Advertisement
০১ জুন ২০২৪

জল-সঙ্কট জলপাইগুড়ি শহর জুড়েই

কোনও এলাকায় কল থেকে পড়ছে শীর্ণ ধারা, কোনও পাড়ায় কল খুলে দীর্ঘ অপেক্ষার পরেও জলের দেখা নেই। জলপাইগুড়ি শহরের পাণ্ডাপাড়া থেকে সেনপাড়া, রেসকোর্স থেকে শিরিষতলা লাগোয়া এলাকা সর্বত্রই কিছুটা হেরফেরে এমনই চিত্র। কয়েকটি এলাকাতে ঘোলা জলও সরবরাহ হচ্ছে বলে অভিযোগ। গত কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে। বৃষ্টির দেখা নেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৪ ০০:৫৪
Share: Save:

কোনও এলাকায় কল থেকে পড়ছে শীর্ণ ধারা, কোনও পাড়ায় কল খুলে দীর্ঘ অপেক্ষার পরেও জলের দেখা নেই। জলপাইগুড়ি শহরের পাণ্ডাপাড়া থেকে সেনপাড়া, রেসকোর্স থেকে শিরিষতলা লাগোয়া এলাকা সর্বত্রই কিছুটা হেরফেরে এমনই চিত্র। কয়েকটি এলাকাতে ঘোলা জলও সরবরাহ হচ্ছে বলে অভিযোগ। গত কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে। বৃষ্টির দেখা নেই। সেইসঙ্গে পানীয় জলের সঙ্কট চলছে জলপাইগুড়িতে। যদিও শহরের সব এলাকায় পানীয় জলের সঙ্কট তীব্র নয়। তবে পুরসভা সূত্রেই জানা গিয়েছে, জল সরবরাহের পরিমাণ কমেছে গোটা শহরেই।

শহরের পাণ্ডাপাড়া, মহামায়াপাড়া, অশোকনগরের দোতলা বাড়ির ট্যাঙ্কে বেশ কিছুদিন ধরে জল উঠছে না বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। এলাকার কাউন্সিলর তথা পুরসভা ক্ষমতাসীন কংগ্রেস কাউন্সিলরই চলতি সপ্তাহে দেড় ডজনেরও বেশি অভিযোগের তালিকা পুরসভার জল সরবারহ বিভাগে জমা করেছেন বলে জানা গিয়েছে। রেসকোর্স পাড়া, পিলখানা এলাকার কল দিয়ে দিনের সব সময়েই শীর্ণ ধারায় জল পড়ছে বলে অভিযোগ। প্রয়োজনের তুলনায় অনেকটাই কম পরিমাণে সকালে জল সরবরাহ হওয়ায় দুপুরের আগেই বাড়ির ট্যাঙ্ক জলশূন্য হয়ে পড়ার অভিযোগ উঠেছে, শহরের স্টেশন রোড, নতুন পাড়া, উকিলপাড়া, সমাজপাড়া, দিনবাজার এলাকাতেও। বিকেলে পুরসভার আরেকপ্রস্ত জল সরবরাহের পরেও, সন্ধ্যের পরেই জল ফুরিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। শহরের অরবিন্দনগর, শান্তিপাড়া এলাকায় চলতি সপ্তাহে দু’দিন জল সরবারহ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল বলে অভিযোগ। রাস্তার কলগুলিতেও দিনভর জল না পেয়ে দুর্ভোগে পড়তে হয় বাসিন্দাদের। একই চিত্র সেনপাড়া এবং রায়কতপাড়াতেও। সেনপাড়া কালীতলা এলাকায় গত দু’সপ্তাহে চারদিনের বেশি জল সরবারহ হয়নি বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ।

জল-সঙ্কটের কথা স্বীকার করে নিয়েছে পুর কর্তৃপক্ষ। একলাফে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া এবং বৃষ্টি না হওয়াই সমস্যার মূল কারণ বলে পুর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। জলস্তর অনেকটাই নীচে নেমে গিয়েছে বলে তাদের দাবি। তারফলে পাম্পসেট দিয়ে জল তুলতে অতিরিক্ত ‘প্রেসার’ প্রয়োজন হচ্ছে। উচ্চশক্তির পাম্প চালিয়েও প্রয়োজন মতো জল পাওয়া যাচ্ছে না। উল্টে ‘প্রেসার’ বেশি হওয়া, এবং দীর্ঘক্ষণ ধরে পাম্প চালানোয় বেশিরভাগ সেটের কার্যক্ষমতা গত কয়েকদিনে কমে গিয়েছে। অতিরিক্ত চাপ সামলাতে গিয়ে গত সপ্তাহে বেশ কয়েকটি পাম্পসেট পুড়ে গিয়েছে বলে পুরসভার জল সরবরাহ বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে। উদাহরণ হিসেবে গত সপ্তাহে অরবিন্দনগরের একটি পাম্পসেট বিকল হয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ওই পাম্পসেট বিকল হয়ে যাওয়ায় টানা দু’দিন এলাকায় জল সরবারহ আংশিক বন্ধ থাকে।

পুরসভার বিরোধী দলনেতা তথা সিপিএম কাউন্সিলর প্রমোদ মণ্ডল অভিযোগ করেন, “দীর্ঘদিন ধরেই জল সমস্যার কথা পুর কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে আসছি। যদিও, কর্তৃপক্ষের কোনও হেলদোল নেই। যে এলাকায় জল মিলছে, সেটিও ঘোলা জল। তার ফলে পেটের রোগের সংক্রমণ হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ এখনই ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে, মহামারি ছড়াতে পারে।” জল সমস্যার কথা স্বীকার করে পরিকাঠামোগত সমস্যার কথা জানিয়েছেন পুরসভার চেয়ারম্যান মোহন বসু। তিনি বলেন, “প্রতিবারই এই সমস্যা হয়, এবারেও শুরু হয়েছে। সমস্যা মোকাবিলা করতে প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে বেশি পাম্প চলানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একেবারেই বেশি পরিমাণে জল উঠছে না।” মোহনবাবুর কথায়, “জলস্তর নীচে নেমে গিয়েছে। চাপ সামলাতে গিয়ে পাম্পসেট বিকল হয়ে যাচ্ছে। আমূল সংস্কার প্রয়োজন। তার জন্য বিস্তারিত প্রকল্পও তৈরি হয়েছে। সে প্রকল্পের কাজ শুরু না হলে ভবিষ্যতে সমস্যা আরও বাড়বে॥

১৩০ বছরের পুরসভার জল সরবরাহ ব্যবস্থাও জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ। বেশিরভাগ পাইপে মরচে ধরে গিয়ে ক্ষয় হয়েছে। ফলে জলের চাপ সামলাতে দুর্বল পাইপ ভেঙেও গিয়েছে বলে অভিযোগ। শহরের ইতিহাস গবেষক তথা সাহিত্যিক উমেশ শর্মা বলেন, “১৯৩৪ সালে শহরের কিছু এলাকায় জল সরবারহ ব্যবস্থা শুরু হয়। তার কয়েক বছর পরে সারা শহরে সরবরাহ ব্যবস্থার শুরু। ইংরেজ আমলেই শহরের মাটির নীচে পাইপ বসানো হয়। তারপরে আমূল সংস্কার হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই জল সরবরাহ জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

siliguri water crisis
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE