্তৃপক্ষের জবাব চাওয়া হবে কোন আইনে এ ভাবে টাকা দিতে বলার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এমনকী উত্সবের মধ্যেই তারা পুর দফতরে যাবেন বলে জানিয়েছেন। কংগ্রেস নেতৃত্বও সমালোচনা করেছেন গোটা ঘটনার। পুর কমিশনার সোনম ওয়াংদি ভুটিয়া বলেন, “পুরসভার তহবিল থেকে শিল্পীদের অগ্রিম দেওয়ার জন্য ওই টাকা নেওয়া হয়েছিল। কার্নিভ্যাল কমিটির তরফে ওই টাকা পুরসভার খাতে দ্রুত ফিরিয়ে দেওয়া হবে।”
পুর আইনে কী বলা রয়েছে? রাজ্য পুর আইনে অর্থ বিষয়ক ব্যাপারে ৬৭ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে বাজেটে নেই এমন কোনও খরচ করা যাবে না। বাজেটে সংশ্লিষ্ট খাতে অর্থ বরাদ্দ থাকতে হবে। তবে কোনও রোগের প্রাদুর্ভাব, করের টাকা ফেরত, ঠিকাদার, বা ব্যক্তিবিশেষের থেকে ভুলবশত কোনও টাকা নেওয়া হয়েছে, জনস্বার্থে জরুরি ভিত্তিতে রাজ্য সরকার কোনও কাজ করতে চায়, নিয়ম মেনে কোনও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার মতো বিষয়ে বাজেটে উল্লেখ না থাকলেও পুর কমিশনার মেয়র পারিষদের বৈঠকে তা পেশ করবেন। সেখানে সিদ্ধান্ত করে দেওয়া যেতে পারে বলে ৬৮ নম্বর ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে। ৯৮ নম্বর ধারার ‘ফোর সি’-তে বলা হয়েছে পুরসভার তহবিল মেলা বা প্রদর্শনীর জন্য আয়োজক বা কোনও সংস্থাকে দেওয়া যেতে পারে। বিরোধীদের দাবি, কিন্তু এমন কোনও জায়গায় বলা নেই পুরসভা মেলা বা প্রদর্শনীর জন্য কোনও আয়োজক সংস্থাকে ঋণ দিতে পারবে।
ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক অনিরুদ্ধ বসু বলেন, “একদিকে বলা হচ্ছে, পুরসভার কার্নিভালে সহযোগিতা করছে। কিন্তু, পুরসভার প্রশাসক বোর্ড মেলা কমিটিকে ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। পুর বিধিতে ঋণ দেওয়ার কোনও জায়গা নেই। হয় পুরকর্তারা কোন আইনে দেওয়া হয়েছে তা প্রকাশ্যে ঘোষণা করুন। না হলে ভুল শুধরে নিন।”
কংগ্রেসের দার্জিলিং জেলা সভাপতি তথা বিধায়ক শঙ্কর মালাকার মনে করেন, পুর নির্বাচন করে নির্বাচিত বোর্ডের হাতে দায়িত্ব দেওয়া উচিত ছিল। তাঁর অভিযোগ, “গৌতমবাবু নিজের ভাবমূর্তি তৈরি করতে কার্নিভ্যাল করতে চাইছেন। ওই কানির্ভ্যালকে ব্যবহার করে পুর নির্বাচনের রাজনীতিতে এগিয়ে থাকতে চাইছেন। তিনি পুরসভা জবর দখল করেছেন। নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না-করে পুরসভাকে দিয়ে উত্সব করানো হচ্ছে।” তাঁর দাবি, “মন্ত্রীর বোঝা উচিত কার্নিভ্যালের চেয়ে নির্বাচিত পুরবোর্ড আগে দরকার। না হলে বাসিন্দারা সুষ্ঠু নাগরিক পরিষেবা পাবেন না।” ওই অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে তাঁরা আন্দোলন করবেন বলে দাবি করেছেন শঙ্করবাবু। তবে কবে, কী ভাবে কী আন্দোলন করবেন তা অবশ্য স্পষ্ট করে শঙ্করবাবু জানাতে পারেননি।
কংগ্রেসের তরফে এ ব্যাপারে পদক্ষেপের কথা এখনই জানানো সম্ভব না হলেও বিজেপি ও কংগ্রেসের তরফে পুর কর্তৃপক্ষের কাছে তারা বিষয়টি নিয়ে শীঘ্রই যাবেন বলে জানান। বিজেপি’র জেলা সভাপতি রথীন্দ্র বসু বলেন, “উত্সবের মধ্যেই আমরা পুর কর্তৃপক্ষের কাছে গিয়ে এ ব্যাপারে জানতে চাইব।” শুধু তা-ই নয়, রথীনবাবু গোটা বিষয়টি নিয়ে পুর দফতরে জানাবেন বলেছেন। তিনি বলেন, “আগামী দিনে ৪৭টি ওয়ার্ডের নানা মেলা, উত্সবের ব্যাপারে যদি নাগরিকদের কোনও কমিটি ঋণ চায় তা হলে পুরসভা তা দিতে পারবে? যদি না পারে, তা হলে একই শহরের নাগরিকদের সঙ্গে দু-ধরনের আচরণের অভিযোগ উঠবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy