Advertisement
১০ মে ২০২৪
তল্লাশি পুলিশের

ফের সক্রিয় লটারির জাল টিকিট চক্র

লটারির জাল টিকিট বিক্রি করে প্রতারণার চক্র আবার সক্রিয় হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শিলিগুড়ি-সহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় এই চক্রের পাল্লায় পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। কিন্তু কারও পুরস্কার জুটছে না বলেও অভিযোগ।

সংগ্রাম সিংহ রায়
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৩৯
Share: Save:

লটারির জাল টিকিট বিক্রি করে প্রতারণার চক্র আবার সক্রিয় হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শিলিগুড়ি-সহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় এই চক্রের পাল্লায় পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। কিন্তু কারও পুরস্কার জুটছে না বলেও অভিযোগ।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, যে সব লটারি বিক্রি হচ্ছে বাজারে, তার একটা বড় অংশের টিকিটে খেলাই হচ্ছে না। ফলে টিকিট কিনলেও পুরস্কার জুটছে না। অথচ ভাগ্যের দোহাই দিয়ে আবার টিকিট কিনছেন ওই ক্রেতারা। ফের নিঃস্ব হচ্ছেন। পুলিশের সন্দেহ, কয়েক জন বড় মাপের লটারি টিকিট বিক্রেতা ভুয়ো টিকিট ছেপে বহু টাকা বাজার থেকে তুলে নিচ্ছেন। কয়েক মাস আগে জাল লটারি চক্রের পাণ্ডা সন্দেহে ৫ জনকে গ্রেফতারও করে শিলিগুড়ি থানার পুলিশ। শিলিগুড়ির দেশবন্ধুপাড়া থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরে অজ্ঞাত কারণে এ বিষয়ে পুলিশের তদন্ত আর এগোয়নি। এরা সকলে শিলিগুড়ি ও বিহারের বাসিন্দা। শিলিগুড়ি পুলিশের এডিসি ভোলানাথ পাণ্ডে বলেন, “আমাদের কাছে জাল লটারি নিয়ে প্রচুর অভিযোগ পাচ্ছি। কোন চক্র শিলিগুড়িতে এই লটারি আমদানি করছে তা খোঁজ করা হচ্ছে।”

নিয়মিত লটারি কেনেন এমন লোকজনই এখন সন্দেহ করেছেন। যেমন, লটারি টিকিট কেনাটাই নেশা দেশবন্ধুপাড়ার সুব্রত সরকারের। গত ৫ বছরে প্রতি সপ্তাহে নিয়ম করে বিভিন্ন রাজ্যের লটারি কেনেন। কিন্তু এখনও ভাগ্যে শিকে ছেঁড়েনি কোনও দিন। গঙ্গানগরের গোবিন্দ মৃধা প্রতিদিন রাতে কাজ ফেরত একাধিক টিকিট কেনেন ভাগ্য পরিবর্তনের নেশায়। আজ পর্যন্ত তিনিও কুড়ি টাকার বেশি কখনও পুরস্কার জেতেননি বলে জানিয়েছেন। এ রকম বহু লোকের অভিজ্ঞতার কাহিনী একই। দিনের পর দিন টিকিট কিনেও পুরস্কারের ভাগ্য এখনও হয়নি। আবার এঁরাই তাকিয়ে দেখেন, পাশের বাড়ির গণেশ বা সুমন্ত প্রায় সপ্তাহ বা মাসেই কখনও দশ হাজার, কখনও পঁচিশ বা কখনও এক লক্ষ টাকা জিতে নিচ্ছেন। সাদা চোখে দেখলে ভাগ্যের দোহাই দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। এঁদের সকলেরই দাবি, নিরপেক্ষ তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। লটারি বিক্রেতাদের একাংশ বিষয়টি স্বীকারও করেছেন। যদিও লটারি বিক্রেতা সংগঠনের পক্ষ থেকে অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, সারা দেশ জুড়ে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি বিভিন্ন নামী লটারি জাল করে ছাপিয়ে কম দামে বাজারে বিক্রির একটা চক্র সক্রিয়। ফলে এই সব লটারি যাঁরা কেনেন, কোনওদিনই পুরস্কার পান না। কারণ এগুলির নথিভুক্তকরণ না থাকায় এগুলিতে খেলাই হয় না। লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রতারিত হচ্ছেন। এই টিকিটগুলির বেশিরভাগ সিকিম ও ভুটানের বিভিন্ন চলতি ব্র্যান্ডের নকল ছিল বলে জানা গিয়েছে। মূলত দিল্লি থেকে এই টিকিটগুলি ছাপিয়ে শিলিগুড়িতে নিয়ে আসা হয়। বিভিন্ন জায়গায় মজুত করা হয়। এখান থেকে সমগ্র উত্তরবঙ্গে তা ছড়িয়ে যেত। কোথায় কোথায় টিকিট ছড়িয়েছে তা তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।

শিলিগুড়ির এক নামী লটারি বিক্রেতা সংস্থার কর্ণধার উত্তম সাহা অবশ্য জাল লটারির টিকিট এখন বাজারে আসে না বলে দাবি করেন। তিনি দাবি করেন, “এমন হওয়ার কথা নয়। সরকারি সিলমোহর ছাড়া লটারি বাজারে আসে না।” আগে জাল হতো বলে স্বীকার করেও তাঁর দাবি, “এখন জাল করা সম্ভব নয়।” কেন সম্ভব নয়, সে ব্যাখা অবশ্য দেননি।

উত্তরবঙ্গ খুচরো ও পাইকারি লটারি বিক্রেতা অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক দেবু পাল জানান, জাল লটারির টিকিট বিক্রি হচ্ছে বলে তাঁর কাছে কোনও খবর নেই। তিনি বলেন, “এখন পুলিশ নজরদারি রয়েছে। তাই এ সব ভুয়ো বা জাল লটারি বিক্রি হয় না।” অথচ পুলিশই তল্লাশি চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে। লটারির নিয়ন্ত্রণের জন্য স্থানীয় ভাবে ক্ষমতা অর্পিত রয়েছে জেলা ও মহকুমা প্রশাসনের উপরে। শিলিগুড়ির মহকুমাশাসক দীপাপপ্রিয়া অবশ্য এলাকায় লটারি নিয়ন্ত্রণের ব্যপারে কোনও ধারণা নেই বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “এ ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই। লটারি নিয়ে কোনও অভিযোগ আসেনি।” তবে অভিযোগ যখন উঠছে তা খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sangram sinha roy siliguri fake lottery
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE