Advertisement
E-Paper

ঘোষণা শুনেই শুরু হল উৎসব

প্রবল গরমে সকালে রাস্তাঘাট ছিল প্রায় সুনসান। কিন্তু শুক্রবার বেলা গড়াতেই বিধানসভায় আলিপুরদুয়ারকে আলাদা জেলা ঘোষণা করার কথা ছড়িয়ে পড়তে মনমেজাজ বদলে গেল শহরের। কিছুক্ষণের মধ্যেই পাল্টে গেল শহরের চেহারা। গনগনে রোদ উপেক্ষা করে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন অনেকে। কোথাও আবির পাওয়া যাবে? কোথায় মিলবে বাজি-পটকা? ঘন্টাখানেকের মধ্যেই আয়োজন সম্পূর্ণ। আবির উড়িয়ে, পটকা ফাটিয়ে, একে অন্যকে মিষ্টি খাইয়ে উৎসবে মেতে উঠল গোটা আলিপুরদুয়ার।

নমিতেশ ঘোষ ও নারায়ণ দে

শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৪ ০২:২২
নতুন জেলা হচ্ছে আলিপুরদুয়ার। খবর জানতে পেরেই পথে নেমে উচ্ছ্বাসে মাতলেন শহরবাসী। শুক্রবার ছবিটি তুলেছেন নারায়ণ দে।

নতুন জেলা হচ্ছে আলিপুরদুয়ার। খবর জানতে পেরেই পথে নেমে উচ্ছ্বাসে মাতলেন শহরবাসী। শুক্রবার ছবিটি তুলেছেন নারায়ণ দে।

প্রবল গরমে সকালে রাস্তাঘাট ছিল প্রায় সুনসান। কিন্তু শুক্রবার বেলা গড়াতেই বিধানসভায় আলিপুরদুয়ারকে আলাদা জেলা ঘোষণা করার কথা ছড়িয়ে পড়তে মনমেজাজ বদলে গেল শহরের। কিছুক্ষণের মধ্যেই পাল্টে গেল শহরের চেহারা। গনগনে রোদ উপেক্ষা করে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন অনেকে। কোথাও আবির পাওয়া যাবে? কোথায় মিলবে বাজি-পটকা? ঘন্টাখানেকের মধ্যেই আয়োজন সম্পূর্ণ। আবির উড়িয়ে, পটকা ফাটিয়ে, একে অন্যকে মিষ্টি খাইয়ে উৎসবে মেতে উঠল গোটা আলিপুরদুয়ার।

আলিপুরদুয়ার শহরের মাধব মোড় থেকে সংকোশ গ্রাম--সর্বত্র একই দৃশ্য। চা বাগানের আদিবাসীরা গান গেয়ে নেচেছেন। পাঁচকেলগুড়ি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ বর্মন বলেন, “বহু দিনের দাবি পূরণ হল। তাই আমরা উৎসবে মেতেছি।”

সত্তরের দশক থেকে আলিপুরদুয়ারকে জেলা ঘোষণার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। জলপাইগুড়ি জেলার মহকুমা আলিপুরদুয়ারের পাঁচটি ব্লক নিয়ে মূলত ওই দাবি তোলা হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের যুক্তি ছিল, কুমারগ্রাম, কালচিনি, মাদারিহাট, ফালাকাটা এবং আলিপুরদুয়ার ১ ও ২ নম্বর ব্লকের বাসিন্দাদের জেলা শহর জলপাইগুড়িতে গিয়ে প্রশাসনিক কাজকর্ম করতে অসুবিধে হয়। কুমারগ্রামের সাকোয়াঝোড়ার মতো বেশ কিছু জায়গা থেকে জেলা সদর জলপাইগুড়িতে গেলে কাজ সেরে সে দিনই বাড়ি ফেরা অনেক সময় সম্ভব হয় না। যে কারণে আলাদা জেলার দাবি ক্রমশ গুরুত্ব পাচ্ছিল।

জেলা ঘোষণায় কী বলছেন আলিপুরদুয়ারবাসী। সবিস্তার জানতে ক্লিক করুন।

চল্লিশ বছরের আন্দোলনের পরে এ বার সেই দাবি মেনে জেলা গঠনে সরকারি সিলমোহর পড়তে আলিপুরদুয়ারে তো খুশির বান ডাকবেই। আলিপুরদুয়ার মেন রোড আবিরের সবুজে সবুজ। নিউ টাউন, পুরানবাজার দিয়ে ব্যান্ড পার্টি সঙ্গে নিয়ে মিছিল শুরু হয়। মিছিল যত এগোতে থাকে তত বড় হতে থাকে। টাউন ব্লকের তৃণমূল নেতা আশিসকুমার দত্ত, মিহির দত্ত থেকে সাধারণ বাসিন্দা অভিজিৎ রায় সকলেই পা মেলান তাতে। আলিপুরদুয়ার কলেজের একদল ছেলে বাইক মিছিল বের করে। বীরপাড়া রোড হয়ে শামুকতলা রোড হয়ে আলিপুরদুয়ার মেন রোড হয়ে মিছিল শহরের সর্বত্র ঘুরেছে। সবুজ আবির নিয়ে রাস্তায় পথচলতি মানুষকে দাঁড় করিয়ে নতুন জেলার অভিনন্দন জানিয়ে কারও মাথায় দেওয়া হয় টিপের তিলক। কারও মুখে মাখানো হয় আবির। আলাদা জেলা নতুন আশার পথও খুলে দিয়েছে। মুখে সবুজ আবির মেখে তৃতীয় বর্ষের ছাত্র রানা বিশ্বাস বলেন, “উচ্চশিক্ষার জন্য আমাদের সবাইকে বাইরে যেতে হয়। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে সবাই সুযোগ পান না। এ বার আলিপুরদুয়ার জেলা হয়েছে, আমরা একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশাও করছি।” স্থানীয় প্রাক্তন ক্রীড়াবিদ সোমশঙ্কর দত্ত বলেন, “খেলাধুলোর ক্ষেত্রে আলিপুরদুয়ার মহকুমা জলপাইগুড়িতে দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত ছিল। এবার আলাদা জেলা হওয়ায় খেলাধুলোর মান বাড়বে।”

আলিপুরদুয়ার কোর্টের কাছে একদল বাসিন্দা আবির খেলে মিষ্টি বিলি করেন। সামিল হন মহিলারাও। গৃহবধূ মৌসুমি বাগচি বলেন, “খবরটা শুনে সোজা চলে এসেছি। পথ চলতি মানুষকে মিষ্টি বিলি করলাম।” তাঁর কথায়, “আমি নিজে তৃণমূল করি ঠিকই, তা বলে আজ কে কোন দল করে, সেটা ভাবার সময় নেই।”

উচ্ছ্বাসের রং। আলিপুরদুয়ারে।

আনন্দিত আইনজীবীরাও। কোর্ট চত্বরে একটি কৃষ্ণচূড়া গাছের নীচে এ দিন তাঁদের অনেকে জড়ো হয়েছিলেন। আইনজীবীরা একে অপরকে রসগোল্লা খাইয়ে মিষ্টি মুখ করান। আলিপুরদুয়ার মহকুমা আদালত এ বার জেলা আদালতের শিরোপা পাবে। বর্ষীয়ান আইনজীবী সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “এমনিতে আমরা জেলা আদালতের সমস্ত সুবিধেই এই আদালতে পাই। যেটুকু বাকি ছিল, তাও এ বার এখানেই পাওয়া যাবে।”

শামুকতলা রোডের সুভাষপল্লি এলাকায় বাসস্ট্যান্ডের কাছেই একদল তরুণ আনন্দে মেতেছে বোমা ফাটিয়ে। এলাকার বাসিন্দা হারাধন দে, নয়ন সরকাররা জানালেন, মহকুমা হাসপাতাল এখন জেলা হাসপাতাল হবে। অনেক সুযোগ সুবিধে বাড়বে। শয্যা থেকে শুরু করে চিকিৎসা ব্যবস্থাও অনেক আধুনিক হবে। এটা এলাকাবাসীর কাছে খুবই আনন্দের।

কুমারগ্রাম চা বাগানেও অনেককে আবির মেখে এলাকায় ঘুরে বেড়াতে দেখা গিয়েছে। এলাকার বাসিন্দা অজয় মিঞ্জ বলেন, “কুমারগ্রাম থেকে জলপাইগুড়ি প্রায় দু’শো কিলোমিটার। সেখানে আলিপুরদুয়ার মাত্র ৬০ কিলোমিটার।” তাঁর গলায় হাঁফ ছাড়ার স্বস্তি, “যাক, আর কথায় কথায় জলপাইগুড়ি ছুটতে হবে না।”

alipurduar new district namitesh ghosh narayangarh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy