চোরের উপদ্রবে নাজেহাল শিলিগুড়ির মানুষ।
ঘরের জানালা খোলা থাকলেই সরু লাঠির ডগায় হুক বেঁধে ঘর থেকে জামাকাপড়, টেবিলে থাকা মানিব্যাগ তুলে নেওয়ার ঘটনা ঘটছে। শপিং মল বা অফিসের সামনে রাখা বাইক চুরির ঘটনাও কমবেশি ঘটছে প্রায় প্রতিদিনই। আবার রাতের অন্ধকারে কখনও তালা ভেঙে সোনা-টাকা থেকে শুরু করে রান্নাঘরের গ্যাস সিলিণ্ডার পর্যন্ত হাপিস হয়ে যাচ্ছে। প্রায় দু’ মাস ধরে এমনই চোরের দৌরাত্ম্য চলছে শিলিগুড়ি শহরে। শহরবাসীদের অনেকেরই অভিযোগ, পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার জন্যই দুষ্কৃতীদের সাহস বেড়েছে।
পুলিশ সূত্রেই জানা গিয়েছে, গত এক মাসে অন্তত একশোটি চুরির ঘটনা ঘটেছে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেট এলাকায়। এর মধ্যে অন্তত ৬০ টি ক্ষেত্রে অভিযোগ জমা পড়েছে থানায়। অনেক ক্ষেত্রে আবার ছোট চুরির ঘটনায় বাসিন্দারা থানায় অভিযোগ করেননি। বাসিন্দাদের অভিযোগ, দুষ্কৃতীদের বেশ কয়েকটি দল সক্রিয় রয়েছে শিলিগুড়িতে। পুলিশ তাদের গ্রেফতার করতে পারছে না। শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তা অবশ্য দাবি করেছেন, ইতিমধ্যেই একটি দুষ্কৃতী দলের কয়েকজন কে গ্রেফতার করেছেন তাঁরা। তাতে কেপমারির ঘটনা অনেকটাই কমেছে। চুরির ঘটনার সঙ্গে যেসব দুষ্কৃতীরা জড়িত, তাদের খোঁজে পুলিশ নজরদারি করছে। শিলিগুড়ির ডেপুটি পুলিশ কমিশনার অংমু গ্যামসো পাল বলেন, “যেসব অভিযোগ আমরা পেয়েছি, তার তদন্ত চলছে। দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করা হবে।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কলেজপাড়া এলাকার একটি বাড়িতে সোমবার ভোরে চুরির ঘটনা ঘটে। গৃহকর্তা সত্যেন পাল জানান, রাতে ঘরের একটি জানালা খোলা ছিল। সেই সুযোগ নিয়ে জানালা দিয়ে লাঠি ঢুকিয়ে মানিব্যাগ, ইয়ারফোন নিয়ে পালায় দুষ্কৃতীরা। ওই এলাকাতেই মাসখানেক আগে একটি অফিসের সামনে থেকে দুটি বাইক চুরির ঘটনা ঘটে। দু’সপ্তাহ আগে সেবক রোডের একটি শপিং মলের সামনে থেকে একটি বাইক চুরির ঘটনা ঘটে।
অভিযোগ, হানা দেওয়ার আগে দুষ্কৃতীরা বেশ কিছুদিন ধরে শপিং মল বা কোনও অফিসের সামনে নজরদারি করে। সুযোগ বুঝে নকল চাবি ব্যবহার করে বাইক নিয়ে পালিয়ে যায় তারা। হিলকার্ট রোড এলাকায় দু’ সপ্তাহ আগে একটি গয়নার দোকান থেকে প্রায় এক কোটি টাকা দামের সোনার গয়না নিয়ে উধাও হয়ে যায় দুষ্কৃতীরা।
ব্যবসায়ীরা জানান, দেওয়ালের একটি অংশ ভেঙে দোকানের ভিতরে ঢোকে দুষ্কৃতীরা। সিন্দুক কেটে প্রায় দেড় কেজি সোনা নিয়ে পালায় তারা। এই ঘটনার কোনও কিনারা এখনও পর্যন্ত করতে পারেনি পুলিশ। পুজোর আগে মহাকালপল্লিতে এক যুব তৃণমূল নেতা মনোজ বর্মার বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটে। মনোজবাবু জানান, “বাড়িতে কেউ ছিলেন না। সেই সুযোগে বারান্দার তালা ভেঙে ঢোকে চোরেরা। সাইকেল ও বাসনপত্র নিয়ে পালিয়ে যায় তাঁরা।”
মাস দেড়েক আগে শিলিগুড়ি থানার খালপাড়ায় পরপর দুদিন দুটি বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটে। প্রথম ঘটনায় বাড়ি ফাঁকা পেয়ে রাতের অন্ধকারে গ্রিল ভেঙে ভিতরে ঢোকে দুষ্কৃতীরা। আলমারির তালা ভেঙে কয়েক লক্ষ টাকা নিয়ে পালায় তারা। দ্বিতীয় ঘটনায় ওই এলাকাতেই এক দোকান মালিকের অসতর্কতার সুযোগে তাঁর বাড়ি থেকে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালায় দুষ্কৃতীরা। শিলিগুড়ি পুরসভার প্রাক্তন সিপিএম কাউন্সিলর তথা আইনজীবী কমল অগ্রবাল বলেন, পুলিশি তত্পর না হলে শহরে চুরির উপদ্রব কমবে না। ব্যবসায়ীদের সংগঠন ফোসিনের সম্পাদক বিশ্বজিত্ দাস বলেন, “পুলিশের টহলদারি আরও বাড়ানো দরকার। এই ব্যাপারে পুলিশের সঙ্গে কথাও হয়েছে। তাঁরা আশ্বাস দিয়েছেন। তাতে সমস্যা অনেকটাই মিটবে বলে আশা করছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy