শিলিগুড়ির রামঘাটের সামনে মহিলাদের বিক্ষোভ। বৃহস্পতিবার বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।
‘বিতর্কিত’ বৈদ্যুতিন চুল্লির কাজ শুরু করতে গিয়ে ফের বিক্ষোভের মুখে পড়ল উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর।
বৃহস্পতিবার সকালে শিলিগুড়ির রামঘাটে ওই প্রকল্পের জমি জরিপ করতে যান অফিসার-কর্মীরা। গোলমালের আশঙ্কায় বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়। কিন্তু, পুলিশের সামনেই রামঘাটের গেটের মুখে জড়ো হন বহু প্রতিবাদকারী। এলাকারপ বাসিন্দাদের অনেকে ‘নাগরিক মঞ্চ’ গড়ে ওই প্রতিবাদে সামিল হন। পুরুষ-মহিলারা মুখে কালো কাপড় বেঁধেছিলেন অনেকে। কেউ স্লোগান দিচ্ছিলেন। সকলেরই অভিযোগ, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের বিরুদ্ধে। তাঁর অভিযোগ, মন্ত্রী মর্জিমাফিক কাজ করছেন। তা নিয়ে প্রতিবাদ করায় মন্ত্রী এলাকার বাসিন্দা তথা মহানন্দ মণ্ডলকে চড় মেরেছেন বলেও ফের অভিযোগ তোলেন তাঁরা।
ওই ঘটনার পরে অবশ্য উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের অভিযোগের ভিত্তিতে মন্ত্রীকে হেনস্থার মামলা মহানন্দবাবুই গ্রেফতার হন। এ দিন প্রতিবাদে নেতৃত্ব দেন মহানন্দবাবু। তিনি বলেন, “প্রতিবাদের অধিকার সকলের আছে। পুলিশ দিয়ে তা দমানো যাবে না। আমরা অনশন করব। প্রয়োজনে হাইকোর্টে যাব।” নাগরিক মঞ্চের অন্যতম নেতা তথা এলাকার প্রাক্তন ফরওয়ার্ড ব্লক কাউন্সিলর অমরনাথ সিংহ অভিযোগ করেন, মন্ত্রী পুলিশ দিয়ে সাধারণ মানুষের প্রতিবাদের অধিকার কেড়ে নিতে চাইছেন।
তবে মন্ত্রী অভিযোগ করেছেন, শহরের উন্নয়ন রুখতে চক্রান্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, “কাজের বিষয়টি আধিকারিকেরা দেখছেন। দূষণমুক্ত পরিবেশের জন্য বৈদ্যুতিক চুল্লি বসানো হচ্ছে। কিছু মানুষকে ভুল বুঝিয়ে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। যাঁরা বাধা দিচ্ছেন তাঁদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক। আমরা এলাকার বিনীতভাবে বলব, কাজ করতে দিতে।” মঞ্চের আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আদালতে যাওয়ার অধিকার সবার রয়েছে। আদালতের বক্তব্য সকলকেই মান্যতা দিতে হবে। আর কেউ শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান, আন্দোলন করতেই পারেন।”
মন্ত্রী জানান, ১৯৬৫ সাল থেকে রামঘাটে কাঠের চুল্লি ব্যবহার হচ্ছে। শহরে বর্তমানে একটি বৈদ্যুতিন চুল্লি রয়েছে। ১০ লক্ষ মানুষের শহরে তা পর্যাপ্ত নয়। তাই নতুন ব্যবস্থা করতেই হবে। তাঁর দাবি, “আগেও রেলের রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের অফিস তৈরির সময় এমনটা করা হয়েছে। পরে সকলে বুঝেছেন।”
গত ২৮ সেপ্টেম্বর রামঘাটে চুল্লির শিলান্যাস অনুষ্ঠানে গোলমাল হয়। বাসিন্দারা প্রকল্পের বিরোধিতা করে সরব হন। আলোচনার জন্য ডেকে মন্ত্রী মহানন্দবাবুকে চড়, লাথি মারেন বলে অভিযোগ ওঠে। গৌরী মিত্র বলে আরেক মহিলাকেও মারধর করা হয়। উল্টোদিকে, মন্ত্রীকে হেনস্থা এবং সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে মহানন্দবাবু, কংগ্রেস নেতা রাজেশ যাদব-সহ তিনজনের নামে মামলাও হয়। দু’জনকে গ্রেফতারও করা হয়। কংগ্রেস ও বামফ্রন্টের তরফে থানা ঘেরাও, বিক্ষোভ সমাবেশও করা হয়। পাল্টা এলাকার রাস্তায় নেমে মন্ত্রীর নেতৃত্বে মিছিল করে তৃণমূল।
প্রায় দেড় মাস এই অবস্থা চলার পর গতকালই রামঘাটে কাজ শুরু হবে বলে ঘোষণা করা হয়। সেই মত শিলিগুড়ি থানার আইসি’র নেতৃত্বে বিরাট পুলিশ বাহিনী এলাকায় পৌঁছায়। কমবাট ও র্যাফের জওয়ানদের মোতায়েন করা হয়। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের বাস্তুকারেরা একটি গাড়ি করে এলাকাতেই পৌঁছতেই বিক্ষোভ শুরু হয় যায়। শেষ বাস্তুকারদের রামঘাটের ভিতরের এলাকায় ঢুকিয়ে মূল গেট বন্ধ করে দেয় পুলিশ। এতেই রাস্তায় বসে শতাধিক বাসিন্দা বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। আইসি কয়েকবার তাঁদের সরে যেতে বললেও তাঁরা রাজি না হয়ে ‘চুল্লি চাই না’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy