Advertisement
E-Paper

তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেই মজুত হচ্ছিল বোমা, দাবি

বৈষ্ণবনগরে বোমা বানানো, বোমা বিস্ফোরণ ও বিস্ফোরণে মৃতদের দেহ মাটিতে পুঁতে দেওয়া কিংবা গঙ্গার জলে ভাসিয়ে দেওয়া ঘটনা নতুন কিছু নয়। ২০১২ সালে বৈষ্ণবনগরের দেওনাপুরের বিশবিঘি এলাকায় বোমা বাঁধতে দিয়ে ছ’জনের মৃত্যু হয়েছিল। সেই সময় তদানীন্তন জেলা পুলিশ সুপার সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়েছিলেন, বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু সেই বিস্ফোরণে কেউ মারা যায়নি। বোমা বিস্ফোরণে জখমরা পালিয়ে গিয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৪ ০১:৩৭

বৈষ্ণবনগরে বোমা বানানো, বোমা বিস্ফোরণ ও বিস্ফোরণে মৃতদের দেহ মাটিতে পুঁতে দেওয়া কিংবা গঙ্গার জলে ভাসিয়ে দেওয়া ঘটনা নতুন কিছু নয়। ২০১২ সালে বৈষ্ণবনগরের দেওনাপুরের বিশবিঘি এলাকায় বোমা বাঁধতে দিয়ে ছ’জনের মৃত্যু হয়েছিল। সেই সময় তদানীন্তন জেলা পুলিশ সুপার সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়েছিলেন, বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু সেই বিস্ফোরণে কেউ মারা যায়নি। বোমা বিস্ফোরণে জখমরা পালিয়ে গিয়েছে। কিন্তু বিস্ফোরণের তিনদিন পর স্থানীয় গ্রামবাসীদের কাছে থেকে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে দেওনাপুরের কলাবাগান ও ধানের খেত থেকে মাটি খুঁড়ে পুলিশ বোমা বিস্ফোরণে মৃত তিন জনের দেহ উদ্ধার করেছিল।

স্থানীয় গ্রামবাসীরা পুলিশকে জানিয়েছিল, তিন জনের দেহ গঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। মাটি খুঁড়ে তিনটি মৃতদেহ উদ্ধার করার পরে তদানীন্তন জেলা পুলিশ সুপার স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিলেন, নিচুতলার পুলিশকর্মীরা ভুল তথ্য সরবরাহের জন্য বোমা বিস্ফোরণে কেউ মারা যায়নি বলে জানানো হয়েছিল। বৈষ্ণবনগরের সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক বিশ্বনাথ ঘোষ বলেন, “বৈষ্ণবনগরের বোমা বানানো ও বোমা বানাতে গিয়ে মারা যাওয়ার ঘটনা নতুন কিছু নয়। বোমা বিস্ফোরণে মারা যাওয়া বহু মৃতদেহ গঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। বহু মৃতদেহ মাটিতে পুঁতে দেওয়া হয়েছে।। পুলিশ তার কোনও খোঁজই রাখে না। বৈষ্ণবনগর থানা লাগায়ো এলাকায় যে বোমা বিস্ফোরণ ঘটেছে, সেই বিস্ফোরণে কেউ জখম হয়নি এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়।” তিনি বলেন, “যে হেতু বোমা বিস্ফোরণে তৃণমূল জড়িয়ে পড়েছে, সেই জন্য পুলিশ গোটা বিষয়টি ধামাচাপা দিতে উঠে পড়ে লেগেছে। তার জন্যই বোমা বিস্ফোরণের তথ্য প্রমাণ লোপাটের জন্য অভিযুক্তদের সাহায্য করছে।” বিজেপির জেলা সাধারন সম্পাদক অজয় গঙ্গোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “বিস্ফোরণের যুক্তদের না ধরে প্রমাণ লোপাটে পুলিশ মদত দিচ্ছে।”

বস্তুত, রবিবার দুপুরে ঘটনার পর থেকে যে ঘটনা পরম্পরা প্রতক্ষদর্শীরা দেখেছেন, তার ধারাবাহিকতা দেখা গিয়েছে সোমবারও। সে দিন বিস্ফোরণের শব্দে আশেপাশে এলাকার প্রায় ২৫ -৩০ টি বাড়ি কেঁপে উঠেছিল। কামাল শেখের বাড়ির আট ফুট উঁচু ইটের দেওয়াল ভেঙে পড়েছিল। উড়ে গিয়েছিল রান্নার ঘরের চাল। স্থানীয় বাসিন্দারা কয়েকজন জানান, বিস্ফোরণ স্থল থেকে যাতে কোনও সাক্ষ্যপ্রমাণ লোপাট না-হয়, সে জন্য এলাকাটি পুলিশের ঘিরে পাহারা দেওয়ার কথা। কোনও পাহারাই সেখানে ছিল না। প্রতিবেশীদের কয়েকজন জানান, রবিবার রাতেই কয়েকজন গিয়ে বিস্ফোরণস্থলের গর্ত বুজিয়ে দেন। বিস্ফোরণের ধাক্কায় ভেঙে পড়া পাঁচিল রাতারাতি ইট সাজিয়ে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়। রাতেই একাধিক ব্যাগে ভরে নানা জিনিসপত্র নিয়ে ভ্যানে চাপিয়ে কয়েকজন জাতীয় সড়ক ধরে চলে যায় বলে এলাকার বাসিন্দাদের অনেকেরই অভিযোগ।

কামাল শেখের বাড়ির পিছনে বাড়ি নৌশাদ শেখের। তাঁর স্ত্রী সামফুল বিবি বলেন, “আমি রান্না ঘরে রান্না করছিলাম। হঠাত্‌ বিকট শব্দে রান্নাঘর কেঁপে উঠল। ভাবলাম কেউ বোধহয় বাড়িতে বোমা মারছে। ভয়ে রান্নাঘর থেকে পালিয়ে ঘরের ভিতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিই। কিছুক্ষণ কর ঘরের বাইরে বেরিয়ে দেখি চারিদিক ধোয়া হয়ে আছে।” ওই এলাকায় দাঁড়িয়ে কয়েকজন বাসিন্দার দাবি, রাতে পুলিশ ছিল না বলে তখন কামাল শেখে ও তাঁর ভাইরা যেখানে বোমা বিস্ফোরণ হয়েছিল সেই গর্ত হয়ে যাওয়া জায়গাটির মাটি ভরাট করে দেয়। ভেঙে যাওয়া ইটের দেওয়ালের ইটগুলি সাজিয়ে রাখে। ফের সকালে সিভিক ভলান্টিয়ররা ভরাট গর্ত থেকে মাটি খুঁড়ে ফেলে ও পাঁচিলের ইটগুলি উঠানের একপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখে।

কংগ্রেস ও সিপিএমের অনেকেরই অভিযোগ, এখন বৈষ্ণবনগরে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠী থানা এলাকা দখলকে ঘিরে নিজেদের মধ্যে মারপিট শুরু করেছে। আর তার জেরেই দুইগোষ্ঠী বাইরে থেকে লোক আনিয়ে যে যাঁর এলাকায় বোমা বানাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন তাঁরা। বৈষ্ণবনগরের বর্তমান কংগ্রেস বিধায়ক ঈশা খান চৌধুরীর অভিযোগ, “পুলিশের একাংশের মদতেই তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা বৈষ্ণবনগরের বিভিন্ন এলাকায় বোমা বানাচ্ছে। তাই বোমা বিস্ফোরণ ঘটেছে।”

রবিবার দুপুরে তৃণমূল কংগ্রেসের সক্রিয় কর্মী কামাল শেখের বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণের পর জেলা পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন, বিস্ফোরণে কেউ হতাহত হয়নি। অথচ স্থানীয় গ্রামবাসী থেকে শুরু করে স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেসের পঞ্চায়েত সদস্য মনিরুল শেখ দাবি করেছেন, বোমা বিস্ফোরনের পর রক্তাক্ত অবস্থায় চারজনকে কামাল শেখের বাড়ি থেকে বের করতে গ্রামের অনেক মানুষ দেখেছেন। বৈষ্ণবনগরে তৃণমূল কংগ্রেসের গোষ্ঠীকোন্দল যে রয়েছে, তা রবিবার প্রকাশ্যে চলে এসেছে।

এদিন বৈষ্ণবনগর হাইস্কুলে তৃণমূল জেলা সভাপতি যখন তাঁর অনুগামীদের নিয়ে বৈঠক করছিলেন ঠিক একই সময় জেলা সভাপতির ডাকা সভায় না গিয়ে মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রের ঘনিষ্ঠ তৃণমূল কংগ্রেসের সংখ্যলঘু সেলের জেলা সভাপতি নালেব আলি নিজের অনুগামীদের নিয়ে পাল্টা সভা করেছেন। তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর সভাকে ঘিরে যাতে কোনও গোলমাল না ঘটে, তা সামাল দিতে রবিবার অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী বৈষ্ণবনগরে হাজির ছিল। তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর দু’টি সভা সামাল দিতে যখন জেলার পুলিশ কর্তা থেকে শুরু বিশাল পুলিশ বাহিনী ব্যস্ত সেই সময় তৃণমূলের এক সক্রিয় কর্মীর বাড়িতে মজুত বোমা ফাটে বলে তৃণমূলের তরফেই কয়েকজন অভিযোগ করেছেন।

tmc party problem bombs were stored baishnabnagar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy