Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

দুশ্চিন্তা নিয়েই আত্মীয়-আশ্রয়ে

দু’বছর আগে এক বার পাঁচ পুরুষের ভিটে ছেড়ে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন। এ বার আবারও সেই ভিটে ছেড়ে পালিয়ে এসেছেন পশ্চিমবঙ্গে। কথা বলতে বলতে বারবার কেঁদে ফেলছিলেন অসমের জারাগুরির বাসিন্দা নুরজাহান বেওয়া।

রাজু সাহা
শামুকতলা শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৪ ০১:৪৩
Share: Save:

দু’বছর আগে এক বার পাঁচ পুরুষের ভিটে ছেড়ে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন। এ বার আবারও সেই ভিটে ছেড়ে পালিয়ে এসেছেন পশ্চিমবঙ্গে।

কথা বলতে বলতে বারবার কেঁদে ফেলছিলেন অসমের জারাগুরির বাসিন্দা নুরজাহান বেওয়া। বললেন, “দু’বছর আগের স্মৃতি এখনও ভুলতে পারেনি। ২০১২ সালের গোষ্ঠী সংঘর্ষে বাড়িঘর সবই পুড়িয়ে দিয়েছিল ওঁরা। চোখের সামনে প্রতিবেশীদের হত্যা দেখতে হয়েছে। বৃদ্ধ স্বামী কদরউদ্দিন মিঁয়া ও দুই ছেলেকে নিয়ে পালিয়ে কোচবিহারের মরিচ বাড়ি গ্রামে আশ্রয় নিয়েছিলাম এক আত্মীয়র বাড়িতে। সেই শুরু।”

তিনি জানান, তার কয়েকদিনের মধ্যে স্বামীর মৃত্যু হয়। পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার পর নিজের গ্রামে ফিরে গিয়ে দিনমজুরি করে কষ্টে দুই ছেলেকে নিয়ে একটি কুড়ে ঘর বানিয়ে দিন কাটাচ্ছিলেন। গত শুক্রবার রাতে জঙ্গি হানার খবর পেয়ে ভয়ে কাঁটা হয়েছিলাম। রাতের অন্ধকারে আমাদের গ্রামে হামলা হতে পারে বলে খবর আসতে শুরু করে। গ্রামের সবাই পালাতে শুরু করেন। গত শুক্রবার দুই ছেলেকে নিয়ে সংকোশ নদী পার হই। চোখে মুখে আতঙ্ক নিয়ে অন্যদের সঙ্গে কুমারগ্রামের ডাঙ্গাপাড়া চলে আসি। কোথাও যাব, কোথায় থাকব কিছুই জানা ছিল না। অবশেষে ডাঙ্গাপাড়ার গ্রামের বাসিন্দা পেশায় দিনমজুর নিজামুদ্দিন মিঁয়া আশ্রয় দিয়েছেন। জানি না এ ভাবে আর কতদিন থাকব।

শুধু তিনিই নন, জঙ্গি হানার জেরে জারাগুড়ি, বাঘমারা, সাপকাটা, ডাউয়াগুড়ি মতো গ্রামগুলি থেকে গত কয়েকদিনে আলি হোসেন শেখ, ইন্দাল মিয়া, গোলাপ হোসেন, সফিয়দ হোসেনের মতো ১৫৭ জন অসমের বাসিন্দা কুমারগ্রামে এসে আত্মীয় পরিজন, পরিচিতদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। মঙ্গলবার পর্যন্ত অবশ্য সরকারি ভাবে কোনও ত্রাণ শিবির খোলা হয়নি। অভিযোগ, ত্রাণ দেওয়ারও কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি। কুমারগ্রামের বিডিও শিলাদিত্য চক্রবর্তী শুধু বলেন, “পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।”

নাসিদ আলি শেখ, মামনি বিবিরা অবশ্য দুঃস্থ আত্মীয়দের বাড়িতে আর থাকতে চান না। তাঁদের দাবি, “কোনও ত্রাণ শিবির খোলা হলে ভাল হত। আমরা সবাই দিন মজুর। কেউ নদী থেকে পাথর তুলি। কেউ জমিতে কাজ করি। এখানে এসে কাজ পাচ্ছি না। নিজেদের গ্রামে ফেরারও সাহস পাচ্ছি না। কী হবে কিছুই ভেবে উঠতে পারছি না। পরিবার নিয়ে এক দিশেহারা অবস্থার মধ্যে আছি।”

এখনও পর্যন্ত ১৫৭ জন বাসিন্দা কুমারগ্রাম ও শামুকতলায় আশ্রয় নিয়েছেন। প্রশাসন সূত্রে যদিও জানানো হয়েছে, ত্রাণ শিবির খোলা না হলেও শিবির খোলার জন্য জেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে।

এদিকে অসমে জঙ্গি হানার পরিপ্রেক্ষিতে অসম সীমানার কুমারগ্রামে নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য কুমারগ্রাম ও পার্শ্ববর্তী এলাকার বিভিন্ন থানার ওসি ও আইসি-দের জলপাইগুড়ি পুলিশ প্রশাসন নির্দেশ দিয়েছে। কুমারগ্রামের পরিস্থিতির উপর রাজ্য সরকারের কাছে রিপোর্ট পাঠিয়েছে জেলা প্রশাসন। গত রবিবার কুমারগ্রামের অসম সীমানা এলাকা পরিদর্শন করে যান জলপাইগুড়ির জেলাশাসক পৃথা সরকার। তিনি পাখড়িগুড়ি, ভল্কা, বারবিশা-সহ কুমারগ্রামের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখেন।

জেলাশাসক জানান, অসমের বেশ কিছু পরিবার কুমারগ্রাম ও আলিপুরদুয়ারের ব্লকের বিভিন্ন গ্রামে তাঁদের আত্মীয় পরিজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন বলে প্রশাসন খবর পেয়েছে। তবে অসমের কোনও বাসিন্দা নিরাশ্রয় নেই। পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে। আলিপুরদুয়ারের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক বিশ্বচাঁদ ঠাকুর জানিয়েছেন, অসম পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। অসম সীমানায় নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

raju saha shamuktala
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE