Advertisement
০২ মে ২০২৪

ঝড়, শিলাবৃষ্টিতে সাড়ে ছ’কোটির ক্ষতি মালদহে

মালদহের তিনটি ব্লকে প্রায় ৪০ মিনিটের শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ের তাণ্ডবে বোরো ধান ও পাট মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিপূরণের আর্জি জানিয়ে প্রশাসন ও কৃষি দফতরের দ্বারস্থ হয়েছেন ধান ও পাট চাষিরা। মালদহের জেলাশাসক শরদকুমার দ্বিবেদী বলেন, “দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ বিলির কাজ শুরু হয়েছে। ফসলের ক্ষতির বিষয়টি কৃষি দফতর দেখছে।”

(বাঁ দিকে) চাঁচলে ঝড়বৃষ্টিতে ধানখেতের হাল হয়েছে এমনই। (ডান দিকে) শামুকতলায় দুর্যোগের চিহ্ন। ছবি: বাপি মজুমদার ও রাজু সাহা।

(বাঁ দিকে) চাঁচলে ঝড়বৃষ্টিতে ধানখেতের হাল হয়েছে এমনই। (ডান দিকে) শামুকতলায় দুর্যোগের চিহ্ন। ছবি: বাপি মজুমদার ও রাজু সাহা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
চাঁচল ও শামকুতলা শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৪ ০১:৪২
Share: Save:

মালদহের তিনটি ব্লকে প্রায় ৪০ মিনিটের শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ের তাণ্ডবে বোরো ধান ও পাট মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিপূরণের আর্জি জানিয়ে প্রশাসন ও কৃষি দফতরের দ্বারস্থ হয়েছেন ধান ও পাট চাষিরা।

মালদহের জেলাশাসক শরদকুমার দ্বিবেদী বলেন, “দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ বিলির কাজ শুরু হয়েছে। ফসলের ক্ষতির বিষয়টি কৃষি দফতর দেখছে।” মালদহের কৃষি উপ অধিকর্তা (প্রশাসন) সজল ঘোষ বলেন, “বোরো ধান ও পাট মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকা। বোরো ধান পাকার মুখে বলেই বিপুল ক্ষতি হয়েছে। আমরা কাউকে ক্ষতিপূরণ দিতে পারি না। বিস্তারিত রিপোর্ট রাজ্য সরকারকে পাঠানো হচ্ছে।”

গত মঙ্গলবার বিকেলে মালদহে বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি ও ঝড় হয়। গাজলে ঝড় হলেও রতুয়ার দুটি ব্লকে শিলাবৃষ্টি হয়। এক একটি শিলের ওজন ছিল ২০০-৭০০ গ্রাম পর্যন্ত। বিরাট আকারের শিলের দাপটে বোরো ধান ও পাটের খেত লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। রতুয়া-১ ব্লকের চাঁদমনি-১, চাঁদমনি-২, রতুয়া-২ ব্লকের শ্রীপুর-১, শ্রীপুর-২, মহারাজপুর, সম্বলপুর ও পরাণপুর-সহ সাতটি পঞ্চায়েত এলাকায় শিলাবৃষ্টি হয়। রতুয়া-১ ব্লকে দু’টি পঞ্চায়েতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১৫টি মৌজার ৭০০ হেক্টর বোরো ধান ও ৫০০ হেক্টর পাটের খেত। রতুয়া-২ ব্লকে পাঁচটি পঞ্চায়েতের ১৮টি মৌজায় ২৩০০ হেক্টরের বোরো ধান এবং ৪২০ হেক্টর জমির পাটের ক্ষতি হয়েছে। ওই ব্লকেই শিলে ভেঙেছে চার হাজার বাড়ির টালির ছাদ। গাজলে ঝড়ের দাপটে আলাল, দেওতলা ও করকচ পঞ্চায়েতের ২৭টি মৌজায় বোরো ধানের ক্ষতি হয়। সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ সাড়ে ৬ কোটি টাকা।

ভুট্টা ও সব্জি চাষের ক্ষতির পাশাপাশি এলাকাগুলিতে বিশেষ আম চাষ না হলেও কিছু ক্ষতি হয়েছে আম চাষেরও। তবে সেই ক্ষতি বড়মাপের নয়। শ্রীপুর-২ পঞ্চায়েতের খেড়িয়ার এক্রাম আলি ৮ বিঘায় বোরো ধান ও আড়াই বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলেন। তিনি বলেন, “জমির তিনভাগ ফসল নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ধারদেনা করে ধান, পাট চাষ করেছিলাম। লাভ দূরের কথা, ঋণ কী ভাবে শোধ হবে তা ভেবে কূলকিনারা পাচ্ছি না।” কাতলামারি এলাকার আবদুল মালেক বলেন, “পাঁচ বিঘা বোরো ধানের অর্ধেক নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কৃষি কর্তাদের বলেছি ক্ষতিপূরণ না পেলে আমাদের শুধু পথে বসাই নয়, না খেয়ে মরতে হবে।” একই অবস্থা বড় খেড়িয়ার শিশ মহম্মদ, বরাইলের আবদুল মাতিন, হবিবুর রহমানদের।

শুধু মালদহ নয়, মঙ্গলবার ঝড় বৃষ্টিতে ক্ষতি হয়েছে আলিপুরদুয়ার ও কুমারগ্রামেরও। আধ ঘণ্টার ঝড়ে দু’টি ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, প্রবল ঝড়ে আলিপুরদুয়ার ২ ব্লকের শামুকতলা, বানিয়াগাঁও, পটটোলা এবং কুমারগ্রাম ব্লকের রাধানগর, ভল্কা ও হলদিবাড়ি গ্রামে অন্তত ৮০০ গাছ ভেঙে পড়েছে। ৫০টির বেশি বাড়ির ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় ২০ বিঘা ভুট্টা চাষে ক্ষতি হয়েছে। বহু বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ায় বিদ্যুৎ পরিষেবা ব্যহত হয়েছে। বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানি মেরামতির কাজ শুরু করেছে। শামুকতলা-আলিপুরদুয়ার রাজ্য সড়কে পটটোলা এলাকায় রাস্তার উপর একটি রাধাচূড়া গাছ ভেঙে পড়ায় বুধবার সকালে কিছুক্ষণ যান চলাচল ব্যাহত হয়। গ্রামবাসীরা গাছ সরিয়ে দেন।

শামুকতলার বানিয়াগাঁও পোস্ট অফিস ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কিছু টিনের চাল উড়ে গিয়েছে। পটটোলা কলোনি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর অফিস ঘর ভেঙে পড়েছে। বানিয়াগাঁও-এর বাসিন্দা এলিসেবা বেসরা নামে এক মহিলার দুটি কাঁচা ঘর ভেঙে যাওয়ায় তিনি বিপাকে পড়েছেন। দুর্গতদের কী ভাবে সাহায্য করা যায় তা দেখা হচ্ছে বলে শামুকতলা গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান গাব্রিয়েল হাঁসদা জানিয়েছেন। আলিপুরদুয়ার ২ বিডিও সজল তামাং জানান, ত্রাণ হিসাবে পলিথিন বিলি শুরু করা হয়েছে। দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির মধ্যে ক্ষতিপূরণ দিতে উদ্যোগী হচ্ছে প্রশাসন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

malda hailstorm thunder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE