স্কুলের সামনে বিক্ষোভ তৃণমূলকর্মীদের।—নিজস্ব চিত্র।
তৃণমূলের বিক্ষোভের জেরে ‘ভেস্তে’ গেল একটি শিক্ষক সংগঠনের জেলা সম্মেলন। রবিবার স্কুল শিক্ষকদের দক্ষিণপন্থী সংগঠন পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতির জেলা সম্মেলন ছিল দিনহাটার ওকড়াবাড়ি হাইস্কুলে। শাসক দলের অর্ন্তদ্বন্দ্বের কারণেই এ দিন সম্মেলন হল না বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্মেলন স্থগিত বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
এই সংগঠনে কংগ্রেস ও তৃণমূল দুই দলের সদস্যেরাই রয়েছেন। রাজ্য সাধারণ সম্পাদক নবকুমার কর্মকার জানান, বামবিরোধী জাতীয়তাবাদী সংগঠন হল ডব্লিউবিটিএ। নির্দিষ্ট কোনও দলের সংগঠন নয়। এখানে কংগ্রেস ও তৃণমূল দুই দলের নেতা কর্মীরাই রয়েছেন। কিছু দিন আগে সংগঠনের রাজ্য সম্মেলন হয়েছিল মেদিনীপুরে। মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
দিনহাটার সম্মেলনেও আমন্ত্রিত ছিলেন বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন এবং জেলার সাংসদ রেণুকা সিংহ। সম্মেলনের প্রচার পোস্টার, ফ্লেক্সে দু’জনের নামও ছাপানো হয়েছিল। রেণুকা সিংহের আপ্ত সহায়ক তৃণমূল কর্মী শিশির সরকার ওই শিক্ষক সংগঠনের সভাপতি। সংগঠনের একাংশের অভিযোগ, সে কারণেই জেলা তৃণমূলের অন্য গোষ্ঠী বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন। কংগ্রেসের প্রাক্তন বিধায়ক ফজলে হকের দাবি, “জেলায় তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বের ফলেই এ দিন সম্মেলন ভেস্তে গেল।” সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নবকুমারবাবুও বলেন, “এ দিনের ঘটনার পিছনে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থাকলেও থাকতে পারে।”
এ দিন সম্মেলন শুরুর আগেই একদল তৃণমূল কর্মী স্কুলের গেট আটকে বিক্ষোভ শুরু করে। যার ফলে সংগঠনের কোনও প্রতিনিধিই সম্মেলনে যোগ দিতে স্কুলের ভিতরে ঢুকতে পারেননি। যার জেরে ভেস্তে যায় সম্মেলনও। স্কুলের ফটকে কালো পতাকা হাতে নিয়ে মন্ত্রী-সাংসদদের জন্য অপেক্ষা করতেও দেখা যায় তৃণমূল কর্মীদের একাংশকে। এরপরে শিক্ষকদের উপরেই চড়াও হওয়ার অভিযোগও ওঠে তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে। শেষ পর্যন্ত সংগঠনের তরফে সম্মেলন স্থগিত রাখার কথা ঘোষণা করা হয়। সম্মেলন উদ্বোধন করার কথা ছিল বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণবাবুর। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল সাংসদ রেণুকা সিংহের। তাঁদের কেউই অবশ্য এ দিনের সম্মেলনে হাজির ছিলেন না। কংগ্রেস বিধায়ক কেশব রায়, প্রাক্তন বিধায়ক ফজলে হক সম্মেলনে যান। ঘণ্টাখানেক অপেক্ষার পরে ফিরে যান তাঁরা।
শিশিরবাবু বলেন, “সম্মেলন স্থল থেকে এক কিলোমিটার দূরে আমার গাড়ি আটকে দেয় জনা কয়েক ছেলে। ওই সম্মেলনে যাওয়া যাবে না বলে হুমকি দিতে শুরু করে তারা। পরিস্থিতি খারাপ দেখে আমি ফিরে যাই।” বিক্ষোভের সময় তৃণমূল কর্মীরা প্রশ্ন তোলেন, শিশিরবাবু সাংসদের আপ্ত সহায়ক হয়ে কী ভাবে কংগ্রেস মনোভাবাপন্ন একটি সংগঠনের সভাপতি দায়িত্বে রয়েছেন? শিশিরবাবু বলেন, “এটা একটি জাতীয়তাবাদী শিক্ষক সংগঠন। এর সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই। শাসক দলের নেতারা বরাবর আমাদের সম্মেলনে উপস্থিত থেকেছেন।”
শিশিরবাবুকে সমর্থন জানিয়েছেন সাংসদও। রেণুকাদেবী বলেন, “সংসদের কাজে দিল্লিতে রয়েছি। তাই ওই সম্মেলনে যেতে পারিনি। কী হয়েছে খোঁজ নেব। তবে ওই সংগঠন জাতীয়তাবাদী শিক্ষক সংগঠন। সেখানে শিশিরবাবু দায়িত্বে থাকলে অসুবিধে কোথায় বুঝতে পারছি না।” বনমন্ত্রী অবশ্য বিষয়টি নিয়ে কিছু বলতে চাননি। তিনি বলেন, “আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কলকাতায় আছি। ওই সম্মেলনে যেতে পারব না আগেই জানিয়েছি।”
ওই সম্মেলনে শাসক দলের মন্ত্রী-সাংসদের নাম থাকা নিয়ে দিন কয়েক আগেই দলের শীর্ষ নেতৃত্বের মতভেদ প্রকাশ্যে আসে। বনমন্ত্রী বা সাংসদ ওই সংগঠনকে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক সংগঠন বললেও, দলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ তার বিরোধিতা করেন। তিনি দাবি করেন, ওই সংগঠন কংগ্রেস মনোভাবাপন্নদের। দলের কেউ সেখানে গেলে বিষয়টি রাজ্য নেতৃত্বকে জানানোর হুঁশিয়ারিও দেন। এ দিন রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, “বিক্ষোভের বিষয়টি আমার জানা নেই তবে ওই সংগঠন কংগ্রেসের। আমাদের নিজস্ব শিক্ষক সংগঠন রয়েছে। তা বাদ দিয়ে কেউ অন্য রাজনৈতিক দলের শিক্ষক সংগঠনের সম্মেলনে যেতে পারেন না।” এ দিন রবীন্দ্রনাথবাবুর অনুগামী বলে পরিচিত নুর আলম হোসেন সহ এলাকার নেতাদেরই বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিতে দেখা গিয়েছে বলে শিক্ষক সংগঠনের দাবি। তবে রবীন্দ্রনাথবাবু দাবি করেছেন, এই ঘটনার সঙ্গে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কোনও সম্পর্ক নেই।
কিন্তু তৃণমূল নেতা নুর আলম হোসেন বলেন, “ওই এলাকার মানুষ কংগ্রেসকে পছন্দ করছেন না। এই সময় তৃণমূলের নেতাদের ব্যবহার করে ওই এলাকায় ফের কর্তৃত্ব কায়েমের চেষ্টা করছে কংগ্রেস। সে জন্যই পরিকল্পিত ভাবে ওই সম্মেলন ওকরাবাড়িতে করা হয়। আমাদের দলের কেউ ওই সম্মেলন যাবে, এটা মেনে নেওয়া হবে না। সে কারণেই শিশিরবাবু সহ তৃণমূল নেতাদের কেউ সেখানে হাজির থাকলে কালো পতাকা দেখানোর কর্মসূচি ছিল।” এলাকার কংগ্রেস বিধায়ক কেশববাবুর দাবি, “তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা প্রতিনিধিদের কাউকে ভিতরে ঢুকতে দেয়নি। যার জেরেই সম্মেলন স্থগিত করে দেওয়া হয়। এই সংগঠনের সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। জোর করে রাজনীতি ঢোকানো হচ্ছে। এটা গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর হস্তক্ষেপ।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy