Advertisement
১৭ মে ২০২৪

নতুন ট্রেন এ বার ছুঁয়ে যাবে উত্তরবঙ্গও

রেল বাজেটে উত্তরবঙ্গের প্রাপ্তি নিয়ে রাজনৈতিক তরজা অব্যাহত। তবে উত্তর পূর্ব ভারতের সঙ্গে রেল যোগাযোগে বাড়তি গুরুত্বের ঘোষণায় আশান্বিত শিল্প মহল। নতুন ট্রেনের প্রস্তাব না থাকলেও, এ বারের রেল বাজেটে উত্তরবঙ্গের জন্য বেশ কিছু ‘উপহার’ রয়েছে বলে দাবি করছেন বণিক মহল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:০২
Share: Save:

রেল বাজেটে উত্তরবঙ্গের প্রাপ্তি নিয়ে রাজনৈতিক তরজা অব্যাহত। তবে উত্তর পূর্ব ভারতের সঙ্গে রেল যোগাযোগে বাড়তি গুরুত্বের ঘোষণায় আশান্বিত শিল্প মহল। নতুন ট্রেনের প্রস্তাব না থাকলেও, এ বারের রেল বাজেটে উত্তরবঙ্গের জন্য বেশ কিছু ‘উপহার’ রয়েছে বলে দাবি করছেন বণিক মহল। বিভিন্ন বণিক সভা এবং ব্যবসায়ী সংগঠনের সদস্যদের মতে, উত্তর পূর্ব ভারতের সঙ্গে দেশের বাকি অংশের যোগাযোগ বাড়াতে নতুন যে সব লাইন তৈরি হবে, তার সবটাই উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন স্টেশন ছুঁয়েই যাবে। সে কারণে এই পতে চলা অতিরিক্ত ট্রেনের সুবিধে এই এলাকার বাসিন্দারাই পাবেন বলে তাঁদের দাবি। সেই সঙ্গে নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ডুয়ার্সে বিকল্প রেল পথ তৈরির জন্যও সাড়ে তিন’শ কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রায় সাড়ে ৮ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগের যে লক্ষ্যমাত্রা রেল বাজেটে রাখা হয়েছে তার সুফলও উত্তরবঙ্গে মিলবে বলে মনে করছে সিআইআই কর্তারা।

বণিক সভা সিআইআইয়ের উত্তরবঙ্গ শাখার তরফেও রেল বাজেটকে স্বাগত জানানো হয়েছে। সংগঠনের প্রকাশ করা বিবৃতিতে বিনিয়োগ, পিপিপি মডেলে বিভিন্ন নতুন পরিষেবা ক্ষেত্র তৈরির কথা রেল বাজেটে প্রস্তাব রাখা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে যাত্রী সুরক্ষাতেও বাড়তি নজর দেওয়ার প্রস্তাবে সন্তোষ প্রকাশ করেছে সিআইআই। মহিলা কামরায় ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বসানোয় অপরাধ কমার সুযোগ রয়েছে বলে বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে। সংগঠনের উত্তরবঙ্গের অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত লক্ষ্মী লিম্বু কৌশল জানিয়েছেন, বিনিয়োগ এবং যাত্রী সুরক্ষার কারণে এ বারের রেল বাজেটকে সংগঠনের বিবৃতিতে উল্লেখ্য করা হয়েছে।

উত্তরবঙ্গের অন্যতম বৃহৎ ব্যবসায়ী সংগঠন ফোসিনের তরফেও বাজেটের বিভিন্ন প্রস্তাবকে স্বাগত জানানো হয়েছে। ফোসিনের সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “নতুন রেলের প্রস্তাব না থাকলেও, যে পরিকাঠামো রয়েছে তার সদর্থক ব্যবহারের কথা রেল বাজেটে বলা হয়েছে। ভানা বাড়েনি, এটা সুখবর। গতির প্রতি বাজেটে নজর দেওয়া হয়েছে এটাও আশার কথা। যাত্রী সুরক্ষা, ডবল লাইন তৈরির কথা বলা হয়েছে। বাজেটে আমরা খুশি।” উত্তর পূর্ব ভারতের রেল যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য বিপুল বরাদ্দের কথা রেল বাজেটে উল্লেখ্য করা হয়েছে বলে জানিয়ে বিশ্বজিতবাবু বলেন, “উত্তর পূর্ব ভারতের প্রতি যে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, তার সরাসরি সুফল উত্তরবঙ্গ পাবে।”

রেল বাজেট নিয়ে রাজনৈতিক তরজাও চলছে উত্তরবঙ্গে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা দার্জিলিং জেলা তৃণমূলের সবাপতি গৌতম দেবের দাবি, “এই বাজেট দুর্ভাগজন্যক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন উত্তরবঙ্গের জন্য ভেবেছিলেন, বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার গোটা রাজ্যকেই ব্রাত্য রেখেছে।” কংগ্রেস এবং বামেরা এক সুরে রেল বাজেটকে হতাশাজনক বলে অভিযোগ করেছেন। প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা দার্জিলিং জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক অশোক ভট্টাচার্যের অভিযোগ, “উত্তরবঙ্গের বাসিন্দাদের জন্য বাজেটে কিছু বলা নেই। তবে একটা কথা বলা যায় বাজেটে পুরোটাই কর্পোরেট স্বার্থ দেখা হয়েছে।” জেলা কংগ্রেস সভাপতি শঙ্কর মালাকারের দাবি, “আমাদের আগের দুই ইউপিএ সরকার রাজ্যকে যে ভাবে ঢেলে দিয়েছিল তার বিন্দুমাত্র এই বাজেটে নেই। পথে নেমে আন্দোলন হবে।” তবে বিজেপির জেলা সভাপতি রথীন বসুর পাল্টা দাবি, “এমন গতিশীল রেল বাজেট এর আগে হয়নি। বিপুল বিনিয়োগের কথা বলা হয়েছে। যাত্রী সুরক্ষা বিশেষত মহিলাদের নিরাপত্তার জন্য একাধিক পদক্ষেপ বাজেটে রয়েছে। সাধারণ বাসিন্দাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়তে টোল ফ্রি নম্বর সহ ্ভিযোগ জানানোর নানা পদ্ধতির সংস্থান বাজেটে রয়েছে। বাসিন্দারাই বাজেটের বিচার করবেন।”তবে বাজেট নিয়ে অনিশ্চয়তাও প্রকাশ করেছে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলির একাংশ। শিলিগুড়ি মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ওম প্রকাশ অগ্রবাল বলেন, “এই রেল বাজেটে উত্তরবঙ্গের বাসিন্দাদের খুশির কোনও বিষয় নেই। রেলমন্ত্রী বাজেটে দেশের এই অংশকে রেলের মূল শাখার সঙ্গে যোগ সূত্র করবেন বলে যে আশ্বাস ফের দিয়েছেন সেটুকুই আশা।” অগ্রিম বুকিংয়ের সময় সীমা দুই মাস থেকে বাড়িতে ৪ মাস করার বিষয়টিও ভাল বলে সংগঠন মনে করছে।

নিউ জলপাইগুড়ি যাত্রী কল্যাণ সমিতির সভাপতি দীপক মোহান্তি অবশ্য নতুন ট্রেন ঘোষণা না থাকাকে হতাশাজনক বলে দাবি করেছেন। দীপকবাবুর দাবি, “নতুন ট্রেন নেই। কলকাতা যাওয়ার আরও বেশ কিছু ট্রেন প্রয়োজন ছিল। উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু স্টেশন থেকে দিল্লি যোগাযোগেরও নতুন ট্রেনের প্রয়োজন ছিল।”এ দিকে, ২০০৪ সালে প্রথম রেল সংযোগ শুরু হয় বালুরঘাটে। বালুরঘাট-একলাখি পর্যন্ত মাত্র ৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথে হয়নি সিগন্যালিং ব্যবস্থা এখনও চালু না হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছে বাসিন্দাদের একাংশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

siliguri rail budget
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE