Advertisement
০২ মে ২০২৪
অনুমতি না নেওয়ার অভিযোগ

পার্ক ‘দখল’ করে পুলিশ বুথ, বিতর্ক

রাতের অন্ধকারে ট্রাক করে মাটি ফেলে পুরসভার পার্ক দখল করে ট্রাফিক বুথ বানানোর চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে শিলিগুড়ি পুলিশের বিরুদ্ধেই। মাল্লাগুড়ি মোড় লাগোয়া ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে নিচু জায়গায় পার্কটি রয়েছে। নিয়ম ভেঙে মাটি ফেলে তা জাতীয় সড়ক পর্যন্ত উঁচু করে ট্রাফিক পুলিশের বুথ বানানো হচ্ছে বলে অভিযোগ। রাত হলেই গত কয়েক দিন ধরেই ট্রাকে করে মাটি এনে সেখানে ফেলা হচ্ছে। নিয়ম মাফিক জাতীয় সড়কের ধারে এ ধরনের কাজে কর্তৃপক্ষের কাছে আগাম পরিকল্পনা দিতে হয়।

এ ভাবেই তৈরি হচ্ছে বুথটি। নিজস্ব চিত্র।

এ ভাবেই তৈরি হচ্ছে বুথটি। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:০৪
Share: Save:

রাতের অন্ধকারে ট্রাক করে মাটি ফেলে পুরসভার পার্ক দখল করে ট্রাফিক বুথ বানানোর চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে শিলিগুড়ি পুলিশের বিরুদ্ধেই।

মাল্লাগুড়ি মোড় লাগোয়া ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে নিচু জায়গায় পার্কটি রয়েছে। নিয়ম ভেঙে মাটি ফেলে তা জাতীয় সড়ক পর্যন্ত উঁচু করে ট্রাফিক পুলিশের বুথ বানানো হচ্ছে বলে অভিযোগ। রাত হলেই গত কয়েক দিন ধরেই ট্রাকে করে মাটি এনে সেখানে ফেলা হচ্ছে। নিয়ম মাফিক জাতীয় সড়কের ধারে এ ধরনের কাজে কর্তৃপক্ষের কাছে আগাম পরিকল্পনা দিতে হয়। অথচ ওই বুথ বানানোর ব্যাপারে কোনও প্রস্তাব বা পরিকল্পনা জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে জমা দেওয়াও হয়নি, বা তা নিয়ে কোনও অনুমোদনও দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। তা ছাড়া রাস্তার ধারে পার্কের যে জায়গা ভরাট করা হচ্ছে তাঁর কিছুটা আগে মাটিগাড়া থেকে শিলিগুড়ি শহরে প্রবেশের রাস্তাটি দুই ভাগ হয়ে একটি অংশ ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক নামে চম্পাসারির দিয়ে গিয়েছে। অপর অংশ ঢালু হয়ে নিচের দিকে নেমে পার্কটির ধার বরাবর জাতীয় সড়কের নীচ দিয়ে আন্ডার পাস হয়ে শহরের প্রবেশ করেছে। নিচের ওই রাস্তা এবং জাতীয় সড়কের মাঝে থাকা পার্কটি মাটি ফেলে জাতীয় সড়ক পর্যন্ত উচু করা হচ্ছে বলে অভিযোগ।

শিলিগুড়ি পুরসভার প্রাক্তন মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত বলেন, “ওই পার্কের জায়গা পুরসভার। সেখানে একটি দোকান ছিল। জবর দখল করে থাকা ওই দোকানটিকে পুলিশকে দিয়েই সরানো হয়েছিল বছর দুয়েক আগে। ওই পার্ক সাজিয়ে সৌন্দর্যায়ন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। পুলিশ মাটি ফেলে তা ভরাট করে ট্রাফিক বুথ বানাবে, সে জন্য দোকান সরানো হয়নি।” খবর পৌঁছেছে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের কাছেও। তিনি বলেন, “বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।” পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারম্যান আর বিমলাকে ফোন করা হলে তা বেজে গিয়েছে। প্রশাসক বোর্ডের অপর সদস্য দীপঙ্কর পিপলাই জানান, তিনি শহরের বাইরে রয়েছেন। তবে খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে জানান তিনি।

পুলিশ কমিশনার জগমোহন বলেন, “বাসিন্দাদের ভাল করতেই উদ্যোগী হয়েছি। রোদ-জল-ঝড়ে ট্রাফিক পুলিশ কর্মীদের দাঁড়াবার জায়গা নেই। তাই বুথ করা হবে। এর থেকে পুলিশের কোনও লাভ নেই এটা মনে রাখতে হবে। সরকারি কাজের জন্য আলাদা করে কার অনুমতি নিতে হবে বুঝতে পারছি না।” জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের নির্বাহী বাস্তুকার নির্মল মণ্ডল জানিয়েছেন, তাঁদের কাছে পুলিশ এ ব্যাপারে কোনও প্রস্তাব বা পরিকল্পনা জমা দেয়নি। তাই কোনও অনুমোদন দেওয়ার ব্যাপারও নেই। পূর্ত দফতরের এক কর্তা জানান, পুলিশ যদি নিজেই আইন ভাঙে তা হলে সরকারি জায়গা দখলের প্রবণতা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

যদিও পুরসভা এবং বাসিন্দাদের একাংশ বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। পুর কর্মীদের কয়েকজন জানান, পুলিশ শহরের বিভিন্ন রাস্তায় বুথ বানিয়ে বিভিন্ন কোম্পানির বিজ্ঞাপন লাগিয়ে রোজগার করছে। পুলিশ বুথ মানেই তা বিজ্ঞাপন লাগানোর জায়গা। বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলিও অনেক ক্ষেত্রে পুলিশকে কাজে লাগিয়ে মোটা টাকার বিনিময়ে ওই কাজ করিয়ে নিচ্ছেন কি না তা নিয়ে তদন্তের দাবি উঠেছে পুর মহলেই। কারণ, অতীতে শিলিগুড়ির মহানন্দা সেতুর কাছে একটি জায়গায় জবরদস্তি বিজ্ঞাপনের বোর্ড তৈরির চেষ্টা হচ্ছে দেখেও পুলিশ নিষ্ক্রিয় ছিল। শেষ পর্যন্ত জনমতের চাপে ওই বোর্ড ভেঙে ফেলা হয়।

বস্তুত, পুলিশের এই ধরনের কাজের প্রবণতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, এর আগেও মহানন্দা সেতু লাগোয়া হিলকার্ট রোডের ধারে একটি মন্দিরার জায়গায় একই ভাবে পুর কর্তৃপক্ষকে কিছু না-জানিয়ে পুলিশের তরফে অফিস বানাতে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল। সে সময়ও তত্‌কালীন মেয়র গঙ্গোত্রী দত্তের হস্তক্ষেপে পুলিশ শেষ পর্যন্ত ওই কাজে রণে ভঙ্গ দেয়। একই কায়দায় পুলিশ এ বার পার্কের জায়গা দখল করতে সচেষ্ট বলে অভিযোগ।

পার্ক এলাকায় চা-খাবারের দোকান চালাতেন রতন ভদ্র। তাঁর দোকান তুলে দেওয়ার পর এখন অন্যত্র দোকান দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমাকে জবর দখল বলে তুলে দেওয়া হল। তাঁর আগে খরচ করে কাঠের দোকান বানিয়েছিলাম। পুলিশ গিয়ে ভেঙে দিল। এখন তো দেখছি পুলিশ ওই জায়গা দখল করে মাটি ফেলে ভরাট করছে।” তা ছাড়া ওই জায়গা মাটি ফেলে উঁচু করা হলে ভবিষ্যতে তা বিপজ্জনক হতে পারে বলে এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ অভিযোগ করেছেন। ভবিষ্যতে রাস্তা চওড়া করার প্রয়োজন হলে উপায় থাকবে না বলেও অনেকে দাবি করেন। সে কারণে অবিলম্বে ওই কাজ বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

park aquisition police booth debate siliguri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE