থানার অফিসারদের একাংশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ত্বের অভিযোগ তুলে জেলা পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হলেন তৃণমূল কাউন্সিলরেরা।
সোমবার বালুরঘাট পুরসভার ক্ষমতাসীন বোর্ডের অধিকাংশ কাউন্সিলার পুলিশ সুপার শিসরাম ঝাঝারিয়ার সঙ্গে দেখা করে বালুরঘাট থানার বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ত্বের নালিশ জানান। তাঁদের অভিযোগ, এক কাউন্সিলরকে হুমকি ও ছিনতাইয়ে অভিযুক্ত পুরপ্রধানের স্বামীকে পুলিশ গ্রেফতার না-করে মামলাটি আদালতে পাঠিয়েছে।
অথচ পুরপ্রধানের স্বামীর দায়ের করা পাল্টা হুমকির অভিযোগের মামলায় পুলিশ দ্রুত এক তৃণমূল কর্মীকে গ্রেফতার করে। এসপি বলেন, “আমাদের কাছে যে রকম অভিযোগ পড়েছে, তার ভিত্তিতে মামলা দায়ের করে তদন্ত চলছে।”
শহরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ব্রতময় সরকারকে হুমকি দিয়ে টাকা এবং সোনার চেন ছিঁড়ে নেওয়ার অভিযোগে পুলিশ ইতিমধ্যে পুরপ্রধান চয়নিকাদেবীর স্বামী শ্যামল লাহা এবং সংশ্লিষ্ট তৃণমূল ওয়ার্ড সভাপতি পল্লব মালাকারের বিরুদ্ধে ৫০৬ (হুমকি), ৬৬ এ (সাইবার অপরাধ) এবং ৩৭৯ (চুরি, ছিনতাই) ধারায় মামলা দায়ের করেছে। রবিবার দুপুরের পরে কেস ডায়েরি আদালতে পাঠানো হয়েছে। পুরপ্রধান ও তাঁর স্বামী শ্যামলবাবুকে ফোনে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে ধৃত এক তৃণমূল কর্মীর বিরুদ্ধে ৫০৬ এবং ৬৬এ ধারায় পুলিশ মামলা দায়ের করে আদালতে পাঠিয়েছে। গত শুক্রবার ধৃতের জামিন হয়ে যায়।
শ্যামলবাবু ও পল্লববাবুর বিরুদ্ধে করা অভিযোগ সম্পর্কে সরকারি আইনজীবী দেবাশিস মজুমদার বলেন, “৫০৬ এবং ৬৬এ ধারা দুটি জামিনযোগ্য অপরাধ। কিন্তু তার সঙ্গে ৩৭৯ ধারাটি জামিন অযোগ্য ধারা। এখন আদালতে পুজোর ছুটি চলছে। অভিযুক্ত শ্যামলবাবুরা আদালতে আগাম জামিনের আবেদন করতে পারেন। অথবা পুলিশ তাদের গ্রেফতার করতে পারে।” পুরপ্রধান যেখানকার কাউন্সিলর সেই ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল সভাপতি পল্লব মালাকার বলেন, “শঙ্করদা (পূর্তমন্ত্রী) বলেছেন চিন্তার কিছু নেই। ওই সব অভিযোগের কোনও মূল্য নেই।” পূর্তমন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তী অবশ্য এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বলেন, “আমি কোনও কথা বলব না।”
এদিন বিজেপির ডেপুটেশন নেবেন বলে সম্মত হয়েও পুরসভায় যাননি পুরপ্রধান চয়নিকাদেবী। তিনি বলেন, “মনগড়া মিথ্যা অভিযোগ করে উল্টে এখন ওঁরা পুলিশের উপর চাপ সৃষ্টি করছেন। আমার স্বামী পেশায় প্রাথমিক শিক্ষক। তিনি যে দলের কাউন্সিলরের টাকা ও সোনার চেন ছিনতাই করতে পারেন না, এটা গোটা বালুরঘাট জানে ও বোঝে।”
এদিন এসপির কাছে নালিশ জানাতে তৃণমূল কাউন্সিলদের দলে ছিলেন ব্রতময়বাবু, শঙ্কর দত্ত, পিন্টু হালদার, গোপাল নন্দী, সজয় সাহা, নীতা হাঁসদা, বর্ণিলা সরকার। এঁরা সকলেই তৃণমূলের অন্দরে এক সময় মন্ত্রী অনুগামী বলে পরিচিত ছিলেন। এখন চেয়ারপার্সনের অপসারণ চেয়েছেন যে ১৩ জন তৃণমূল কাউন্সিলর, তাঁদের মধ্যে তাঁরাও রয়েছেন।
কাউন্সিলরদের অভিযোগ, “আগামী ১৯ অক্টোবর পুরসভা ও জেলাপরিষদের যৌথ উদ্যোগে বালুরঘাটে বিজয়া সম্মিলনী উত্সব উপলক্ষে শহরের বিভিন্ন জায়গায় ওই অনুষ্ঠানের ফ্লেক্স ব্যানার লাগানো হয়। সেই ব্যানারগুলি গত ১০ অক্টোবর রাতে চেয়ারপার্সনের অনুগামী কর্মীরা ছিঁড়ে ফেলেন। পর দিন ১১ অক্টোবর ৮ জনের বিরুদ্ধে বালুরঘাট থানায় অভিযোগ দায়ের করা হলেও পুলিশ ঘটনায় নিষ্ক্রিয়।”
বিজেপি-র পক্ষ থেকে এদিন ৯ দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি পুরপ্রধানের ঘরের সামনে সেঁটে দেওয়া হয়। বিজেপি-র শহর মন্ডল সভাপতি মোহিনীমোহন দেব অভিযোগ করেন, “প্রায় এক বছর ধরে পুরপ্রধানের নেতৃত্বে চলা পুরবোর্ড বালুরঘাট শহরে সঠিক পুরপরিষেবা দিতে ব্যর্থ। তার উপরে নিজেদের মধ্যে মতবিরোধের জেরে সমস্ত উন্নয়নমূলক কাজ স্তব্ধ হয়ে পড়েছে।”
তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র বলেন, “বালুরঘাট পুরসভার নির্বাচিত সমস্ত কাউন্সিলরদের মনোনীত করছেন শঙ্করদা (পূর্তমন্ত্রী)। কী এমন হল যে, সমস্ত কাউন্সিলর তাঁর বিরুদ্ধে গিয়ে চেয়ারপার্সনের বিপক্ষে বিদ্রোহ ঘোষণা করলেন? আগামী ১৯ অক্টোবর বালুরঘাটে বিজয়া সম্মিলনীর পর বিষয়টি নিয়ে হস্তক্ষেপ হবে।” এদিন বিদ্রোহী দলের কাউন্সিলরেরা অভিযোগ করেন, মন্ত্রী চয়নিকদেবীর মাধ্যমে বকলমে পুরসভার কর্তৃত্ব কায়েমের চেষ্টা করতে গিয়ে গোষ্ঠী বিবাদ তৈরি করেছেন।
চেয়ারপার্সনকে দিয়ে একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়ে পুরসভা চালানোর চেষ্টা করেছেন। ছেলেকে পুরসভার আইনজীবী নিয়োগ করতে চেয়েছিলেন বলে অভিযোগ করে তাঁরা বলেন, “এ সব কী মন্ত্রীর স্বচ্ছ রাজনীতির নমুনা?” এই অভিযোগের প্রসঙ্গেও পূর্তমন্ত্রী শঙ্করবাবু কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy