কলেজে গোলমাল ঠেকাতে যাওয়ায় শিলিগুড়ির সহকারী পুলিশ কমিশনার (পশ্চিম) মানবেন্দ্র দাসের বিরুদ্ধে টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি থানায় অভিযোগ করায় পুলিশ মহলে ক্ষোভ দানা বাঁধছে। পুলিশের অন্দরের খবর, ওই অফিসারের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহার করা না হলে আগামী দিনে পুলিশকর্মীদের দিয়ে কী ভাবে কাজ করানো যাবে সেই প্রশ্নে উদ্বিগ্ন কর্তারা। এমনকী, মানবেন্দ্রবাবু নিজেও তাঁকে বদলি করা হবে ধরে নিয়ে প্রস্তুতি শুরু করেছেন বলে পুলিশের একটি সূত্রের খবর। তাই পুলিশের একাংশের তরফে গোটা ঘটনাটি নবান্নে জানানো হয়েছে। রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের শীর্ষ অফিসারদের কয়েকজনও ঘটনার ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়েছেন। তৃণমূলের অন্দরের খবর, নানা মহলের চাপে টিএমসিপি জেলা সভাপতি নির্ণয় রায়কে দিয়ে ওই অভিযোগ প্রত্যাহার করানোর কথাও ভাবছেন নেতাদের একাংশ। তবে থানায় অভিযোগ নথিভুক্ত হলে তা আদালতের মাধ্যমে প্রত্যাহার করাতে হয়। তাই জটিলতার নিষ্পত্তি করাতে শিলিগুড়ির পুলিশ কর্তাদের একাংশের সঙ্গে তৃণমূলের নেতাদের ঘনঘন আলোচনাও চলছে।
আজ, সোমবার উত্তরবঙ্গ পৌঁছবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথম দিন শিলিগুড়িতেই থাকবেন তিনি। এমন একটা সময়ে পুলিশের অন্দরে শাসক দলের এক নেতার অভিযোগ নিয়ে ক্ষোভ বাড়তে থাকায় উদ্বিগ্ন শাসক দলের নেতাদের অনেকেই। তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেছেন, “আমি নির্ণয়কে ডেকেছি। মুখ্যমন্ত্রীর সফর শেষ হলে বিষয়টি নিয়ে বিশদে কথা বলব।” শুক্রবার দুপুরে বাগডোগরায় বিরোধী সংগঠনের ছাত্রীদের গায়ে হাত তোলা ও মনোনয়নপত্র কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্য সমর্থকদের বিরুদ্ধে। তাতে বাধা দেওয়াতেই বিপত্তি দেখা দেয়। মনোনয়ন কাড়তে বাধা দেওয়াতে তারা পুলিশের উপরে পাল্টা আক্রমণ করে বলেও অভিযোগ ওঠে। একজন পুলিশ অফিসারকে ঘুষিও মারা হয় বলে অভিযোগ। অভিযোগ, কয়েকজন অফিসার ও কর্মীকে টিএমসিপি-র নেতাদের কয়েকজন ‘দেখে নেওয়া’র হুমকি দেন। নির্ণয়বাবুকেও পুলিশকে হুমকি দিতে দেখা যায় বলে অভিযোগ। সেই সময় অভিযুক্ত এসিপি মানবেন্দ্রবাবু, ডিসি (ট্রাফিক) শ্যাম সিংহ ঘটনাস্থলে ছিলেন। তাঁদের উদ্যোগেই পরিস্থিতি আয়ত্তে আসে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠি চালাতে হয়। পুলিশের লাঠিতে বেশ কয়েকজন টিএমসিপি নেতা-কর্মী জখম হন বলে অভিযোগ।
এর পরেই বাগডোগরা থানায় গিয়ে অভিযোগ করেন নির্ণয়বাবু। এসিপি সহ আরও ২৮ জনের নামে তাঁকে মারধর ও তাঁর গলার হার ও হাত ঘড়ি ছিনতাই করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। মারধরের সময়ে এসিপি মানবেন্দ্রবাবু মদত দেন বলেও অভিযোগে লেখা হয়। তবে এ দিন নির্ণয়বাবু বলেন, “এফআইআর করেছি। কিন্তু যা বলার দলের নেতৃত্ব বলবেন।” শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার জগমোহন এদিনও ফোন ধরেননি। সারা দিন তাঁর ফোন বেজে গিয়েছে। মানবেন্দ্রবাবুর ফোনও দিনভর বন্ধ ছিল।
পুলিশের ভূমিকায় গলদ দেখছেন না দার্জিলিংয়ের সাংসদ বিজেপির সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া। তাঁর অভিযোগ, “পুুলিশকে সঙ্গী করে জোর করে মনোনয়ন তুলতে বাধা দিচ্ছে টিএমসিপি। এই ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম হওয়ায় তাঁদের স্বার্থে ঘা লেগেছে।” সিপিএমের দার্জিলিং জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকার বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীই তো পুলিশমন্ত্রী। তাঁর দলের লোক পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে। দল ও প্রশাসনের হাল কী বোঝা যাচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy