বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা আধুনিকীকরণের প্রকল্পে দেশে প্রথম সারির শহরে স্থান পেয়েছে শিলিগুড়িও। গুজরাতের অহমেদাবাদের সঙ্গে শিলিগুড়িতেও রূপায়িত হবে ‘স্মার্ট পাওয়ার গ্রিড প্রজেক্ট’। আর তার হাত ধরেই আগামী এক বছরের মধ্যেই শিলিগুড়ির বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার খোলনলচে বদলাতে চলেছে। বুধবার শিলিগুড়িতে এসে ‘স্মার্ট গ্রিড’ প্রকল্পের কথা জানিয়েছেন রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্ত। রাজ্যের মধ্যে একমাত্র শিলিগুড়িই এই কেন্দ্রীয় প্রকল্পে স্থান পেয়েছে। প্রায় ৭ কোটি টাকা ব্যয় করে শহরের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাকে আধুনিক মানের তৈরি করা হবে। শহর এলাকায় নতুন ৪টি সাব স্টেশনও তৈরি হবে। বিদ্যুৎ মন্ত্রী বলেন, “বাড়ির সংযোগ অথবা বাণিজ্যিক ক্ষেত্র, দুটি ব্যাপারেই ‘স্মার্ট গ্রিড’ প্রকল্পের সুফল মিলবে। এই প্রকল্প চালু হয়ে গেলে লোডশেডিং হওয়ার যেমন আশঙ্কা নেই, তেমনিই বিল জমা দেওয়া, মিটার রিডিং সব পদ্ধতি বদলে যাবে। পরিষেবার মান কয়েক গুণ বেড়ে যাবে।”
কী রয়েছে স্মার্ট গ্রিড প্রকল্পে?
আমেরিকাতে সদ্য চালু হওয়া এই প্রকল্পের অনেকটাই এ দেশের নানা শহরে রূপায়িত হবে। প্রকল্পে গ্রাহকরা মোবাইলের ‘প্ল্যানের’ মতোই নিজের বিদ্যুৎ ‘প্ল্যান’ বেছে নিতে পারবেন। তৈরি হবে একটি আধুনিক কন্ট্রোল রুম। বাড়ি বা বাণিজ্যিক ক্ষেত্রের মিটার বক্সে ‘সিম কার্ডের’ মতো কার্ড থাকবে। যে কার্ডের মারফৎ ১৫ মিনিট অন্তর কী পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ হয়েছে তার তথ্য কন্ট্রোল রুমে পৌঁছে যাবে। কিছুক্ষণ ধরে বিদ্যুতের চাহিদা কমে গিয়েছে, তবে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ন্ত্রিত করা হবে। আবার ক্রমাগত চাহিদা বেড়ে যেতে থাকলে, অন্য ‘সেক্টর’ থেকে উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ এনে সেই পয়েন্টে সরবরাহ করা হবে। এই পদ্ধতি শিল্প ক্ষেত্রে অত্যন্ত সহায়ক বলে বিদ্যুৎমন্ত্রী এই দিন দাবি করেছেন।
স্মার্ট গ্রিড প্রকল্প রূপায়িত হয়ে গেলে মিটার রিডিং নেওয়ার জন্য কর্মীকে সংযোগস্থলে পাঠানোর দরকার নেই, মিটার বক্সে বসানো কার্ড মারফৎই বিদ্যুৎ ব্যবহারের পরিমাণ কন্ট্রোল রুমে নথিভুক্ত হয়ে যাবে। এই প্রকল্পে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ও হবে। যে সময় শিলিগুড়িতে বিদ্যুৎ চাহিদা কম থাকবে, সে সময় অন্যত্র বিদ্যুৎ পাঠিয়ে দেওা যাবে আবার ‘পিক’ সময়ে যখন চাহিদা তুঙ্গে থাকবে তখন বিদ্যুতের বাড়তি জোগান মিলবে। বিদ্যুতের মাসুলেও বেশ কিছু পরিবর্তন আসবে। পিক সময়ে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারে দাম বেশি দিতে হবে আবার ‘নন-পিক’ অর্থাৎ যখন বিদ্যুতের চাহিদা সর্বনিম্ন, সে সময় মাসুল হার কম থাকবে।
কোথাও যান্ত্রিক ক্রটি ঘটলে নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় ভাবে ঠিক কোথাও ত্রুটি হয়েছে তাও চিহ্নিত করতে পারবে নতুন ব্যবস্থা। পরীক্ষামুলক ভাবে প্রথমে শিলিগুড়ির বাণিজ্যিক এবং অ-বাণিজ্যিক সাড়ে চার হাজার গ্রাহককে এই ব্যবস্থায় অর্ন্তভুক্ত করা হবে। পরে পুরো শহরে পরিষেবা মিলবে। রাজ্যের মধ্যে শুধু শিলিগুড়িকে কেন বেছে নেওয়া হয় এ দিন তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিদ্যুৎমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, এই রাজ্যের মধ্যে শিলিগুড়িতেই বিদ্যুতের অপব্যবহার কম। পুরনো তার, ওভারলোড, হুকিং নানা কারণে বিদ্যুতের ক্ষতি হয়। শিলিগুড়িতে এই ক্ষতির পরিমাণ কম অর্থাৎ বিদ্যুৎ চুরির প্রবণতাও কম বলে দফতর জানিয়েছে। তাই শিলিগুড়িকে বেছে নেওয়া হয় বলে মন্ত্রী জানান।
এ দিন শিলিগুড়ির জোনাল বিদ্যুৎ অফিসে আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করেছেন বিদ্যুৎমন্ত্রী। গ্রামীণ এলাকার বিদ্যুৎ সরবারহ নিয়ে জেলার বিধায়ক এবং প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন মণীশবাবু। দার্জিলিং জেলায় গ্রামীণ বিদ্যুৎ সংযোদের কাজের প্রশংসা করে মন্ত্রী জানিয়েছেন জেলায় গ্রামীণ বিদ্যুতের মাত্র ১৫ শতাংশ কাজ বাকি রয়েছে।