Advertisement
১১ মে ২০২৪

পাণ্ডুয়ায় মদের ঠেক রুখতে জোট বাঁধছেন বাসিন্দারাই

‘মাদক জাতীয় দ্রব্য কেনাবেচা করলেই জরিমানা। শাস্তিও দেওয়া হবে।’ মালদহ জেলার গাজল থানার পাণ্ডুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সোনাতলা, চিড়াদহ প্রভৃতি গ্রামের মোড়ে মোড়ে এমনই ফেস্টুন টাঙানো রয়েছে। সৌজন্য, মহিলা বাহিনী। পুলিশ-প্রশাসন ও আবগারি দফতরের আশ্বাসে ভরসা রাখতে না পেরে এ ভাবেই এখন গ্রামে-গ্রামে বেআইনি মদের ঠেকের বিরুদ্ধে জোট বেঁধেছেন মহিলারা। কারণ, ঘরের পুরুষেরা অনেকেই মদের ঠেকের টানে সব উপার্জন নষ্ট করে ফেলতেন। কমবয়সী স্কুল পড়ুয়ারাদেরও নেশার ফাঁদে ফেলত ওই চক্রটি।

মদের ঠেক রুখতে ব্যানার দিয়ে প্রচার। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।

মদের ঠেক রুখতে ব্যানার দিয়ে প্রচার। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।

অভিজিৎ সাহা
মালদহ শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:১৭
Share: Save:

‘মাদক জাতীয় দ্রব্য কেনাবেচা করলেই জরিমানা। শাস্তিও দেওয়া হবে।’ মালদহ জেলার গাজল থানার পাণ্ডুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সোনাতলা, চিড়াদহ প্রভৃতি গ্রামের মোড়ে মোড়ে এমনই ফেস্টুন টাঙানো রয়েছে। সৌজন্য, মহিলা বাহিনী।

পুলিশ-প্রশাসন ও আবগারি দফতরের আশ্বাসে ভরসা রাখতে না পেরে এ ভাবেই এখন গ্রামে-গ্রামে বেআইনি মদের ঠেকের বিরুদ্ধে জোট বেঁধেছেন মহিলারা। কারণ, ঘরের পুরুষেরা অনেকেই মদের ঠেকের টানে সব উপার্জন নষ্ট করে ফেলতেন। কমবয়সী স্কুল পড়ুয়ারাদেরও নেশার ফাঁদে ফেলত ওই চক্রটি। দিনের পর দিন এমন পরিস্থিতি দেখেই রুখে দাঁনিয়েছিলেন গীতারানি মন্ডল। কিন্তু, তার পরিণতিতে তাঁকেই খুন হয়ে যেতে হয়েছে। তাতেও পিছু হটতে রাজি নয় মহিলাবাহিনী। বরং, জেদ বেড়ে গিয়েছে তাঁদের। সে জন্য এখন মালদহের ওই সব গ্রামে গ্রামে নেশার ঠেক বিরোধী ফেস্টুনের সংখ্যা বাড়ছে।

মঙ্গলবার রাতে গীতারানিদেবীর অন্ত্যেষ্টি হয়েছে। বুধবার সকালেও তাঁর বাড়ির গ্রাম বারোকণায় শোক কাটেনি। তাঁর ছেলে গৌতম জানান, তিনি আগে রোজ মদ খেতেন। পরে খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “সে দিন আমাকে খুঁজতে মা বোনকে নিয়ে বার হন। আমি আগে নারায়ণ মণ্ডলের বাড়িতে মদ খেতাম। মা ভেবেছিল আমি ওর বাড়িতে আছি। তার পর মা ও বোনকে তারা মারধর করে। বাবা বাঁচাতে গেলে তাঁকেও নারায়ণ পরিবার নিয়ে মারধর করে। মায়ের আঘাত গুরুতর হওয়ায় তিনি মারা যান। খুনিদের শাস্তি চাই।”

অভিযুক্তের পরিবারের লোকেরা অবশ্য এখনও ঘরছাড়া। তবে মদের ঠেকের সঙ্গে যুক্ত সন্দেহে দু’জন মহিলা ধরা পড়েছেন। মূল অভিযুক্ত নারায়ণ ও তার জামাই নয়ন মণ্ডল পলাতক। গ্রামের মানুষেরা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে একরাশ ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। মালদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক মোদী বলেন, “পুলিশের তরফে বেআইনি কাজে লিপ্ত সকলকে ধরা হবে। খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত বাকিদের খোঁজে গ্রামে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।”

এ দিন পাণ্ডুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সোনাতলা গ্রামের মোড়েও বেশ কিছু ফেস্টুন দেখা গিয়েছে। তাতে লেখা রয়েছে, ‘মাদক দ্রব্য বিক্রয় ও ক্রয় করলে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা ও শাস্তি দেওয়া হবে।’ পরিবেশ ও সমাজ কল্যাণ সমিতি গঠন করে মহিলারা ওই নির্দেশ জারি করেছেন। ওই গ্রাম থেকে আরও এক কিলোমিটার দূরে রয়েছে চিরাদহ গ্রাম। সেই গ্রামের মোড়েও একই নির্দেশ জারি করা হয়েছে। সেই নির্দেশিকা জারি করেছে চিরাদহ মহিলা কমিটি।

এই গ্রামের পরে অবস্থিত বারোকণা গ্রাম অবশ্য এই গ্রামে এখনও কমিটি হয়নি। তাতে কী! গীতারানিদেবীর নেতৃত্বে গ্রামের মহিলারা জোরদার প্রতিবাদ শুরু করেছিলেন। মহিলাদের অভিযোগ, গ্রামে ক্রমশ মদ কেনাবেচা চলতো। এই আসর গভীর রাত পর্যন্ত চলত। ফলে, মদের আসর থেকে গালিগালাজ ও হাতাহাতির ঘটনায় সকলেই অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলেন। বাড়ির পুরুষেরাও এর প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ায় পরিবারের অশান্তি নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে উঠেছিল। তাই গীতারানির নেতৃত্বে গ্রামের মহিলারাই তিন থেকে চারটি ঠেকে ভাঙচুর চালায়। এর পরে মাসখানেক ঠেকগুলি বন্ধ ছিল। ফের তা শুরু হয়েছে। অভিযোগ, এখনও দুটি ঠেক চলছে। অবশ্য ঠেকের মালিকেরা জানান, এখন তাঁরা আর মদ বিক্রি করেন না।

গ্রামের মহিলা শেফালি, চন্দনা, সুশীলা মণ্ডলেরা অবশ্য হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তাঁরা বলেন, “গীতারানির খুনিদের পুলিশ কি সাজা দিচ্ছে তা দেখব। মদ বিক্রি বন্ধ করে পুলিশ না পারলে আমরাই যা করার করব।” আবগারি দফতরের মালদহ জেলা আধিকারিক রাম রায় সরকার অবশ্য এ দিনও আশ্বাস দিয়েছেন বাসিন্দাদের। তাঁর দাবি, “শীঘ্রই ঠেকগুলিতে অভিযান চালানো হবে।” তবে তা কবে হবে তা অবশ্য তিনি স্পষ্ট করে জানাতে পারেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

abhijit saha malda liquor shop
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE