তপ্ত অধিবেশন। বৃহস্পতিবার সন্দীপ পালের তোলা ছবি।
শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এসজেডিএ) বিভিন্ন প্রকল্পে ২০০ কোটি টাকার আর্থিক দুর্নীতি নিয়ে মেয়রের প্রশ্ন নথিভুক্ত হল পুরসভার মাসিক অধিবেশনে।
বুধবার শিলিগুড়ি পুরসভায় মাসিক অধিবেশনে তৃণমূলের তরফে এসজেডিএ ও উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর কত টাকা দিয়েছে সেই প্রসঙ্গ তোলার পরেই দুর্নীতির মামলা নিয়ে হইচই করেন মেয়র। মেয়রকে বিরোধী দলের কয়েকজন কাউন্সিলরের দিকে আঙুল উঁচিয়ে বলতে শোনা যায়, ‘‘এসজেডিএর দুর্নীতি মামলায় যাঁরা অভিযুক্ত, তাঁদের কেউ কেউ এখানেই বসে রয়েছেন।’’ এর পরেই স্লোগান দিয়ে হইচই শুরু করে তৃণমূল কাউন্সিলররা। পৌনে এক ঘন্টা ধরে তা নিয়ে সভার মধ্যেই উভয়পক্ষের তর্কাতর্কি, বচসা, হট্টগোল চলে। সভা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পৌনে চারটে নাগাদ বোর্ডসভা থেকে ‘ওয়াক আউট’ করেন বিরোধীরা।
এ দিন বোর্ডসভায় ‘কল ইন অ্যাটেনশন’ পর্বে এসজেডিএ’র প্রসঙ্গ তোলেন তৃণমূল কাউন্সিলর কৃষ্ণ পাল-ই। এসজেডিএ এবং উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের তরফে গত চার বছরে শহরের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ২০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে দাবি করেন। অথচ কেন পুর বাজেটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা এসজেডি’এর চেয়ারম্যান গৌতম দেবকে সৌজন্যবশত ধন্যবাদ পর্যন্ত জানানো হয়নি সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি। জানিয়ে দেন, অশোকবাবু ২০ বছর পুরমন্ত্রী থাকার সময়ই নানা পুর আইন হয়েছে। সমস্ত পুরসভাগুলিকে হাতে রাখতে সেই মতো আইন করেছেন। তা হলে এখন কেন বলছেন, রাজ্য সরকার পুরসভাকে অবজ্ঞা করছে। স্বশাসিত সংস্থাকে ক্ষমতা দিচ্ছে না।
কৃষ্ণবাবু বলেন, ‘‘তিনি ভুল করেছেন বলে এখন বুঝতে পারছেন। তাই সেমিনার করছেন। দলের লোকদের নিয়ে এ সব করে আলোচনার কেন্দ্রে থাকতে চাইছেন। মেয়র পারিষদদের নিয়ে নবান্নে ধর্নায় বসবেন বলে হুমকি দিচ্ছেন। আবার তাদের সমর্থনে যখন কংগ্রেস পুরবোর্ড গড়ল তখন পুরসভায় আর্থিক প্রতিবন্ধকতার কথা ভুলে যাচ্ছেন।’’ তৃণমূলের ওই কাউন্সিলর শহরে ম্যাসটিক রোড তৈরি, চতুর্থ মহানন্দা সেতুর অ্যাপ্রোচ রোড তৈরি-সহ এই কয়েক বছরের এসজেডিএ এবং উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের নানা কাজের প্রশংসা করেন।
জবাবে মেয়র বলেন, ‘‘কৃষ্ণবাবু যা বললেন তাতে তাঁর বক্তব্য সম্পূর্ণ হল না। এই কয়েক বছরে এসজেডিএ’তে ২০০ কোটি টাকার যে দূর্নীতি হয়েছে বক্তব্যের সঙ্গে তা বললে তবেই পূর্ণাঙ্গ হত। এমনকী দুর্নীতিতে অভিযুক্তদের অনেকে সভাতেই বসে রয়েছেন।’’ এর পরেই কৃষ্ণবাবু বিরোধী দলনেতা নান্টু পাল, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর স্ত্রী তথা কাউন্সিলর শুক্লা দেব-সহ দলের অন্যান্য কাউন্সিলররা উঠে স্লোগান দিতে শুরু করেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল, আদালতে এসজেডিএ’র মামলা চলছে। তা ছাড়া মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এসজেডিএ তরফে পুলিশে অভিযোগ জানানো হয়েছিল। বিতর্কিত বিষয়ে বক্তব্য বলে মেয়র ভুল করেছেন স্বীকার করতে হবে। এমনকী অশোকবাবুর জামানায় চাঁদমণি চা বাগানের জমিতে উপনগরী তৈরির ক্ষেত্রে ১ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলেও হইচই শুরু করেন তাঁরা। মেয়র কথা বলতে গেলে বাধা দেন। বেলা তিনটে থেকে পৌনে চারটে পর্যন্ত তা নিয়ে হইচই চলার পর তৃণমূলের কাউন্সিলররা ওয়াক আউট করেন।
মেয়র জানান, এসজেডিএ’র বিষয়টি বিচারাধীন থাকায় বিতর্কিত, তবু কেন কল ইন অ্যাটেনশন পর্বে এসজেডিএ’র কথা উল্লেখ করে বক্তব্য রাখার জন্য চেয়ারম্যানকে কৃষ্ণবাবু লিখেছেন? নান্টুবাবুর দাবি, ‘‘উন্নয়ন নিয়ে তারা কথা বলতে চেয়েছেন। পুরসভার উন্নয়ন কাজে সাহায্য করতে চেয়েছেন। নানা সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে চেয়েছিলেন। অথচ অশোকবাবু ভূল তথ্য দিয়ে বোর্ডসভাকে উত্তপ্ত করলেন। যাতে আলোচনাগুলি না হয়।’’ বিরোধী দলনেতা জানান, তাঁরা চান এসজেডিএ নিয়ে আলাদা আলোচনা হোক। অশোকবাবুর জমানায়, কী কী হয়েছে সেটাও তদন্ত হোক। মেয়র জানান, রাজ্য জুড়েই শাসক দল যা করছে তা তারা মেনে নেবেন না। শিলিগুড়িতে কিছুতেই তা করতে দেবেন না। সভার শেষ পর্বে নির্দল কাউন্সিলর অরবিন্দ ঘোষ বলেন, ‘‘অভিযুক্ত সকলের বিরুদ্ধেই তদন্ত হওয়া উচিত। বিরোধীদেরও বিপক্ষের বক্তব্য শোনা উচিত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy