বিক্ষোভের আগুন বাসে। বৃহস্পতিবারের নিজস্ব চিত্র।
বাগডোগরার যুবক মনোজ ওরফে গণেশ চৌধুরীকে তরুণী অপহরণের মামলায় গ্রেফতারের পরে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ খুন করে দেহ পাঠিয়ে দিয়েছে, এই অভিযোগে বিক্ষোভ চলছেই। বুধবার রাত ২ টো পর্যন্ত বাগডোগরা বিহার মোড়ে রাস্তা অবরোধ করে জনতা। উত্তরপ্রদেশের পুলিশের হাতে ধৃত গণেশের বাবা ও ভাই পিঙ্কুকে মুক্তির দাবি তোলে জনতা। অবরোধ তুলতে গেলে জনতা-পুলিশ সংঘর্ষ বাঁধে। পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর হয়। দুটি বেসরকারি বাসে আগুন ধরানো হয়। ঢিলের আঘাতে জখম হন বেশ কিছু পুলিশ কর্মী। পুলিশ লাঠি চালায়। ছোঁড়া হয় রবার বুলেটও। বাসে আগুন ও পুলিশকে ঢিল ছুঁড়ে জখম করার অভিযোগে ৫ জনকে ধরেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবারও এলাকার পরিস্থিতি ছিল থমথমে। ওই এলাকায় সাপ্তাহিক বসেনি। এলাকায় বায়ুসেনার ছাউনি রয়েছে। বায়ুসেনার তরফেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ছাউনির বাইরে যাতায়াতে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার জগমোহন বলেন, “অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে কড়া হতে হয়েছে। কয়েকজনকে ধরা হয়েছে। ২৩ জন পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন। পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আজমগঢ়ের পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা হয়েছে।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার সন্ধ্যা থেকে দফায় দফায় অবরোধ ও বিক্ষোভ চলে। মাঝে একবার পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লাঠিচার্জ করে হঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও ফের অবরোধ শুরু হয়। বাগডোগরার বিহার মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভকারীরা। রাত সাড়ে ১০ টা নাগাদ পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে জনতা। এলাকায় নামানো হয় র্যাফ। রাত দেড়টা নাগাদ এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা দুটি বাসে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। পরে ফের লাঠিচার্জের নির্দেশ দেওয়া হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে জনতা পুলিশকে লক্ষ করে ঢিল ছুড়তে থাকে অবরোধকারীরা। শিলিগুড়ি পুলিশের এডিসি ভোলানাথ পাণ্ডের নেতৃত্বে ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এডিসি বলেন, “আমরা মৃতের পরিবারকে আইনি পথে লড়ার পরমার্শ দিয়েছি। ওঁরা কেউই আমাদের সঙ্গে এসে কথা বলেনি।” মনোজের বাবা ও ভাইকে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ছাড়িয়ে আনার জন্য তাঁরা আইনজীবীর মাধ্যমে এগোনোর জন্য কোনও পদক্ষেপ করছেন না বলেও আক্ষেপ করেন তিনি। এদিন দার্জিলিং জেলা আইনি পরিষেবা সমিতির পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় আইনি পরিষেবা সমিতির কাছে আবেদন জানানো হয়।
উত্তরপ্রদেশের আজমগড়ে একটি বেসরকারি স্কুলে গত তিন বছর ধরে চাকরি করতেন শিলিগুড়ির বাগডোগরার বাসিন্দা মনোজ। তাঁর বিরুদ্ধে ওই স্কুলের মালিকের মেয়েকে অপহরণ করার অভিযোগ ওঠে। তাঁদের খোঁজ না পেয়ে বাগডোগরা থেকে তাঁর বাবা ও ভাইকে গ্রেফতার করে আজমগড়ের সিধারি থানার পুলিশ। ২ জুলাই গ্রেফতারের পর থেকে শিলিগুড়ি সংশোধনাগারেই জেল হেফাজতে ছিলেন তাঁরা। এর পরে ১৮ জুলাই তাঁদের আজমগঢ়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৯ ২০ জুলাই বাগডোগরা থানায় একটি ফ্যাক্স আসে, মনোজ অসুস্থ। পর দিন ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা মনোজের দাদু কামেশ্বর প্রসাদ আজমগড়ের উদ্দেশ্যে রওনা হন। ২১ জুলাই তিনি সেখানে হাসপাতালে পৌঁছে দেখেন, মনোজ মারা গিয়েছে। তিনিই বাগডোগরায় নিয়ে আসেন দেহ। মৃতের দিদি আশা চৌধুরী বলেন, “আমাদের বারবার হুমকি দেওয়া হয়েছে, বাবা ও ভাইকেও মেরে ফেলা হবে বলে।”
কিন্তু কেন এই হুমকি তা জানেন না তাঁরা। তাঁদের এখন একটাই দাবি, সুস্থ অবস্থায় জীবিতদের ফিরিয়ে আনুক পুলিশ। তবে তার জন্য তাঁরা কোনও রকম হিংসার রাস্তায় যাচ্ছেন না বলেও জানান তাঁরা। মৃতের কাকা দিলীপবাবু বলেন, “আমরা বাড়িতেই ছিলাম। বুধবার কিছু বাইরের লোক ঢুকে পড়ে গণ্ডগোল করেছে।” তাঁদের দাবি পুলিশই বরং তাঁদের হুমকি প্রায় জোর করে ভোর তিনটায় মৃতদেহ সৎকার করাতে ঠাকুমা মুকেশ্বরী দেবীকে নিয়ে যায়। যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। এডিসি বলেন, “ওঁরা নিজেরা শেষকৃত্য করেছেন বলে জানি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy