Advertisement
০৪ মে ২০২৪

নানা অভিযোগ সত্ত্বেও ভোট মিটল নির্বিঘ্নেই

কালিয়াচকের কাঠালবাড়ি এলাকায় কংগ্রেস ও তৃণমূল সমর্থকদের বোমাবাজি, বিভিন্ন জায়গায় ইভিএম বিভ্রাট এবং ভোট বয়কটের ডাক ছাড়া বৃহস্পতিবার উত্তরবঙ্গে দ্বিতীয় দফার ভোট শান্তিপূর্ণ ভাবেই শেষ হল। এ দিন দুপুর দেড়টা নাগাদ মালদহের কালিয়াচকের কাঠালবাড়ির গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৬০ নম্বর বুথের সামনে কয়েকটি দোকানঘর বন্ধ করা নিয়ে বচসার জেরে তৃণমূল ও কংগ্রেস সমর্থকদের সংঘর্ষে শেষ পর্যন্ত বোমাবাজি শুরু হয়ে যায়।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৪ ০২:০৫
Share: Save:

কালিয়াচকের কাঠালবাড়ি এলাকায় কংগ্রেস ও তৃণমূল সমর্থকদের বোমাবাজি, বিভিন্ন জায়গায় ইভিএম বিভ্রাট এবং ভোট বয়কটের ডাক ছাড়া বৃহস্পতিবার উত্তরবঙ্গে দ্বিতীয় দফার ভোট শান্তিপূর্ণ ভাবেই শেষ হল।

এ দিন দুপুর দেড়টা নাগাদ মালদহের কালিয়াচকের কাঠালবাড়ির গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৬০ নম্বর বুথের সামনে কয়েকটি দোকানঘর বন্ধ করা নিয়ে বচসার জেরে তৃণমূল ও কংগ্রেস সমর্থকদের সংঘর্ষে শেষ পর্যন্ত বোমাবাজি শুরু হয়ে যায়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। জেলা পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলেন, “দু’দলের সংঘর্ষে, একে অপরকে লক্ষ্য করে বোমাবাজি করেছে। তবে পুলিশ গুলি চালায়নি। ঘটনাস্থল থেকে একটি তাজা বোমাও উদ্ধার করা হয়েছে।” এদিকে, বৈষ্ণনগরের বীরনগর এলাকায় ১৭ নম্বর বুথে বিজেপি ও তৃণমূল এজেন্টের গোলমালের জেরে দুই দলের সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে বলে জানা গিয়েছে। জেলা তৃণমূল সভানেত্রী সাবিত্রী মিত্র বলেন, “সুজাপুরের ৯২, ৯৩, ৯৪, ৯৫, ৯৬ নম্বর বুথের প্রিসাইডিং অফিসার ও কংগ্রেস এজেন্টারা ভোটারদের কংগ্রেস প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার জন্য চাপ দিয়েছে। এরজন্য সুজাপুরের পাঁচটি বুথের পুনর্নির্বাচনের দাবি করা হয়েছে।” ভোটগ্রহণ শেষ তৃণমূলের পক্ষ থেকে ৬টি বুথে ও সিপিএমের পক্ষ থেকে একটি বুথে পুনর্নিবাচনের দাবি করা হয়েছে। এদিকে জেলা শাসক শরদকুমার দ্বিবেদি বলেন, “উত্তর ও দক্ষিণ মালদহে ৮০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে।”

ভোট চলার পর মাঝপথে ইভিএম খারাপ হওয়ার ফলে মালদহে ১০টি বুথের ইভিএম পাল্টানো হয়েছে। এদিন সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ আবু হাসেম খান চৌধুরী, মৌসম বেনজির নূর, আবু নাসের খান চৌধুরী, ঈশা খান চৌধুরী ৫৬ নম্বর কোতুয়ালি জুনিয়ার বেসিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট দিতে গেলে ভোটযন্ত্র খারাপ থাকার জন্য ভোট দিতে পারেনি। ওই বুথে প্রিসাইডিং অফিসার জীবন কুমার সান্যাল জানিয়েছেন, “৫২টি ভোটদানের পর ইভিএম মেশিনটি খারাপ হয়ে গিয়েছিল।” প্রায়আধ ঘন্টা অপেক্ষা করার পরেও ইভিএম মেশিন না পাল্টানো গনি পরিবারের সবাই ভোট না দিয়েই বেরিয়ে গিয়েছিলেন। পরে বিকেলে অবশ্য ইভিএম বাদলানোর পর গনি পরিবারের সবাই ভোট দিয়েছেন।

দক্ষিণ দিনাজপুরের ১২টি বুথে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানাল বামফ্রন্ট। কুশমন্ডি ও কুমারগঞ্জ এলাকার দুটি বুথে শাসক দলের বিরুদ্ধে কারচুপির অভিযোগ তুলেছে সিপিএম। বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রের অর্ন্তগত উত্তর দিনাজপুরের ইটাহারের কয়েকটি বুথেও দলের ভোটকর্মীদের ভয় দেখানোর অভিযোগ তুলেছে বামেরা। গঙ্গারামপুরের শুকদেবপুর, নন্দনপুর, বেলবাড়ি, নারই সহ কুশমন্ডি, কুমারগঞ্জ এলাকার ১২টি বুথে বাম প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের তৃণমূলের সমর্থকরা বুথে ঢুকতে দেয়নি বলে অভিযোগ। বামেদের দাবি, আপত্তি জানালে তাঁদের সমর্থকদের উপর হামলা হয়। সংঘর্ষে দু’জন বাম সমর্থক জখম হন বলে দাবি করা হয়েছে। গঙ্গারারামপুরের কয়েকটি বুথ, নন্দনপুরের ৪ ও ৫ নম্বর বুথ, বিসরাইলে ১৭ নম্বর রানিপুর বুথ, হরিরামপুরের ৬৬ নম্বর বুথে কুশমন্ডির ১৭৬ নম্বর বুথ, কুমারগঞ্জের ২২ নম্বর বুথে পোলিং এজেন্টদের ঢুকতে না দিয়ে শাসক দল একতরফা ভোট করেছে বলে অভিযোগ বামেদের।

জেলাশাসক স্মিতা পাণ্ডে বলেন, “জামালপুর টিটিহার এলাকার বুথে সংঘর্ষের ঘটনায় জেলা নির্বাচনী দফতরের তরফে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। কমিশনকেও রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে।”

কর্মীদের মারধর করার অভিযোগ তুলেছে তৃণমূলও। তৃণমূল প্রার্থী অর্পিতা ঘোষের অভিযোগ, গঙ্গারামপুরের নারইয়ে কংগ্রেস কর্মীদের হামলায় দলের দু’জন জখম হয়েছেন। তাদের এক জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। যদিও কংগ্রেস প্রার্থী ওমপ্রকাশ মিশ্র পাল্টা অভিযোগ করে জানিয়েছেন, তিনি সে সময় সেখানেই উপস্থিত ছিলেন। তাঁর সামনেই তৃণমূল কর্মীরা ভোটারদের বুথে ঢুকতে বাধা দিলে স্থানীয় বাসিন্দারা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন বলে তাঁর দাবি। জেলাশাসক তাপস চৌধুরী বলেন, “অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে। তবে কয়েক জায়গায় ভোটযন্ত্রে ত্রুটি দেখা দিলে বদলে দেওয়া হয়েছে। জেলায় শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হয়েছে।”

সিপিএমের জেলা সম্পাদক মানবেশ চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, “গঙ্গারামপুর থানার শুকদেবপুর, বেলবাড়ি, নন্দনপুর এলাকার খুনে অভিযুক্ত দুষ্কৃতীদের পুলিশ গ্রেফতার করলে গোলমাল এড়ানো যেত। গঙ্গারামপুর থানার আইসির বদলি চেয়ে আগেই আমরা জেলা নির্বাচন আধিকারিকের দ্বারস্থ হয়েছিলাম।” আরএসপির জেলা সম্পাদক বিশ্বনাথ চৌধুরীর বলেন, “কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক এবং জেলাশাসককে কয়েকটি বুথে পুর্ননির্বাচনের লিখিত দাবি জানিয়েছি।” যদিও, তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র বলেন, “গঙ্গারামপুর সহ বিভিন্ন এলাকায় সিপিএম পোলিং এজেন্ট দিতে না পেরে মিথ্যা অভিযোগ তুলেছে।” তবে প্রার্থী অর্পিতা বলেন, “গঙ্গারামপুরের বুথের ঘটনা নিয়ে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছি।”

পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে বিজেপিও। দলের প্রার্থী বিশ্বপ্রিয় রায়চৌধুরী এদিন বালুরঘাট কেন্দ্রের জেনারেল পর্যবেক্ষকের ভূমিকা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে নালিশ জানিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন, ওই পর্যবেক্ষকের ভূমিকা সঠিক নয় তাঁকে একের পর অভিযোগ জানালেও কোনও ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি বলে বিশ্বপ্রিয়বাবুর অভিযোগ। এ সম্পর্কে পর্যবেক্ষক ডিএস পন্ডিতের লিঁয়াজো অফিসার পুলক মুখোপাধ্যায় অভিযোগ অস্বীকার করেন।

গোলমালের অভিযোগ উঠেছে মালদহের চাঁচলেও। রামপুর-জানিপুর প্রাথমিক স্কুলের দুটি বুথে বাসিন্দাদের ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। জেলাশাসক বলেছেন, “অভিযোগ পেয়েই সেখানে বিডিওকে পাঠানো হয়েছিল। ওখানে কোনও সমস্যা হয়নি। নির্বিঘ্নেই ভোট হয়েছে।” প্রশাসন জানায়, ওই দুই বুথে ৭২ শতাংশ ভোট পড়েছে। তৃণমূলের চন্দ্রপাড়া অঞ্চল নির্বাচন কমিটির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বলেন, “তৃণমূল সমর্খদের ক্রমাগত হুমকি দেওয়া হচ্ছে। পুলিশের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনেও নালিশ জানানো হয়েছে।” যদিও কংগ্রেস প্রার্থী মৌসম বেনজির নূর বলেন, “ভিত্তিহীন অভিযোগ। আমাদের নামে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে বলে প্রশাসনকে আমরাই ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টি দেখতে বলি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

poll unitruption complaint
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE