বয়স প্রায় এক দশক হতে চললেও হাল ফেরেনি জলপাইগুড়ি চা নিলাম কেন্দ্রের। ‘ভ্যাট’ মুকুবের সুযোগ না পেয়ে আসছেন না ক্রেতারা। জেলার চা উৎপাদকরাও হচ্ছেন শিলিগুড়িমুখী। ফলে, বছরের নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ঝাঁপ বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। এ বার নভেম্বর মাসে শেষ নিলাম হয়েছে। নিলাম কেন্দ্রের সচিব নিরঞ্জনকুমার বসু বলেন, “জানুয়ারি মাস থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত চা শিল্পের ‘লিন পিরিয়ড’ পাতা উৎপাদন বন্ধ থাকে। ওই কারণে নিলামের কাজও বন্ধ আছে। চায়ের যোগান কমে যাওয়ায় এ বার নভেম্বর মাসের পরে আর কাজ হয়নি। ফের জুন মাস থেকে নিলাম শুরু হবে।” চা নিলাম কেন্দ্র সূত্রে জানা গিয়েছে, গত নভেম্বর মাস পর্যন্ত এখানে চা এসেছে ৮ লক্ষ ৪ হাজার ৭৬৫ কেজি। নিলাম হয়েছে ৪ লক্ষ ৬১ হাজার ১৪৫ কেজি। দাম মিলেছে কেজি প্রতি ৯৪ টাকা ২ পয়সা। চা বণিকসভার কর্তারা জানান, দাম ভাল মিললেও বাজার জমছে না।
প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাস থেকে চায়ের আমদানি কমতে শুরু করে। এ বার ওই মাসে ১ লক্ষ ৫১ হাজার ৯০৮ কেজি, অক্টোবর মাসে ৭০ হাজার ৮৮০ কেজি ও নভেম্বর মাসে ১০ হাজার ১৭২ কেজি চা এসেছে। শুধু চায়ের আমদানি নয়, ক্রেতা ও বিক্রেতাদের করুণ উপস্থিতির হার জলপাইগুড়ি চা নিলাম কেন্দ্রের জীর্ণ দশাকে আরও স্পষ্ট করছে। ওই সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১২-২০১৩ সালে ক্রেতা এসেছে ১০২ জন। বিক্রেতা মাত্র ৩৩ জন।
কেন এমন করুণ দশা? চা উৎপাদক সংস্থার কর্তারাও মনে করছেন, ওই নিলাম কেন্দ্র ভাল ভাবে চলার কথা ছিল। কারণ, জলপাইগুড়ি জেলাতেই রয়েছে ১২০টি ‘বটলিফ’ ফ্যাক্টরি। সেখানে বছরে গড়ে ৪০ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হচ্ছে। এ ছাড়াও তো আছে বড় চা বাগানগুলির নিজস্ব কারখানায় তৈরি চা। কিন্তু, ওই চা জেলার নিলাম কেন্দ্রে না পৌঁছে চলে যাচ্ছে শিলিগুড়িতে কেন?
বটলিফ ফ্যাক্টরি মালিক সংগঠনের সভাপতি সঞ্জয় ধানুটিয়া বলেন, “২০০৫ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি নিলাম কেন্দ্র খোলার সময় আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, ক্রেতাদের কয়েক বছর ভ্যাট ছাড় দেওয়া হবে। সেটা আজও হয়নি। ক্রেতারা মূলত শিলিগুড়িতে থাকেন। একে ভ্যাট ছাড়ের সুযোগ নেই। তার উপরে রাস্তা খারাপ। পরিবহণ খরচ বেড়েছে। ওই কারণে ক্রেতারা জলপাইগুড়িতে যেতে রাজি হচ্ছে না। ক্রেতা না থাকায় আমরাও চা পাঠানোর ঝুঁকি নিতে পারছি না।” একই বক্তব্য জেলা ক্ষুদ্র চা চাষি সমিতির সম্পাদক বিজয়গোপাল চক্রবর্তীরও। নবজাগরণ ক্ষুদ্র চা চাষি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কর্ণধার দিলীপ দাস মনে করেন, ক্রেতাদের কাছ থেকে যে ১ শতাংশ হারে ভ্যাট কেটে নেওয়া হয় সেটা মুকুব করা হলে চায়ের আমদানি দ্বিগুণের বেশি হবে। তিনি বলেন, “বেশি নয়, তিন বছর ওই সুযোগ দেওয়া হলে নিলাম কেন্দ্র চাঙ্গা হয়ে ওঠার সুযোগ পাবে।”
একই আশার সুর নিলাম কেন্দ্রের সচিবের গলায়। তিনি বলেন, “ভ্যাট মুকুব করার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সেটা হলে অনেক সমস্যা মিটবে।” তিনি জানান, ফের জুন মাসে নিলামের কাজ শুরু হবে। এপ্রিল মাসে সভা ডাকার প্রস্তুতি চলছে। সব ঠিকঠাক থাকলে ২৫ এপ্রিল ওই সভা হতে পারে বলে নিলাম কেন্দ্র সূত্রের খবর। সচিবের কথায়, “আশা করছি ভাল ফল মিলবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy