Advertisement
০২ মে ২০২৪

কর্মী আসেননি, তাই অফিস বন্ধ আগেই

নির্দিষ্ট সময়ে কর্মীরা উপস্থিত না-হওয়ায় ‘সাটার’ নামিয়ে সরকারি অফিস বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিএসএনএল-এর অফিসার-কর্মীদের একাংশের বিরুদ্ধে। শুক্রবার সকালে এমনই বেনজির ঘটনা ঘটেছে শিলিগুড়িতে বিএসএনএল-এ জেনারেল ম্যানেজারের অফিসের ‘কাস্টমার কেয়ার সেন্টার’-এ। অভিযোগ, বিএসএনএল-এর শিলিগুড়ির জেনারেল ম্যানেজার অরুময় ডাকুয়াকে গ্রাহকদের তরফে বারবার বিষয়টি জানানো হলেও বেলা একটা পর্যন্ত কোনও সদর্থক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টা। শিলিগুড়িতে এক জন অফিসারের নির্দেশে এভাবে অর্ধেক সাটার নামিয়ে কাস্টমার কেয়ারের সামনে দাঁড়িয়ে বিএসএনএল কর্মী। নিজস্ব চিত্র।

শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টা। শিলিগুড়িতে এক জন অফিসারের নির্দেশে এভাবে অর্ধেক সাটার নামিয়ে কাস্টমার কেয়ারের সামনে দাঁড়িয়ে বিএসএনএল কর্মী। নিজস্ব চিত্র।

কিশোর সাহা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:৩৮
Share: Save:

নির্দিষ্ট সময়ে কর্মীরা উপস্থিত না-হওয়ায় ‘সাটার’ নামিয়ে সরকারি অফিস বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিএসএনএল-এর অফিসার-কর্মীদের একাংশের বিরুদ্ধে। শুক্রবার সকালে এমনই বেনজির ঘটনা ঘটেছে শিলিগুড়িতে বিএসএনএল-এ জেনারেল ম্যানেজারের অফিসের ‘কাস্টমার কেয়ার সেন্টার’-এ। অভিযোগ, বিএসএনএল-এর শিলিগুড়ির জেনারেল ম্যানেজার অরুময় ডাকুয়াকে গ্রাহকদের তরফে বারবার বিষয়টি জানানো হলেও বেলা একটা পর্যন্ত কোনও সদর্থক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

শেষ পর্যন্ত, গ্রাহকদের পক্ষ থেকে বিএসএনএল-এর চিফ জেনারেল ম্যানেজার, চেয়ারম্যান কাম ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও কেন্দ্রীয় টেলি যোগাযোগ মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদকেও জানিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে। দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া বলেন, “ওই অফিসের পরিষেবা নিয়ে অভিযোগ নতুন কিছু নয়। আমি বিএসএনএল-এর সিএমডিকে জানিয়েছি। গ্রাহকদের হয়রানি কখনও বরদাস্ত করা যাবে না।” বিএসএনএল-এর শিলিগুড়ির জিএম অবশ্য সব খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।

ঘটনার সূত্রপাত বেলা ১০টা নাগাদ। ওই সময়ে টেলিফোন বিল জমা দিতে ওই সেন্টারে যান অন্তত ২০ জন গ্রাহক। যেখানে ৩টি কাউন্টার রয়েছে। যাঁদের মধ্যে অন্তত ৮ জন অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ নাগরিক ছিলেন। যাঁদের পক্ষে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। বেলা ১১টা পর্যন্ত অপেক্ষার পরেও কোনও কর্মী সেখানে হাজির হননি। কাউন্টারের ওপারের এক কর্মীকে জানালে তিনি পরামর্শ দেন, সংশ্লিষ্ট অফিসারের সঙ্গে কথা বলতে। গ্রাহকদের একাংশ ওই অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি সেখানে পৌঁছে একাধিক কর্মীকে ফোন করে কখন অফিসে আসবেন তা জানতে চান। এর পরে একটা সময়ে তিনি যুক্তি দেন, যে কর্মীর কাউন্টারের বসার কথা, তিনি দুর্ঘটনায় পড়ায় একটু দেরি হবে। গ্রাহকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে দ্রুত বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। ইতিমধ্যে গ্রাহকদের ক্ষোভের বিষয়টি জেনারেল ম্যানেজারকে জানানো হয়। সেই সময়ে জিএমের তরফে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু, বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদও কেউনা-আসায় গ্রাহকদের ক্ষোভ চরমে পৌঁছয়।

ওই সময়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএসএনএল অফিসারকে গ্রাহকদের উদ্দেশ্যে চেঁচিয়ে বলতে শোনা যায়, “আপনার এখান থেকে চলে যান। টেলিফোনে এক্সচেঞ্জ ভবনে বিল জমা দিন। এখানকার কর্মীর আসতে দেরি হবে। কিছু করার নেই।” তাতে উপস্থিত গ্রাহকেরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। এর পরে ওই অফিসার এক কর্মীকে নির্দেশ দেন, ‘একজন এখনই সাটার নামিয়ে দাও। আরেকজন গেটে দাঁড়িয়ে থেকে গ্রাহকদের বলে দাও, অন্য অফিসে বিল জমা দিতে যেতে হবে।’ মুহূর্তের মধ্যে ওই কর্মী কাস্টমার কেয়ার সেন্টারের ‘সাটার’ অর্ধেক নামিয়ে দেন। অগত্যা দীর্ঘ অপেক্ষার পরে গ্রাহকরা অন্যত্র যেতে বাধ্য হন।

এই ঘটনার পরে গ্রাহকদের তরফে প্রশ্ন তোলা হয়, কোনও কর্মী অনুপস্থিত থাকলে কাস্টমার কেয়ারের সাটার নামিয়ে দেওয়ার অধিকার কী ওই অফিসারের রয়েছে? তা হলে সরকারি অফিস বিনা নোটিশে বন্ধ করে দেওয়ার জন্য ওই অফিসারের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না সেই প্রশ্নে ক্ষোভ বাড়তে থাকে। কিছুক্ষণ বাদে ওই সেন্টারের সামনে সাদা কাগজে ‘লিঙ্ক ফেলিওর’ লিখে দেওয়া হয়। কিন্তু, বিএসএনএল সূত্রের খবর, শিলিগুড়িতে এদিন কোনও বিএসএনএল অফিসে বিল আদানপ্রদানের পরিষেবায় ‘লিঙ্ক ফেলিওর’ হয়েছে বলে কোনও অভিযোগ নথিভুক্ত হয়নি।

এর পরেই গ্রাহকদের সঙ্গে মিথ্যাচারণের অভিযোগে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের দাবিতে সরব হন গ্রাহকদের অনেকেই। সেখানে দাঁড়িয়ে বিএসএনএল-এ অফিসার-কর্মীদের একাংশও গ্রাহকদের হেনস্থার অভিযোগের তদন্ত করে ব্যবস্থা করার পক্ষে মত প্রকাশ করেন।

বেলা ১টা নাগাদ ওই কাস্টমার কেয়ার সেন্টারে ফের বিল নেওয়া শুরু হয়। গ্রাহকদের কয়েকজন জানান, গ্রাহকদের হয়রান করা ও তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও মিথ্যাচারণের অভিযোগের তদন্ত করে ব্যবস্থা নেএওয়া না হলে তাঁরা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হবেন। বিজেপির দার্জিলিং জেলা সভাপতি রথীন বসু জানান, তিনি গোটা বিষয়টি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের দাবি জানিয়ে কেন্দ্রীয় টেলি যোগাযোগ মন্ত্রকে চিঠি দেবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kishore saha siliguri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE