জলের অভাবে নষ্ট হতে বসেছিল পাট বোরো ধান। চষিদের মাথায় হাত পড়ে গিয়েছিল। ভুট্টা, সব্জি-ফল চাষ করে বিপাকে পড়েছিলেন চাষিরা। কিন্তু গত দুই দিনের রাতভর টানা বৃষ্টিতে স্বস্তি ফিরেছে কোচবিহার জেলার কৃষকদের। কৃষি দফতর সূত্রের খবর, গত দুই দিনে কোচবিহারে মোট ১১২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। তার আগে গত দুই মাসে মাত্রই ২৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। এই অবস্থায়, স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছে কৃষি দফতরের কর্তারাও।
জেলার মুখ্য কৃষি আধিকারিক অসিত পাত্র বলেন, “বৃষ্টি না হওয়াতে ফসলের ক্ষতি হচ্ছিল। কিছু জমির পাট নষ্ট হয়েছে। গত দুই দিনের বৃষ্টিতে পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। সমস্ত ধরনের ফসলের জন্য ওই বৃষ্টি কাজে লাগবে। বোরো চাষিরা সমস্যার হাত থেকে রেহাই পাবেন।” উদ্যান পালন দফতরের জেলা আধিকারিক খুরশিদ আলম জানিয়েছেন, বৃষ্টি ভুট্টা-সহ নানা ধরনের সব্জি, ফলকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করেছে। আর কয়েক দিন অনাবৃষ্টি চললে পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করতে পারত।
কৃষি দফতর সূত্রের খবর, এ সময় পাট, বোরো ধান চাষে নামেন কৃষকরা। এ ছাড়া বেগুন, লঙ্কা, পটল, ঢেঁড়শ-সহ নানা শাক এবং আম, পেয়ারা, লেবু, আনারস চাষ করা হয়। জেলার লক্ষাধিক কৃষক সরাসরি ওই চাষের উপর নির্ভরশীল। প্রতিটি চাষের জন্য প্রচুর পরিমাণ জলের প্রয়োজন হয়। রোরো ধানের একটি এক বিঘার জমিতে প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে জল দিতে হয়। এক দিতে অনাবৃষ্টি, অন্য দিকে লো ভোল্টেজের জেরে জেলার চাষিরা বিপাকে পড়েন। দফায় দফায় পথ অবরোধ, বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির গাড়ি আটকে বিক্ষোভ হয়েছে। বিদ্যুৎ দফতর থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, যে পরিমাণ বিদ্যুতের চাহিদা তৈরি হয়েছে তা সরবরাহ করার মতো পরিকাঠামো নেই। সেখানে স্বস্তি মিলেছে বৃষ্টিতে।
কোচবিহারে ৪৪ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়। পাট চাষ হয় ৪০ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে। জেলায় শীতকালীন সব্জি হয় প্রায় ২৪ হাজার হেক্টর জমিতে। এ ছাড়াও গ্রীষ্মকালীন সব্জি হয় ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে। এ ছাড়া নানা সব্জি, শাক চাষ হয়। ব্যবসায়িক ভিত্তিতে আম লিচু, লেবু, কলা, আনারস, কুল চাষ হয়। প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর জমিতে এই ফলগুলি চাষ করা হচ্ছে। দাবাদহে সব্জি ও ফল বাচাতে জল স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়ার কাজে নেমেছিলেন উদ্যান পালন দফতরের আধিকারিকরা। কদমতলার চাষি নন্দ বর্মন জানান, পাঁচ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করি। বৃষ্টি আসতে দেরি হয়েছে। জলের জন্য অনেক টাকা খরচ করতে হয়েছে। আলু, পাট, ধান, তামাক চাষি সংগ্রাম সমিতির পক্ষে নৃপেন কার্জি জানিয়েছেন, পাট চাষে ক্ষতি হয়েছে। বোরো ধান অনেকটাই নষ্ট হয়েছে। অসময়ে বৃষ্টি এসেছে। বৃষ্টির আগেই অনেক ফসল নষ্ট হয়েছে। এখন যদি আবার বেশি বৃষ্টি হয়, তা হলে পাট চাষে ফের সমস্যা তৈরি হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy