‘মস্য মারিব খাইব সুখে’ কোচবিহারের সাগরদিঘির টলটলে জলে ছিপ ফেলে মাছ ধরার এমন স্বপ্ন আপাতত মৎস্য শিকারিদের হাতের মুঠোয়। রবিবার টিকিট কেটে মাছ শিকারে নেমে যেতে পারেন যে কেউ। রবিবার বিকেলে মৎস্য দফতরের ঘোষিত রাজ্যে প্রথম মৎস্য শিকার প্রকল্পভুক্ত দিঘি হিসাবে ঘোষিত কোচবিহারের সাগরদিঘিতে আমজনতার জন্য মাছ ধরার বন্দোবস্ত চালু হল। উদ্বোধন করেন জেলাশাসক পি উল্গানাথন। পরে জেলা প্রশাসনের কর্তা থেকে জনপ্রতিনিধিরা আনুষ্ঠানিক ভাবে ছিপ ফেলে দিঘিতে মাছ ধরেন। আগামী রবিবারের প্রায় সব টিকিট বিক্রি হয়ে গিয়েছে। জেলাশাসক বলেন, “কোচবিহারে পর্যটক আকর্ষণ বাড়ানোর ভাবনা থেকেই সাগরদিঘিতে মাছ ধরার ব্যবস্থা চালু হল।” জেলা মৎস্য দফতরের সহকারী অধিকর্তা অলোকনাথ প্রহরাজ বলেন, “গোটা রাজ্যে সাগরদিঘি প্রথম শুধুমাত্র মাছ ধরার জলা হিসেবে সরকারি স্বীকৃতি পেয়েছে। তবে অনুমতি ছাড়া জাল ফেলে মাছ ধরা যাবে না।”
শহরে এলে এই দিঘি দেখার টান পর্যটকেরা এড়াতে পারেন না। তার পরেও সেখান মাছ ধরার ব্যবস্থা চালু না থাকা, সাজানো এবং পরিকাঠামোর তেমন উন্নতি না হওয়ায় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছিল। কয়েকমাস আগে সাগরদিঘির জলে প্রচুর মরা মাছ ভেসে ওঠার ঘটনায় দূষণের অভিযোগ ছাড়াও রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে প্রশাসনের ভূমিকার অভিযোগ ওঠে। তারপরেই সাগরদিঘিকে কলকাতার একটি বেসরকারি সংস্থার হাতে পাঁচ বছরের ‘লিজ’ দেওয়া হয়। তাঁরাই জল শোধন করে মাছ ছাড়েন। সম্প্রতি দিঘির চারদিকে ১১২টি ফিসিং চেয়ার, বাহারি ছাতা বসানো হয়। রাজ্যের পরিষদীয় সচিব রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, জেলাশাসক ছিপ দিয়ে দিঘি থেকে মাছও ধরে ফেলেন। রুই মাছ তোলেন জেলা বিচারক রবীন্দ্রনাথ সামন্ত।
কোচবিহারের মহারাজা হরেন্দ্র নারায়ণের আমলে ১৮০৭ সালে সাগরদিঘি খনন করা হয়। রাজাদের আমলে শহরের প্রাণকেন্দ্রে প্রায় সাড়ে ১২ একর জমি খনন করে বিশালাকার ওই দিঘির জল বাসিন্দারা একসময় পানীয় হিসাবে ব্যবহার করতেন। দিঘিতে পাহারার ব্যবস্থা ছিল। দিঘির বিশালাকার রুই ও কাতলের স্বাদ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা রয়েছে। ১০-১২ বছর আগে টিকিট কেটে বাসিন্দারা কিছুদিন বিক্ষিপ্তভাবে সেখানে ছিপ ফেলার সুযোগ পেয়েছেন। এছাড়া সরকারি ‘পাস’ নিয়েও মাছ ধরার সুযোগ মিলত। কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে মাছ ধরার বন্দোবস্ত এবারই প্রথম। তিন হাজার টাকার টিকিটে দুইজন একটি করে ছিপ নিয়ে ৬ জুলাই থেকে আপাতত প্রতি রবিবার সকাল ৬টা থেকে ৫টা পর্যন্ত মাছ ধরার সুযোগ পাবেন। ওই টাকার মধ্যে মিলবে দিনের খাবারও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy