Advertisement
২০ মে ২০২৪

তদন্তে বোঝা যাবে আমরা দোষী নই, বলছেন এজেন্ট

একজনের বাড়িতে ঢুকে দিন কয়েক আগে মারধর করে জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছিল একদল আমানতকারীর বিরুদ্ধে। অন্যজন স্ত্রীর সোনার গয়না বিক্রি করে আমানতকারীদের পাওনার একাংশ মিটিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে দিনমজুর হয়েছেন। শেষপর্যন্ত সারদা কাণ্ডে সুপ্রিম কোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়ায় আশার আলো দেখছেন দু’ জনই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৪ ০৩:১৩
Share: Save:

একজনের বাড়িতে ঢুকে দিন কয়েক আগে মারধর করে জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছিল একদল আমানতকারীর বিরুদ্ধে। অন্যজন স্ত্রীর সোনার গয়না বিক্রি করে আমানতকারীদের পাওনার একাংশ মিটিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে দিনমজুর হয়েছেন। শেষপর্যন্ত সারদা কাণ্ডে সুপ্রিম কোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়ায় আশার আলো দেখছেন দু’ জনই।

প্রথমজন কোচবিহারের তুফানগঞ্জ থানা এলাকার বাসিন্দা তথা পেশায় চাষি রফিকুল ইসলাম। গত সোমবার সকালে নাককাটিগছ গ্রাম পঞ্চায়েতের শিকারপুর এলাকায় রফিকুলের বাড়িতে একদল আমানতকারী হামলা চালান বলে অভিযোগ। সেই সময় বাড়ি থেকে গরু, পাম্পসেট তুলে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি রফিকুলের পৈতৃক জমিতে ‘সারদা কান্ডের জেরে জমি দখল’ বলে ব্যানারও ঝোলানো হয়।

এলাকার বাসিন্দারা জানান, ২০০৯ সাল থেকে সারদার এজেন্ট রফিকুলবাবু অন্তত ২০০ আমানতকারীর মাধ্যমে সারদায় প্রায় ১২ লক্ষ টাকা জমা করেন। তবে হাতেগোনা কয়েকজন মাত্র টাকা ফেরৎ পান। এনিয়ে টানাপোড়েনের জেরে ঘটনার পরদিন স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তারা দুই পক্ষ নিয়ে আলোচনা করে তুলে নিয়ে যাওয়া গরু, পাম্পসেট ফেরান। খুলে দেওয়া হয় জমি দখলের ব্যানারও। কিন্তু তাতেও দুঃশ্চিন্তা কমছিল না রফিকুল ও তার পরিবারের। দশ মাসের ছেলের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তায় ছিলেন রফিকুলের স্ত্রী রাজিমা বিবি। ঘটনার পর হামলার অভিযোগের বিবরণ দিতে গিয়ে আতঙ্কের কথা বারেবারে জানিয়েছেন রাজিমা। শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ খানিকটা স্বস্তি দিয়েছে পরিবারটিকে। রফিকুল ইসলামের কথায়, “প্রায় চার বছর সারদার এজেন্টের কাজ করেছি। নিজে যা কমিশন পেয়েছি তার বড় অংশও লাভের আশায় গচ্ছ্বিত রেখেছিলাম। তাও গিয়েছে। কিন্তু কেউ এসব বুঝতে চাইছিলেন না। সিবিআই তদন্ত হলে টাকা যে অন্তত আমার মত সামান্য এজেন্টদের ঘরে যায়নি, সেটা সবাই বুঝতে পারবেন।”

কোচবিহার শহর লাগোয়া টাকাগছের বাসিন্দা প্রদীপ দাস আগে টেলিফোন পিসিও’র ব্যবসা করে সংসার চালাতেন। পরিবারের দাবি, মোবাইলের রমরমায় ব্যবসা কমে যাওয়ায় সারদার এজেন্টের কাজ নেন। তিন ছেলেমেয়ে আর বৃদ্ধ বাবা-মা মিলিয়ে সাত জনের সংসার। বড় মেয়ে কোচবিহার কলেজে পড়ে। নিজেকেই টিউশন করে পড়ার খরচ চালাতে হয়। আর এক মেয়ে ক্লাস এইটে ও ছেলে ক্লাস সিক্সে পড়ে। একটু স্বচ্ছলতার আশায় স্ত্রী কণিকা দাসও পরে সারদার এজেন্টের ‘কাজ’ নেন। ২০০৯ সাল থেকে দাস দম্পতি শতাধিক পলিসি করান। জমা করেন ১০ লক্ষাধিক টাকা। আচমকা ওই অর্থলগ্নি সংস্থার ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়ে পরিবারটি। বাড়িতে ঢুকে আমানতকারীদের তাগাদা সামলাতে কনিকা দেবীর সোনার গয়না বিক্রি করে প্রায় ৭০ হাজার টাকা আমানতকারীদের মেটান।

পরিস্থিতির জেরে প্রদীপবাবু এখন দিনমজুরির কাজ করছেন। স্ত্রী কনিকা দেবী গ্রামে ঘুরে শাড়ি বিক্রির কাজ করছেন। টিভিতে সারদা কান্ড নিয়ে সিবিআই তদন্তের নির্দেশের কথা জেনে প্রদীপবাবুর প্রতিক্রিয়া, “একসময় মাসে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত কমিশন পেয়েছি। সংসারে কিছুটা স্বচ্ছলতা এসেছিল। একটা দমকা হাওয়া সব কেড়ে নিল। পিসিও’র মালিক থেকে দিনমজুর হয়েছি। দাগি অপরাধীর থেকেও অবস্থা খারাপ। সিবিআই তদন্ত হলে দোষীরা প্রকাশ্যে এসে সম্ভবত শাস্তি পাবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

cbi investigation coochbehar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE