গৃহহারা। ধূপগুড়ি ব্লকের ভুটান সীমান্তের চামুর্চি সহ সংলগ্ন এলাকায় চার দিকেই এই দৃশ্য। রাজকুমার মোদকের তোলা ছবি।
মাত্র পনেরো মিনিটের ঝড়ে লন্ডভন্ড হল ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ এলাকা। বাড়িতে চাপা পড়ে বীরপাড়া-মাদারিহাট ব্লকের লঙ্কাপাড়া গ্রামে এক একাদশ শ্রেণির ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ধূপগুড়ি ও বীরপাড়া-মাদারিহাট ব্লকের মোট ৫ জন জখম হয়েছেন। চার জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হলেও লঙ্কাপাড়া গ্রামের গুরুতর জখম এক যুবককে উত্তরবঙ্গ মেডিকাল কলেজে ভর্তি করানো হয়েছে। লঙ্কাপাড়ার ওই মৃত পড়ুয়ার নাম মনু ঠাকুর (১৬)। রবিবার সন্ধ্যায় বাড়িতে গাছ ভেঙে পড়ায় চাপা পড়ে মারা যায় মনু। গভীর রাতে মনুর দেহটি উদ্ধার করা হয়। সোমবার দেহটি আলিপুরদুয়ার মহকুমা হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। বীরপাড়া-মাদারিহাটের বিডিও পেম্বা শেরপা বলেন, “মৃত ছাত্রের পরিবারকে দুই লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ভুটান সীমান্ত এলাকার গ্রামগুলিতে। রিপোর্ট জেলাস্তরে পাঠানো হচ্ছে।”
সরকারি হিসাবে শুধুমাত্র ধূপগুড়ি ব্লকের ভুটান সীমান্ত চামূর্চি সহ সংলগ্ন চারটি চা বাগান এলাকায় ৭৬০০ কাঁচা বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বীরপাড়া ব্লকের ৩০০টি বাড়ির ক্ষতি হয়েছে। ত্রাণ হিসাবে দুই ব্লকে মাত্র ২০০০ ত্রিপল ছাড়া খাদ্য সামগ্রী বা ত্রাণ শিবির করা হয়নি বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। খোলা আকাশের নিচেচ বা অন্যের ঘরে বহু মানুষজনকে আশ্রয় নিতে হয়েছে। প্রশাসন পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রিপলের ব্যবস্থা না করায় ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। আলিপুর আবহাওয়া দফতর থেকে ডুয়ার্সে আগামী ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়া দফতরের ডিরেক্টর গকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, “ডুয়ার্সের উপর ঘূর্নাবর্ত রয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় জোর বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ঝড়ের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।”
গাছ পড়ে ব্যাহত পরিষেবা ফেরাতে কাজে ব্যস্ত বিদ্যুৎ পর্ষদের কর্মীরা।
সোমবার চালসা এলাকায় সব্যসাচী ঘোষের তোলা ছবি।
রবিবার ঝড়ে ডুয়ার্সের দলমোড়, রেতি-সহ খুট্টিমারি জঙ্গলে দেড় হাজার গাছ উপড়ে পড়ে যায়। জলপাইগুড়ির ডিএফও বিদ্যুৎ সরকার জানান, ঝড়ের দাপটে খুট্টিমারি জঙ্গল লাগোয়া নাথুয়া-গয়েরকাটা রাজ্য সড়কের উপর কয়েকশ গাছ ভেঙে পড়ে। রাতে দ্বিতীয় দফার ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় খুট্টিমারি জঙ্গল। সে সময় রাজ্য সড়ক ধরে বানারহাট থেকে বরযাত্রী বোঝাই একটি বাস নাথুয়ায় ফেরার সময় ওই বাসের উপর গাছ ভেঙে পড়ে। একের পর এক গাছ ভেঙে পড়ায় ৫০ জন বরযাত্রী বাসে আটকে পড়েন। তাদের মধ্যে কয়েকজন মহিলা ও শিশুও ছিলেন। রাতভর তাঁদের ওই বাসের মধ্যেই কাটাতে হয়। ভোর হওয়ার পর তাঁরা হেঁটে বাড়ি ফেরেন। বরযাত্রীদের মধ্যে সোমরা ওঁরাও বলেন, “রাতে বিয়ে শেষে আমরা বাড়ি ফিরছিলাম। জঙ্গলের পথে বাস চলছিল। আচমকা ঝড় শুরু হয়। একের পর এক গাছ ভেঙে পড়তে থাকে। সারা রাত আতঙ্কে কাটে।” সোমবার দুপুরে বন দফতর রাস্তার উপর পড়ে থাকা গাছগুলি সরিয়ে ফেলার পর সেখানে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। ঝড়ে প্রচুর বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ায় ফালাকাটা, বীরপাড়া, বানারহাট, মাদারিহাট এবং ধূপগুড়ি-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় পরিষেবা ব্যাহত হয়ে পড়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy