পাহাড়ের তিন মহকুমায় রাস্তা তৈরির দরপত্র ডেকে বিপাকে পড়েছে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর।
সম্প্রতি জিটিএ-এর তরফে কলকাতা কলকাতা হাইকোর্টে অভিযোগ করে জানানো হয়, গ্রামোন্নয়ন দফতর জিটিএ-এর এক্তিয়ারভুক্ত, অথচ গ্রামীণ পরিকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দে উত্তরবঙ্গ দফতর জিটিএ-কে এড়িয়ে রাস্তার কাজের দরপত্র চেয়েছে। জিটিএ-এর অভিযোগ শুনে গত মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি নাদিরা পাথারিয়া পরবর্তী শুনানি পর্যন্ত রাস্তার কাজে স্থগিতাদেশ জারি করে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরকে হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানি হওয়ার কথা। তার আগেই উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরকে হলফনামা জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব অবশ্য জিটিএ-এর কাজে রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপের নালিশ অস্বীকার করে উন্নয়নে বাধা দেওয়ার পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন মোর্চা তথা জিটিএ-এর বিরুদ্ধে। গৌতমবাবুর যুক্তি, “বিভিন্ন সময়ে আমরা জিটিএকে উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ করেছি, কখনও ওরাও আমাদের কাছে কাজ করে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছে। সেই মতোই তিনটি রাস্তার কাজের দরপত্র ডাকা হয়েছিল। কার হাতে কোন দফতর সেটা বিষয় নয়, মূল বিষয় হল উন্নয়ন। আর একটা দফতরের কাজ তো নানা এজেন্সি করে থাকেই।”
গত সপ্তাহেই মুখ্যমন্ত্রীর পাহাড় সফর চলাকালীন রাজ্যের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে জিটিএ-এর প্রতিনিধিরা জিটিএ-এর কাজে হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলেছিলেন। জিটিএ চুক্তি অনুযায়ী যে দফতরগুলি তাদের হাতে রয়েছে, তাতেও রাজ্য সরকার নানা ভাবে নাক গলাচ্ছে এবং তার ফলে জিটিএ স্বাভীনভাবে কাজ করতে পারছে না বলে অভিযোগ তোলা হয়। বিষয়টি নিয়ে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হলে সেখানেও নালিশ জানানোর কথা জানান জিটিএ তথা গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সদস্যরা। তবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ত্রিপাক্ষিক বৈঠক কবে হবে তার অপেক্ষায় বসে না থেকে সরাসরি রাজ্য সরকারের সঙ্গে জিটিএ তথা মোর্চা যে প্রশাসনিক সংঘাতে যেতে চাইছে রাস্তা তৈরির ঘটনায় হাইকোর্টের দ্বারস্থ হওার ঘটনা তা আবার প্রমাণ করল।
জিটিএ সদস্য পেম্বা শেরিং ওলা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছিলেন। এ দিন তিনি বলেন, “জিটিএ-এর তরফেই মামলা দায়ের করা হয়। জিটিএ-এর অধিকারে হস্তক্ষেপ হয়েছে বলে আইনের দ্বারস্থ হয়েছি। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর তাদের এক্তিয়ার বর্হিভুত কাজ করেছে। দেখা যাক দফতর থেকে হাইকোর্টে কী হলফনামা জমা দেওয়া হয়।”
প্রশাসন সূত্রের খবর, মাস দুয়েক আগে অন্তত ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে পাহাড়ের তিন মহকুমায় তিনটি রাস্তা তৈরির ঘোষণা করে উত্তবঙ্গ উন্নয়ন দফতর। কালিম্পঙের পেয়ুং থেকে লোয়ার দালাপচাঁদ, দার্জিলিঙের গাইরেগন থেকে মানেদ্রা এবং কার্শিয়াঙের পাঙ্খাবাড়ি রোড থেকে থাপাখালি এলাকা পর্যন্ত তিনটি রাস্তা তৈরির জন দরপত্র চায় দফতর। জিটিএ সবত্রে জানানো হয়েছে, গ্রামীণ পরিকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প থেকেই রাস্তা তিনটি তৈরির কথা জানানো হয়। এরপরেই কলকাতা হাইকোর্টে অভিযোগ করে জিটিএ। চুক্তি অনুযায়ী তাদের এক্তিয়ারে গ্রামীণ পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজের ভার থাকলেও, কেন সরাসরি উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর রাস্তার কাজ করছে আদালতে তা জানতে চায় জিটিএ। এরপরেই স্থগিতাদেশ দেওয়ার নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। জিটিএ-এর হাইকোর্টে দ্বারস্থ হওয়া প্রসঙ্গে গৌতমবাবুর পাল্টা অভিযোগ, “জিটিএ উন্নয়নে বাধা দিচ্ছে।” জিটিএ-যে উন্নয়নের কাজে বাধা দিচ্ছে এ বিষয়ে পাহাড়ে প্রচার অভিযান চালিয়ে ব্যাখ্যা করা হবে বলে মন্ত্রী দাবি করেছেন। যার জবাবে জিটিএ সদস্য জ্যোতি কুমার রাই বলেন, “যে কেউ পাহাড়ে সভা মিছিল যা ইচ্ছে করতে পারেন, তবে জিটিএ-এর এক্তিয়ারে হস্তক্ষেপ না করলেই হল। আমরাও উন্নয়ন চাই, তবে সঠিক পদ্ধতিতে। জিটিএ স্বশাসিত সংস্থা, রাজ্য সরকার হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করলেই আইনের দ্বারস্থ হব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy