সাফল্যের উচ্ছ্বাস। একসঙ্গে টিম করোনেশন। ছবিটি তুলেছেন তরুণ দেবনাথ।
‘টিম করোনেশন’। উচ্চ মাধ্যমিকে ফের রাজ্যের মেধা তালিকায় বিদ্যালয়ের তিন জন ছাত্র স্থান পাওয়ার পরে উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ করোনেশন স্কুলের প্রধান শিক্ষক সাফল্যের কৃতিত্ব দিলেন গোটা ‘টিম’কেই। ‘টিম’-এ কে কে আছেন? প্রধান শিক্ষক শুভেন্দু মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “পড়ুয়া, অভিভাবক এবং শিক্ষকএই তিন বিভাগকে নিয়েই টিম করোনেশন।”
গত দু’দশক ধরে এই স্কুলের ছাত্রেরা উচ্চ মাধ্যমিকের মেধা তালিকায় স্থান পাচ্ছে। ব্যতিক্রম ছিল শুধু গত বছরটাই। এ বছর তা সুদে আসলে পূরণ করেছে ‘টিম করোনেশন’। মেধা তালিকায় স্কুলের তিন জন ছাত্র। প্রথম অনির্বাণ সাহা। সৌমিক দেব এবং প্রীতম দাস ষষ্ঠ এবং সপ্তম। স্কুলের সার্বিক ফলও যথারীতি ভাল। তবে স্কুলের ইতিহাসে এই প্রথম কোনও ছাত্র মেধা তালিকায় শীর্ষস্থান দখল করল।
রায়গঞ্জের বন্দর সাহাপাড়া এলাকার বাসিন্দা অনির্বাণ পেয়েছে ৪৭৮ নম্বর। অনির্বাণের উপরে স্কুলের সকলেরই ভরসা ছিল। কেননা, ২০১২ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষাতেও তিনি রাজ্যে নবম স্থান দখল করেছিলেন। অনির্বাণ বাংলায় ৯০, ইংরেজিতে ৯৮, জীববিদ্যায় ৯৫, রসায়নে ৯৬, ফিজিক্সে ৯৯, অঙ্কে ৭৮ এবং পরিবেশ বিদ্যায় ৮৭ নম্বর পেয়েছেন। অনির্বাণের বাবা অসীম সাহা জীবনবিমা সংস্থার কর্মী। মা মণিকাদেবী গৃহবধূ। অনির্বাণ জানান, তিনি ৬ জন শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট টিউশন পড়তেন। অবসর সময়ে গান শুনতেন। টিভিও দেখতেন। কখনই ঘড়ির সময় ধরে পড়াশুনা করতেন না। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ের সহায়ক বই নিয়মিত পড়তেন। ভবিষ্যতে তিনি চিকিৎসক হতে চান। তাঁর কথায়, “ভাল ফল করার লক্ষ্য ছিল। তবে প্রথম স্থান দখল করতে পারব, এটা কল্পনাও করতে পারিনি। বাবা, মা শিক্ষকদের সহযোগিতা ছাড়া এমন ফল করতে পারতাম না।”
রায়গঞ্জের সুভাষগঞ্জ পীরস্থান মোড় এলাকার বাসিন্দা সৌমিকের প্রাপ্ত নম্বর ৪৭১। সৌমিক বাংলায় ৮৮, ইংরেজিতে ৯৪, জীববিদ্যায় ৯৯, রসায়নে ৯৫, ফিজিক্সে ৯৫, অঙ্কে ৭৪ এবং পরিবেশবিদ্যায় ৮৭ নম্বর পেয়েছেন। সৌমিকের বাবা তাপস দেব সেচ দফতরের কর্মী। মা অর্পিতাদেবী সুভাষগঞ্জ হাইস্কুলের ইতিহাস বিষয়ের আংশিক সময়ের শিক্ষিকা। সৌমিক জানান, তিনি ৮ জন শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট টিউশন পড়তেন। অবসর সময়ে গান গাইতে ও শুনতে ভালবাসেন। টিভি দেখেন। দিনে ৯ ঘন্টা পড়াশুনা করতেন। পাঠ্যবই ছাড়া সহায়ক বই নিয়মিত পড়তেন। তিনিও ভবিষ্যতে চিকিৎসক হতে চান।
রায়গঞ্জের বীরনগর এলাকার বাসিন্দা প্রীতম ৪৭০ নম্বর পেয়েছেন। তিনি বাংলায় ৮৬, ইংরেজিতে ৯৫, জীববিদ্যায় ৯৯, রসায়নে ৯২, ফিজিক্সে ৯৮, অঙ্কে ৫৭ ও পরিবেশবিদ্যায় ৮৭ নম্বর পেয়েছেন। প্রীতমের বাবা প্রদীপ দাসের রুপাহারে চালকলের ব্যবসা রয়েছে। মা ঝুমাদেবী ইটাহার ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের স্বাস্থ্যকর্মী। তিনিও ৮ জন গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তেন। অবসর সময়ে বন্ধুদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলতেন। পরীক্ষার আগে দিনে তিনি প্রায় ১০ ঘন্টা পড়াশুনা করলেও সারা বছর ঘড়ি ধরে পড়াশুনা করতেন না। বিভিন্ন বিষয়ের পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি শিক্ষকদের বুঝিয়ে দেওয়া পড়া তিনি আলাদা করে খাতায় লিখে তা বোঝার চেষ্টা করতেন। প্রীতম বলেন, “বাবা ও মায়ের অনুপ্রেরণা, শিক্ষকদের সহযোগিতা ও আমার পরিশ্রম মিলেই ভাল ফল হয়েছে।”
করোনেশন স্কুলের সার্বিক ফলও ভাল হয়েছে। স্কুল সূত্রেই জানা গিয়েছে, ২৬৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৯০, ৮০ ও ৬০ শতাংশের উপরে নম্বর পেয়েছেন যথাক্রমে ৯, ৯১ এবং ২৩৪ জন পড়ুয়া। কলাবিভাগে সর্বোচ্চ নম্বর ৪২৯ পেয়েছেন রত্না বর্মন। বাণিজ্য বিভাগে সর্বোচ্চ নম্বর ৪৬২ পেয়েছেন নারায়ণ অগ্রবাল। স্কুলের বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষক তিলকতীর্থ ভৌমিকের দাবি, বাণিজ্য বিভাগে নারায়ণ রাজ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছেন।
স্কুলের পরিচালন সমিতির সম্পাদক তথা রায়গঞ্জ পুরসভার চেয়ারম্যান মোহিত সেনগুপ্ত জানান, খুব শীঘ্রই পুরসভার তরফে কৃতীদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে। রাজ্যের পরিষদীয় সচিব অমল আচার্য এবং রায়গঞ্জের সাংসদ মহম্মদ সেলিম অনির্বাণ, সৌমিক ও প্রীতমকে ফোন করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। ডিওয়াইএফের জেলা সম্পাদক সুরজিৎ কর্মকারের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল কৃতীদের বাড়িতে গিয়ে এ দিন ফুল, মিষ্টি-সহ বিভিন্ন উপহার সামগ্রী দিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy