দুর্নীতির একাধিক অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গোয়ালপোখরের তিন রেশন ডিলারকে আর্থিক জরিমানা করল জেলা খাদ্য সরবরাহ দফতর। কোথাও সময়ে রেশন বিলি হচ্ছে না। কোথাও দিনের পর দিন গ্রাহকদের কার্ড আটকে রাখা হচ্ছে। কোথাও আবার গ্রাহকদের রেশনের জিনিসপত্র দেওয়া হচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরেই এমন নানা অভিযোগ করছিলেন উত্তর দিনাজপুরের রেশন গ্রাহকরা। সম্প্রতি দোষী রেশন ডিলারদের শাস্তির দাবিতে জেলা খাদ্য ও সরবরাহ দফতর ঘেরাও করেন এসইউসি প্রভাবিত সংগ্রামী গণমঞ্চের শতাধিক সদস্য। লিখিতভাবে গোয়ালপোখর, চাকুলিয়া ও করণদিঘি ব্লকের ডিলারদের একাংশের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান তাঁরা। শাসক দলের পক্ষ থেকেও বিষয়টি জানানো হয় খাদ্য সরবরাহ মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে। এরপরেই যে সব ডিলারের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন মন্ত্রী।
এই পরিস্থিতিতেই নড়েচড়ে বসে জেলা খাদ্য সরবরাহ দফতর। আর্থিক জরিমানা করা হয় গোয়ালপোখর ব্লকের তিন রেশন ডিলারকে। চাকুলিয়া ও করণদিঘি ব্লকের আরও সাত রেশন ডিলারের বিরুদ্ধেও বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। রেশন ডিলারদের অনিয়ম ও দুর্নীতি রুখতে চার সদস্যের একটি নজরদারি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটির শীর্ষে রয়েছেন জেলা খাদ্য ও সরবরাহ দফতরের আধিকারিক সমীরকুমার মন্ডল। তিনি বলেন, “গোয়ালপোখর, চাকুলিয়া ও করণদিঘি ব্লকের রেশন ডিলারদের একাংশের বিরুদ্ধে ওঠা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। আপাতত, আমরা তিন ডিলারকে আর্থিক জরিমানা করেছি। তদন্ত শেষ হলে বাকি অভিযুক্ত রেশন ডিলারদের বিরুদ্ধেও একই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, জেলার ন’টি ব্লকে ৩০ লক্ষ ৯৮ হাজার রেশন গ্রাহক রয়েছেন। রেশন ডিলার রয়েছেন ৫২২ জন। তদন্তে নেমে ওই তিনটি ব্লকের রেশন ডিলারদের একাংশের বিরুদ্ধে নিয়মিত দোকান না খোলা, গ্রাহকের রেশন কার্ড আটকে রাখা, গ্রাহকদের সঠিক পরিমাণে চাল, আটা, গম, চিনি ও কেরোসিন তেল না দেওয়া, সরকার নির্ধারিত দামের চাইতে বেশি দাম নেওয়ার মতো অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এর পরে গত ১৮ জুলাই গোয়ালপোখর ব্লকের গতি গ্রাম পঞ্চায়েতের ৩৮ নম্বর ডিলার কমলচন্দ্র দাস ও ৪৪ নম্বর ডিলার মহম্মদ নুরুল কালামকে ৩০ হাজার টাকা করে ও ৭৯ নম্বর ডিলার মহম্মদ এজাবুদ্দিনকে ২০ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দেরিতে হলেও জেলা খাদ্য ও সরবরাহ দফতর তদন্ত করে অভিযুক্ত রেশন ডিলারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করায় খুশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।
গণ মঞ্চের জেলা সভাপতি তথা এসইউসির জেলা সম্পাদক দুলাল রাজবংশী জানান, “ডিলারদের অনিয়ম ও দুর্নীতি রুখতে তাঁরা জেলা খাদ্য ও সরবরাহ দফতরের আধিকারিকদের কাছে নিয়মিত জেলার সমস্ত রেশন দোকানে নজরদারি চালানোর অনুরোধ করেছি।” জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক পবিত্র চন্দ জানান, বহুবার দলের তরফে বলার পরে দেরিতে হলেও দফতরের কর্তারা নড়েচড়ে বসায় তাঁরা খুশি। বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক শঙ্কর চক্রবর্তীর বক্তব্য, টানা আন্দোলনের চাপে পড়েই জেলা খাদ্য ও সরবরাহ দফতর অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িত রেশন ডিলারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছে।
জেলা তৃণমূল সভাপতি অমল আচার্যের অবশ্য বলেন, প্রশাসনিক নজরদারি না থাকার কারণে বামফ্রন্ট সরকারের আমল থেকেই ডিলারদের একাংশ রেশনের সামগ্রী বিলির কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতি করছেন। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য বাপি ভৌমিকের অভিযোগ, তৃণমূল জমানায় রেশন ডিলারদের দুর্নীতি প্রকাশ্যে চলে আসায় নজর ঘোরাতে বামফ্রন্টকে দায়ী করা হচ্ছে। ওয়েস্ট বেঙ্গল মডিফাই রেশন ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের জেলা সম্পাদক কমল সরকার জানান, অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রমাণিত হলে অভিযুক্তদের শাস্তি পেতেই হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy