শিলিগুড়ি লাগোয়া ডাবগ্রামে প্রস্তাবিত নয়া ‘ইকো ট্যুরিজম হাব’ তৈরির প্রকল্পের অনুমোদন দিল কেন্দ্রের বন ও পরিবেশ মন্ত্রক। রাজ্যের বন দফতর, পর্যটন দফতর ও উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর যৌথ ভাবে প্রায় ৯৫০ একর জমির ওপর ওই কেন্দ্রটি গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে। প্রাথমিক ভাবে খরচ ধরা হয়েছে ২৫০ কোটি টাকা।
সরকারি সূত্রের খবর, গত সপ্তাহে কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রক প্রকল্পটি নিয়ে তাঁদের সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে। সেখানে বন্যপ্রাণী রাখার ছাড়পত্রও দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে উত্তরবঙ্গের কুঞ্জনগর ও খোল্টা ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্র থেকে বন্যপ্রাণী সরিয়ে নেওয়ার শর্তও দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণবঙ্গের সুন্দরবন লাগোয়া এলাকায় নির্মীয়মাণ আর একটি ইকো ট্যুরিজম প্রকল্পের ব্যাপারেও আগের অনুমোদন বাতিল করে বন্যজন্তু না রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। রবিবার বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন বলেন, “ডাবগ্রামের ওই ইকো ট্যুরিজম হাব গড়ার পরিকল্পনা হয়েছে। কেন্দ্রের বন ও পরিবেশ মন্ত্রক ওই প্রকল্পটির অনুমোদন করে সেখানে বন্যজন্তু রাখার ব্যাপারেও ছাড়পত্র দেন। প্রকল্পটি সম্পূর্ণ হলে উত্তরবঙ্গের পর্যটন মানচিত্রে নয়া পালক জুড়বে।”
বন দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তরবঙ্গের পর্যটন বিকাশে গুরুত্ব দেওয়ার কথা একাধিক বার বলেছেন। ডাবগ্রামে হাব তৈরির চিন্তাভাবনা শুরু হয়। বন, পর্যটন ও উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর ওই প্রকল্প তৈরি করে। কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রকের অনুমোদন ছাড়া বন্যপ্রাণী রাখার ব্যবস্থা করা সম্ভব নয় বুঝেই কেন্দ্রের সংশিষ্ট মন্ত্রকে পাঠানো হয়। প্রকল্প অনুমোদন করলেও উত্তরবঙ্গের কোচবিহারের খোলটা ও ডুয়ার্সের কুঞ্জনগর ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্র থেকে সমস্ত বন্য জন্তুদের সরিয়ে নিয়ে যেতে হবে বলে শর্ত দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে চিন্তায় পড়েছে বন দফতরের কর্তারা। বনমন্ত্রীর বক্তব্য, “কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকের নির্দেশ পুরোপুরি দেখে তা ঠিক করা হবে।” প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) উজ্জ্বল ভট্টাচার্য বলেন, “ওই বিষয় জু অথরিটি কর্তৃপক্ষ দেখেন। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
এ দিকে, খোল্টা থেকে কুঞ্জনগর এলাকার বনকর্মীরা জানান, কিছু দিন আগে জু অথরিটির কর্তারা এলাকা ঘুরে যান। তাঁরাই হয়ত সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেবেন। প্রসঙ্গত, বাম আমলে অনন্ত রায় বনমন্ত্রী থাকাকালীন খোল্টায় ইকো পার্ক গড়া হয়। সেখানে ২টি ময়ূর, ৬টি সম্বর, ১৫টি চিতল হরিণ রয়েছে। কুঞ্জনগরের অন্যতম আকর্ষণ চিতাবাঘ রেসকিউ সেন্টার। ওই দুটি কেন্দ্রেই পর্যটকদের ভিড় হয়। বন্যপ্রাণীদের অন্যত্র সরানো হলে দুটি কেন্দ্রের আকর্ষণ কমে যাবে।
এই বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের প্রাক্তন বনমন্ত্রী অনন্তবাবু বলেছেন, “পর্যটন বিকেন্দ্রীকরণ হলে সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিকল্প কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যও ব্যাহত হবে। সব দিক দেখে কেন্দ্রীয় সরকারের এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার।”
বন দফতরের এক জন আধিকারিক জানিয়েছেন, সেগুন গাছের জঙ্গলে ঘেরা তৃণহীন খোল্টায় হরিণ উদ্যান করার ব্যাপারে আগেই জু অথরিটি আপত্তির কথা জানিয়ে দিয়েছিল। অন্য দিকে, কুঞ্জনগরের বন্যজন্তু রাখার পরিকাঠামো নিয়ে কর্তৃপক্ষ অসন্তুষ্ট ছিলেন। নতুন অনুমোদনের সঙ্গে তাই এই দুটি বিষয় জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy